কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য। ছবি: সংগৃহীত।
সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখ। প্রতি বছর কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে এই দিনটি। প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পীর জন্মদিন বলে কথা! হাজার ব্যস্ততার মধ্যেই এই দিনটিকে কিছুটা হলেও বিশেষ ভাবে উদ্যাপন করার পরিকল্পনা থাকে ‘দোহার’-এর। চলতি বছরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বরং, চলতি বছর ‘দোহার’-এর কাছে আরও বিশেষ। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়ের ‘রক্তবীজ’ ছবির মুক্তি প্রায় আসন্ন। সেই ছবির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বাংলার লোকগানের দল ‘দোহার’। ছবি মুক্তির বাকি আর মাত্র মাসখানেক। এমন সময়ে এসে কালিকাপ্রসাদকে কি ভোলা যায়! তিনি ইহলোকে না থাকলেও তাঁকে সর্বদা নিজেদের গানের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রেখেছে ‘দোহার’। শুধু গানের ক্ষেত্রেই নয়, ‘দোহার’-এর বিভিন্ন উদ্যোগেও প্রাণপুরুষ কালিকাপ্রসাদের ভাবনার ছাপ স্পষ্ট। ১১ সেপ্টেম্বর তাঁকে স্মরণ করে কখনও ওয়ার্কশপের আয়োজন করে ‘দোহার’, কখনও বা বিশেষ অনুষ্ঠানের। সঙ্গে গান তো থাকেই। চলতি বছরেও সেই পরম্পরা বজায় রেখেছে ‘দোহার’। ‘দোহার’-এর অন্যতম স্রষ্টা রাজীব দাস আনন্দবাজার অনলাইনকে জানান, সন্ধে ৬টায় বাংলা অ্যাকাডেমিতে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করেছেন তাঁরা। রাজীবের কথায়, ‘‘কালিকাদাকে স্মরণ করে আন্তরিক ভাবে কিছু একটা করার চেষ্টা করি আমরা। এ বারও তাই। বাংলা অ্যাকাডেমিতে আলোচনাসভা তো রয়েছেই, সঙ্গে গানের মাধ্যমে উদ্যাপন করব আমরা। থাকবেন শ্রীকান্ত আচার্য, শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার, আশিস গোস্বামী, প্রেমাংশু দাসের মতো গুণীজনেরা। বাংলা সঙ্গীতে, বিশেষ লোকসঙ্গীতে কালিকাদার যে অবদান, সেটাই আরও এক বার ফিরে দেখব আমরা।’’
কালিকাপ্রসাদের জন্মদিনে নস্ট্যালজিক ‘রক্তবীজ’-এর অন্যতম পরিচালক শিবপ্রসাদ নিজেও। কালিকাপ্রসাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আজকের নয়। সেই সম্পর্কের বীজ বপন হয়েছিল শিবপ্রসাদের ছাত্রাবস্থাতেই। প্রয়াত শিল্পীর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনকে শিবপ্রসাদ বলেন, ‘‘কালিকাদার সঙ্গে আমার পরিচয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। উনি প্রাক্তনী ছিলেন, আমি তখন ওখানে পড়তাম। ড্রামা ক্লাবে একটি নাটকে ওঁর সঙ্গে আমার আলাপ হয়। আমার অভিনয়ের খুব প্রশংসা করতেন কালিকাদা। উনি খুব চাইতেন, আমি আরও বেশি অভিনয় করি। আর আমি তো বরাবরই কালিকাদার গানের ভক্ত। একটা পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালবাসার জায়গা তৈরি হয়েছিল আমাদের মধ্যে। ‘রসগোল্লা’ ছবি করার সময় আমার মনে হয়েছিল যে, এই ছবির জন্য কালিকাদা সুর বাঁধলে সবচেয়ে ভাল হয়। কালিকাদা দায়িত্বও নিয়েছিলেন। কিন্তু ছবিমুক্তির আগেই উনি আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তাই মনে একটা আক্ষেপ থেকে গিয়েছিল। ‘রক্তবীজ’-এর চিত্রনাট্য লেখা শেষ হতেই আমরা উপলব্ধি করি যে, এই ছবিতে কালিকাদার গানের ছোঁয়া ভীষণ দরকার। ‘দোহার’ও না বলেনি।’’ ‘রক্তবীজ’ ছবির তিনটি গানের সঙ্গীত পরিচালনা করেছে ‘দোহার’।
২০১৭ সালের ৭ মার্চ প্রয়াত হন কালিকাপ্রসাদ। তার পর বছর ছয়েক কেটে গেলেও এখনও যে ‘দোহার’-এই বসত তার প্রাণপুরুষের, তার প্রমাণ মেলে পদে পদে। এখনও মঞ্চে একটি ডুবকি নিয়ে ওঠেন ‘দোহার’-এর সদস্যরা। যেন ওই যন্ত্রের মাধ্যমেই তাঁদের সঙ্গে একই মঞ্চে রয়েছেন কালিকাপ্রসাদ। জন্মদিন বিশেষ তো বটেই, তবে নিজেদের গান ও যাপনের মাধ্যমে নিত্যদিনই প্রাণপুরুষকে উদ্যাপন করে ‘দোহার’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy