Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
১৯৮৩-র বিশ্বকাপের ময়দান থেকে ২০২১-এর ফিল্মি জগৎ নিয়ে আলাপচারিতায় কপিল দেব ও কবীর খান
Kapil Dev

Kapil Dev-Kabir Khan: ‘কলকাতার চেহারা পাল্টালেও খেলার প্রতি প্যাশন বদলায়নি বাঙালিদের’

চার বছর আগে ‘এইটিথ্রি’র কাজ শুরু করি। এটা তো ঠিক বায়োপিক নয়। এটা ১৯৮৩-র ২৫ জুন, একটা দিনের গল্প।

কপিল দেব

কপিল দেব ছবি: দেবর্ষি সরকার

নবনীতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৫৪
Share: Save:

প্র: ছবিটা নিয়ে পরিকল্পনা কী ভাবে শুরু হল?

কবীর: চার বছর আগে ‘এইটিথ্রি’র কাজ শুরু করি। এটা তো ঠিক বায়োপিক নয়। এটা ১৯৮৩-র ২৫ জুন, একটা দিনের গল্প। কপিল দেব সে সময়ে পুরো টিমের সামনে থেকে পরিচালনা করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু পুরো টিমের সম্মতি দরকার ছিল।

কপিল: অনেক দিন ধরে আলোচনা চলেছে টিম মেম্বারদের সঙ্গে। তবে আমি প্রথম থেকেই ভীত। আমার শুধু মনে হচ্ছিল যে, ‘ইটস টু আর্লি’। চল্লিশ বছর আগের ঘটনা... কিন্তু যখন টিমের সকলেই রাজি হয়ে গেল তখন আর পিছিয়ে যাইনি।

প্র: রিসার্চ ওয়ার্ক কী ভাবে করলেন? ম্যাচের রেকর্ডিং বা ফুটেজ পেয়েছিলেন?

কবীর: কিছু ম্যাচের ফুটেজ পেয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো যথেষ্ট ছিল না। দু’বছর রিসার্চ করেছি। সে সময়ে সকলের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তথ্যচিত্র তৈরির দিনগুলো ফিরে এসেছিল। তবে প্রথম থেকেই ঠিক করেছিলাম যে, এটা যেন লুক অ্যালাইক কনটেস্ট না হয়ে যায়। রণবীরকেও (সিংহ) সেটা বলেছিলাম। ও খুব সুন্দর কপিল স্যরকে ফুটিয়ে তুলেছে। শুধু লুকের জন্য নয়, ও যে ভাবে সংলাপ বলছে, ওর চাহনি, বাক্যগঠন... সবটা মিলেই ও কপিল দেব হয়ে উঠেছে।

প্র: ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিপক্ষে ১৯৮৩-র সেই ম্যাচে কতটা চাপ অনুভব করেছিলেন?

কপিল: নিজের দেশকে বহির্জগতে রিপ্রেজ়েন্ট করার সেই মুহূর্ত ছিল গর্বের। ফাইনাল খেলছি তখন। আর ফাইনালে খেলে জেতার চান্স দুই পক্ষেরই থাকে। প্রথম দিকে আমাদের জয়লাভের সুযোগ হয়তো ২৫-৩০ শতাংশ ছিল। কিন্তু খেলা এগোনোর সঙ্গে-সঙ্গেই সেটা বাড়তে লাগল।

প্র: বিশ্বকাপ জয়ের পরে পরিস্থিতি পাল্টেছিল? দেশে যখন ফিরলেন, অভ্যর্থনা কেমন ছিল?

কপিল: কোনও দিন প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রণ করছেন, কোনও দিন রাষ্ট্রপতি নিমন্ত্রণ করছেন নৈশভোজে। পরিচিত মহলে এমন কোনও মানুষ ছিলেন না, যাঁরা শুভেচ্ছা জানাননি। পরিবার, বন্ধুবান্ধবের বাইরেও সব দেশবাসীর কাছেই সেটা ছিল আনন্দের মুহূর্ত। আর নিজের দেশের কাছে স্বীকৃতি পাওয়ার চেয়ে বেশি আনন্দ অন্য কিছুতে নেই।

প্র: এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আপনার চরিত্রে কেউ অভিনয় করুক, চান না...এখন কী বলবেন?

কপিল: এখন তো আর যুবক নেই। তিরিশ বছর আগে হলে না হয় আমি করতাম। এখন আমার জায়গায় অন্য কাউকে নিতে হবে।

প্র: ৮৩-র ম্যাচ দেখেছিলেন?

কবীর: তখন বয়স কম ছিল। স্কুলের ছুটিতে দেশের বাড়ি হায়দরাবাদে গিয়েছিলাম। ম্যাচ নিয়ে তেমন কিছু মনে নেই। কিন্তু জয়লাভের পরের মুহূর্ত স্পষ্ট মনে আছে। বয়স্ক মানুষরা কাঁদছিলেন, অনেকে রাস্তায় নাচছিলেন, আতশবাজি পোড়ানো হচ্ছিল। ম্যাচের দিনটা পুনর্নির্মাণ করার সময়ে সেই মুহূর্তগুলো বারেবারে মনে পড়েছে।

প্র: রণবীর সিংহের বিপরীতে দীপিকা পাড়ুকোনকে কাস্ট করা কি সচেতন সিদ্ধান্ত?

কবীর: দীপিকা টপ স্টার। অনেক সময়ে, ওভার-কাস্ট করা হয়ে যায়। কিন্তু রোমিজির (দেব) অরা ফুটিয়ে তোলা দীপিকার পক্ষেই সম্ভব ছিল। আমি দীপিকাকেও বলেছিলাম, চরিত্রটা স্বল্প সময়ের। কিন্তু খুব প্রাণবন্ত। দীপিকাও রাজি হয়ে যায়।

প্র: রণবীরের পারফরম্যান্সে কতটা সন্তুষ্ট?

কপিল: যেমন এনার্জি, তেমন কমিটমেন্ট। কেউ ক্যাচ ড্রপ করছে কিনা, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কেউ ক্যাচটা নেওয়ার চেষ্টা করছে কিনা। রণবীর চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত ছিল। ১০-১২ দিন আমার সঙ্গে ছিল। একটা গোটা জীবনও কারও সঙ্গে থেকে তাকে বোঝা যায় না। ও তো দশ-বারো দিন সময় পেয়েছিল। কিন্তু ওর শেখার আগ্রহ ছিল।

কবীর: টানা ৫-৬ মাস দিনে ৪-৫ ঘণ্টা ধরে প্র্যাকটিস করেছে রণবীর।

প্র: ১৯৮৩-র কপিল ও আজকের কপিলের মধ্যে তো অনেক পার্থক্য। কথা বলার ধরন বদলে গিয়েছে। তা হলে রণবীরকে ‘এইটিথ্রি’-র কপিল হয়ে উঠতে সাহায্য করলেন কী ভাবে?

কপিল: কারও বাচনভঙ্গীই এক থাকে না। হিন্দি, উর্দু, পঞ্জাবি ... সব ভাষার বুলিই পাল্টে যায়। আমিও বদলেছি। চল্লিশ বছর আগের আমি আর এখন তো এক নেই। কিন্তু ও তার থেকেই শিখেছে।

কবীর: কপিল দেবকে নিয়ে যত ভিডিয়ো, ইন্টারভিউ হয়েছে, সব দেখেছে রণবীর।

প্র: এখন ক্রিকেট মিস করেন?

কপিল: এখন গল্ফ খেলি। আমি কোনও কিছু মিস করি না। আমি এমন একজন মানুষ যে আগামীর দিকে তাকিয়ে বাঁচি, পিছন দিকে তাকিয়ে নয়।

প্র: কলকাতার কোন জিনিসটা ভাল লাগে?

কবীর: লাঞ্চের পরে খাবারের কথাই বলতে হয়।

কপিল: আমার মনে হয় ক্রিকেট নিয়ে বাঙালিদের প্যাশন। কলকাতায় তো অনেক এসেছি। এখানে এসে দেখতাম, মাঠের পাশে ছাতা মাথায় মায়েরা দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁদের ছেলেরা তখন ক্রিকেট প্র্যাকটিস করছে। আমি ভাবতাম, আমাদের মা-বাবারা এ রকম নন কেন? আমাদের তো ব্যাট ধরলেই মারতেন। খেলার প্রতি বাঙালিদের ভালবাসা অতুলনীয়। বাঙালিদের দেখে সারা দেশের শেখা উচিত। এ শহরের চেহারা হয়তো বহুতলে পাল্টে গিয়েছে, কিন্তু খেলার প্রতি মানুষের প্যাশন বদলায়নি।

প্র: ভিকি-ক্যাটরিনার বিয়ে উপভোগ করলেন?

কবীর: ওদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। সেটা শ্রদ্ধা জানিয়েই বলছি দুটো মানুষ একসঙ্গে পথচলা শুরু করলেন, এর চেয়ে সুন্দর আর কী হতে পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

Kapil Dev Kabir Khan 83
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy