ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।
সাড়ে তিন বছর নাকি আপনার ইন্টারভিউ হয়নি আনন্দবাজার পত্রিকায়। এই নিয়ে আবীর চট্টোপাধ্যায়ের প্রচুর ক্ষোভ...
না, ক্ষোভ নয়, দুঃখ। আফশোস..
আপনাকে একটু হিসেব দিই? আনন্দplus প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ছ’টা প্রচ্ছদকাহিনি হয়েছে আপনাকে নিয়ে...
হ্যাঁ, ওগুলো তো স্টোরি। ইন্টারভিউ হয়নি... মানে এ রকম কথোপকথন। সেটা নিয়ে একটু দুঃখ আছে।
আরে আনন্দplus-এ তো অন্য ধারার ছবিতে যে আপনি এক নম্বর, সেটা দেড় বছর আগে লেখা হয়েছিল। আপনাকে দেবের পাশাপাশিও রাখা হয়েছিল...
হ্যাঁ, কিন্তু সেটাও তো স্টোরি। মানে ‘ফ্যাব ফাইভ’ হয়েছে, লখনউতে শ্যুটিং কভারেজ হয়েছে, ইন্টারভিউ হয়নি। সেটাই বলছিলাম...
তা হলে বলুন...
(হাসি) বলছি বলছি। তবে এটাও ঠিক ছবির প্রচারের জন্যই ইন্টারভিউ হওয়া উচিত। সব ব্যাপারে মতামত দেওয়ার কোনও মানে হয় না! আমি খুব একটা ইন্টারভিউ দিইও না...
মাসে দু’টো ইন্টারভিউ তো দেখিই...
কোথায়? একদম দিই না। কোথাও বিশেষ যাই-ই না তো ইন্টারভিউ...
যান না মানে? আম উৎসব, জাম উৎসব— সব জায়গায় তো আবীর...
আরে আমাদের তো সংসার চালাতে হবে। তাই একটু আম উৎসব, জাম উৎসবে যেতেই হয়। (হাসি) আর ওখানে তো আমার দর্শকরাও থাকেন। তাঁদের সঙ্গে ডিরেক্ট ইন্টার্যাকশন হয়...
এবার একটু কাজের কথায় ফিরি। হেলেন মানে ক্যাবারে, র়়ঞ্জিত রেপিস্ট, ইফতেকার পুলিশ অফিসার আর আবীর মানেই গোয়েন্দা...
হুমম্... এই ইমেজটা ভাঙতে হবে...
মানে স্বীকার করছেন অভিনেতা আবীরকে ছাপিয়ে যাচ্ছেন গোয়েন্দা আবীর?
একেবারে মেনে নিচ্ছি তা কিন্তু নয়। আমি গোয়েন্দা ছাড়াও নানা ধরনের ছবি পাচ্ছি। আমার পরের রিলিজগুলো কোনওটাই তো গোয়েন্দা নয়। ‘যমের রাজা দিল বর’, ‘কাটমুন্ডু’, ‘রাজকাহিনী’, ‘অ্যাবি সেন’ এবং ‘বাস্তু শাপ’— সব ছবিতেই আলাদা আলাদা চরিত্র। এই চরিত্রগুলো যদি না পেতাম, তখন চিন্তা হত। এখনও চিন্তার কারণ দেখছি না।
আপনি ফেলুদা, আপনি ব্যোমকেশ — খুশি?
ছবিগুলোর মধ্যে গ্যাপ থাকলে ভালই হত। এবার আপনি প্রশ্ন করতে পারেন কতটা গ্যাপ থাকা উচিত? সেটার উত্তর আমার কাছে নেই।
কিন্তু পৃথিবীর কোথায় এটা হয়? যে স্পাইডারম্যান, সেই ব্যাটম্যান?
দেখুন, ইন্ডাস্ট্রির কথা ভাবলে বলতে হয় আরও বেশি অপশন থাকলে তো ভাল হত। কিন্তু সেলফিশলি ভাবলে মনে হয় ভালই তো। দুটোই আমি। আর সত্যি বলতে আমরা অভিনেতারা লোভী। তাই দু’টো গোয়েন্দা হতে পেরে আমার অন্তত খারাপ লাগছে না।
তা হলে নাম কী হবে আপনার? ব্যোমকেশ মিত্তির না প্রদোষ বক্সী?
আবীর চট্টোপাধ্যায়। তবে আমাকে কৌশিকদা (গঙ্গোপাধ্যায়) একটা নাম দিয়েছে। গোয়েন-দা। ওটাই আমার বেস্ট লেগেছে। আর আমি ব্যোমকেশ, আমি ফেলুদা, এটা কিন্তু অভিনেতার ক্ষেত্রে ডেঞ্জারাসও। একটা আত্মতুষ্টি চলে আসতে বাধ্য। তাই চাপ থাকলে হয়তো অভিনেতার ভাল।
যিশু-ও তো ব্যোমকেশ। যিশু কি চাপে রেখেছে আপনাকে?
যিশু বলব না। আসলে ওই চরিত্রগুলোই চাপে রাখে। দু’টোই বেস্টসেলার, প্রতিটা পাতা লোকের মুখস্থ। তাই অন্য কোনও অভিনেতার চাপের চেয়ে এই দু’টো চরিত্রের চাপই আপনাকে তাড়িয়ে বেড়ায়...
যিশু আপনার ভাল বন্ধু। ব্যোমকেশ করবেন কিনা তাই নিয়ে যখন আপনি সিওর নন, তখন যিশুর সঙ্গেও কথা বলেছিলেন। কিন্তু ডিসিশন নেওয়ার পর আর ওঁকে বলেননি। যিশুর খারাপ লেগেছিল শুনেছিলাম?
তা যিশু আমাকেই বলতে পারত যে ওর খারাপ লেগেছে। তবে ওই যে আগে বললাম, আমরা অভিনেতারা লোভী। আর দেখুন, আজ থেকে ২০ বছর পর কেউ ফেলুদা করলেও লোকে ফেলুদা হিসেবে যার কথা প্রথম ভাববে, সেটা সৌমিত্র জেঠু। সিনেমায় ব্যোমকেশের ক্ষেত্রে আমি সেই জায়গাটায় পৌঁছচ্ছিলাম। আমার আগে লোকে ব্যোমকেশ বললে ভাবত রাজিত কপূর। কিন্তু সেটা ছিল টিভির ব্যোমকেশ। কিন্তু নানা জায়গায় দেখছিলাম সিনেমার ব্যোমকেশ বললেই আমার নাম উঠে আসছে। কোনও পার্টিতে গেলেই লোকে বলছে, ‘এই তো ব্যোমকেশ এসে গেছে’। ফেলুদা আর ব্যোমকেশ একসঙ্গে করার এই ঐতিহাসিক সুযোগ কোন অভিনেতা ছেড়ে দিত বলুন? ঠিক আছে? আমি কিন্তু একদম অনেস্ট আনসার্স দিচ্ছি...
একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই। অনেস্টিটা এখানে আরও বেশি দরকার...
বলুন...
আপনার কী হয়েছে বলুন তো। লাস্ট ছ’মাস বহু ঘরোয়া পার্টিতে আড্ডা হয়েছে। তাতে অনেকেরই মনে হয়েছে আপনি খুব ডিস্টার্বড?
আমি? না তো। একদমই না...
পরমের মা সুনেত্রাদির শ্রাদ্ধে আপনি সাঙ্ঘাতিক অন্যমনস্ক ছিলেন?
তাই কি? মনে পড়ছে না তো।
আপনাকে কি কিছু ভাবাচ্ছে?
ভাবাচ্ছে মানে, এমনি ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে চিন্তাভাবনা আছে। মানে যে ভাবে একটা ছবি নিয়ে বলিউড কৌতূহলের লেভেলটা বাড়াতে পারে, আমরা টালিগঞ্জে কি সেটা পারছি?
আপনি বন্ধুর বাড়ির নেমন্তন্নে অন্যমনস্ক মানে ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে চিন্তা করছেন, এটা কেউ বিশ্বাস করবে?
না তা নয়...
তা হলে জিজ্ঞেস করেই ফেলছি। শোনা যাচ্ছে, নট অল ইজ ওয়েল ইন ইয়োর পার্সোনাল লাইফ।
একেবারেই না...
আপনার কানে পৌঁছয়নি কথাটা?
হ্যাঁ, পৌঁছেছে। আমি তো প্রথমে ব্যাপারটা গসিপও ভাবিনি। আমি ভেবেছিলাম কেউ মজা করছে। তারপর বুঝলাম এটা গসিপ, যখন একজন বড় প্রযোজক আমাকে জিজ্ঞেস করল। আপনাদের হতাশ করেই জানাচ্ছি, সরি বিয়েতে কোনও সমস্যা নেই। ইনফ্যাক্ট একমাত্র জায়গা যেখানে সমস্যা নেই, সেটা বিয়ে...
শোনা যাচ্ছিল আপনার স্ত্রী নন্দিনী আপনাকে নিয়ে ইনসিকিওর্ড? আপনারা নাকি সেপারেশনের কথাও ভাবছিলেন?
নন্দিনী আমার থেকে অনেক বেশি সিকিওর্ড। এই গসিপটা বেড়েছে তার কারণ বোধহয় বেশ কিছু মাস ধরে লোকে আমাকে আর নন্দিনীকে আর পার্টিতে দেখতে পায় না একসঙ্গে।
নন্দিনী ইজ হ্যাভিং আ টাফ টাইম। এক দিকে কর্পোরেট লাইফ। অন্য দিকে আমাদের ছোট্ট মেয়ে। ওর পক্ষে ব্যালান্স করাটা ডিফিকাল্ট হচ্ছে। কিন্তু সেপারেশনের কথা, সমস্যা— এগুলো একেবারেই ভুল। আমাদের বিয়েটা রক-সলিড। বিয়ের সেভেন ইয়ার হিচ-টাও কেটে গিয়েছে। তাই বিয়ে পাক্কা আছে। নো লোড।
তবে আমাকে তো মানুষ ইন্টেলিজেন্ট অভিনেতা বলেন। আমার ক্ষেত্রে আর একটু বুদ্ধিদীপ্ত গসিপ হলে আমার ভাল লাগত। এটা বড্ড গতে বাঁধা।
একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। ঋত্বিক সেদিন আনন্দplus-কে বললেন, আজকের টালিগঞ্জে অন্য ধারার ছবিতে এক নম্বর আপনিই?
সে দিন ওকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল অজিত হিসেবে ও ব্যোমকেশকে কতটা কম্পিটিশন দেবে। সেই প্রশ্নের উত্তরটা থেকে বাঁচতে এটা বলে ব্যাটা কাটিয়ে দিল...
ঋত্বিক তো আপনার বন্ধু?
হ্যাঁ, ঋত্বিক ইজ আ গুড ফ্রেন্ড।
পরম কি গুড ফ্রেন্ড?
পরম ফ্রেন্ড। গুড ফ্রেন্ড-এর লেভেলে পৌঁছইনি আমরা...
‘বাস্তু শাপ’-এর আউটডোরে শুনছিলাম, পরম সকালে এক্সারসাইজ করত আর আপনি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেটা দেখতেন। সেটা কতটা দেখা, আর কতটা মাপা?
কম্পিটিশন ভাল। ওই আউটডোরেই দেখেছিলাম সকাল সাড়ে এগারোটার ঠা ঠা রোদেও পরম ছুটতে যাচ্ছে। ওকে দেখে ইন্সপায়ার্ড হয়ে আমিও কলকাতা ফিরে ছোটা শুরু করেছি। তাই কম্পিটিশন ভালই।
শোনা যায় ‘হৃদমাঝারে’ ছবিতে নাকি আপনি ইনসিস্ট করেছিলেন যাতে আপনার সঙ্গে রাইমার কিসিং সিন থাকে। এই যে, রাইমাকে নিয়ে পরমের সঙ্গে আপনার ‘চুমু কম্পিটিশন’…
কোনও কম্পিটিশন নেই। রাইমা আর পরম হল বন্ধু। বাডিজ। প্রেম, ভালবাসা পরে, আসলে ওরা বন্ধু। আর ‘বাস্তু শাপ’-এর আউটডোরে একদিন রাইমা হঠাৎ বলে উঠল, ‘আই অ্যাম বিয়িং লেফ্ট আউট।’ আমি আর পরম তখনই আনন্দplus-সম্পাদককে ফোন করতে চেয়েছিলাম।
কেন?
এটা বলতে যে দু’জন কনটেম্পোরারি হিরো থাকতেও রাইমা সেনের একা লাগছে, এই খবরটা ইমিডিয়েটলি ছাপা উচিত...
সৃজিত বলে আপনার আর পরমের কম্পিটিশনটা উত্তম-সৌমিত্রর মতো, যেখানে আপনি সৌমিত্র?
এই প্রশ্নের উত্তর আমি তখনই দেব যখন সৃজিত খোলাখুলি বলবে ও নিজেকে কতটা সত্যজিৎ রায় মনে করে সেটা বলার পর… (প্রচণ্ড হাসি)
আচ্ছা, এটা বলুন আপনার কী আছে যা পরমের নেই। বা উল্টোটা?
আমার কাছে সবচেয়ে বড় দু’টো ফ্র্যাঞ্চাইজি আছে— ফেলুদা আর ব্যোমকেশ। পরমের সেটা নেই।
আর পরমের মধ্যে একটা ফ্ল্যামবয়েন্স আছে যেটা আমার নেই। আর পরম গিটার বাজিয়ে গান করতে পারে, যেটা আমি পারি না।
তবে আমাদের দর্শক দেখেছি একটা পর্যায়ের পর ফ্ল্যামবয়েন্সটা অতটা মেনে নেয় না। আমার ইমেজটা বয় নেক্সট্ ডোর। বাঙালি দর্শক ফ্ল্যামবয়েন্টের থেকে এই বয় নেক্সট্ ডোর ইমেজটা বেশি পছন্দ করে।
চার বছর আগের একটা ঘটনা । পরম তখন ‘কহানি’র পর পর মুম্বইতে কাজ করছে। আপনি বিবিএম-এ স্টেটাস দিয়েছিলেন ‘চন্দ্রবিন্দু’র একটি গানের লাইন- ‘যেতে চাও তুমি বম্বে, নাম্বার আরও কমবে...’
ওটা একেবারেই পরমের জন্য ছিল না। তবে হ্যাঁ, আমি এটা মনে করি আমার সত্যি যদি কারও সঙ্গে কম্পিটিশন থেকে থাকে, সেটা পরম। হি ইজ মাই বিগেস্ট কম্পিটিটর। ও কোনও ভাল রোল করলে আমার মনে হয় ‘শা...’, এটা তো ও ফাটিয়ে দিল। আমার ধারণা, ওরও তাই মনে হয়।
ফ্যাব ফাইভ-এ তা হলে ওই কম্পিটিটর?
হ্যাঁ, অপুদা অনেক সিনিয়র। যিশুও আমাদের আগে শুরু করেছে। আর ঋত্বিক অন্য ধরনের রোল করছে। তবে ঋত্বিকের সব রোল একই রকম মনে হচ্ছে। এক ম্যানারিজম...
ভাবিনি এতটা খোলাখুলি কথা বলবেন। নন্দিনী নিয়ে যে কথা বললেন, তাতে গসিপটা কমবে...
হ্যাঁ, এই গসিপটার কোনও মানে হয় না। আর নন্দিনী যাদবপুরের ইকনমিক্স। ও যে কী স্মার্ট, আমি জানি।
আচ্ছা, আর একটা গসিপ আছে। আপনার কি কোথাও কোনও লুকনো গার্লফ্রেন্ড আছে? একজন সোলমেট?
না তো। একেবারেই গসিপ। আর এসব গসিপ হলে আমি সবার আগে ডিসকাস করি নন্দিনীর সঙ্গে। প্রত্যেকটা গসিপের ক্ষেত্রে ওর একটা অন্য টেক আছে, যেটা ইউনিক।
থ্যাঙ্ক ইউ। সাড়ে তিন বছর পর কথোপকথনটা ভালই হল...
হ্যাঁ, খারাপ নয়। তবে এটা বেরোলে যে প্রচুর ফোন আসবে, সেটা এখানে বসেই বুঝে গিয়েছি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy