(বাঁ দিক থেকে) কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, অরিন্দম শীল, স্বরূপ বিশ্বাস, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
ঘটনা ১. সূত্রপাত গত বছর জুলাই মাসে। পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ফেডারেশনকে অবমাননার অভিযোগ। ডিরেক্টর্স গিল্ড তাঁর পক্ষে সওয়াল করায় পরিচালকদের সঙ্গে টেকনিশিয়ানদের জোর কাজিয়া। যার জেরে পরিচালকের পুজোর ছবির শুটিং বন্ধ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে সাময়িক রফা হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। রাহুল ছবি বানাতে পারেননি শেষ পর্যন্ত।
ঘটনা ২: চলতি বছরে ২৪ জানুয়ারি, শুক্রবার প্রকাশ্যে এসেছে, ফেডারেশনের সঙ্গে সমস্যা তৈরি হয়েছে পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের। ২৯ তারিখ থেকে তাঁর আগামী ছবির শুটিং শুরু হওয়ার কথা। কাকতালীয় ভাবে এটিও তাঁর পুজোর ছবি!
ঘটনা আরও আছে। সূত্রের খবর, কৌশিক-ফেডারেশন সমস্যা নাকি গত তিন দিন ধরে চলছে। একা কৌশিক নন, একই ভাবে নাকি সমস্যায় পড়েছেন আরও এক পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। তাঁরও এই মাসের শেষ থেকেই শুটিং শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু ফেডারেশন তাঁকেও সবুজ সঙ্কেত দেয়নি। অথচ শুটিংয়ের অনুমতি পেয়েছেন পরিচালক অরিন্দম শীল। তিনিও খুব শিগগির কাজ শুরু করবেন বলে স্থির করেছেন।
তা হলে বিষয়টি কী দাঁড়াল? রাহুল-ফেডারেশন কাজিয়া চলাকালীন ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস একটি মন্তব্য করেছিলেন। তাঁর দাবি ছিল, ৬০ শতাংশ পরিচালকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আসে তাঁর কানে। প্রসঙ্গত, সেই সময় শহর উত্তাল আরজি কর হাসপাতালে কর্মরত তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের প্রতিবাদে। এই পরিস্থিতিতে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রিতে ঘটে যাওয়া একাধিক যৌন হেনস্থার ঘটনা। যার পরিপ্রেক্ষিতে স্বরূপ ওই মন্তব্যটি করেছিলেন।
স্বরূপের এই বক্তব্য সে সময়ে পরিচালকদের ক্ষোভে ঘি ঢেলেছিল। প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে পরিচালক গিল্ড এবং সংগঠনের একঝাঁক সদস্য পরিচালক বিবৃতি দেন, ফেডারেশন সভাপতির বিরুদ্ধে তাঁরা মানহানির মামলা করতে চলেছেন। শুধুই বিবৃতিদান নয়, স্বরূপকে সমনও পাঠানো হয়। তার প্রতিশোধই কি এ ভাবে নিচ্ছে ফেডারেশন?
এই প্রশ্ন নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল পরিচালক সংগঠনের সভাপতি সুব্রত সেনের সঙ্গে। তাঁর কথায়, “বিষয়টি নিয়ে কৌশিক বা ছবির প্রযোজক কিছুই জানাননি। ফলে, শুধু অনুমানের ভিত্তিতে কিছু বলি কী ভাবে? দিন কয়েক ধরে সমস্যা চলছে জানি। কী কারণে সমস্যা বা কেন শুটিং স্থগিত, কিছুই জানি না।’’ সুব্রত এই প্রসঙ্গে কিছু বলতে না চাইলেও কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, পরিচালকেরা নাকি শুক্রবার রাতে নিজেদের মধ্যে বৈঠক ডেকেছেন। সুব্রত সেনের মতোই বিষয়টি নিয়ে মুখ বন্ধ রেখেছেন পরিচালক সংগঠনের সম্পাদক সুদেষ্ণা রায়। এই বিষয়ে সবিস্তার কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন কৌশিকের ‘অযোগ্য’ ছবির প্রযোজক নিসপাল সিংহ রানে। তাঁর মতে, কিছু না জেনে এ রকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চান না তিনি।
কুলুপ এঁটেছেন প্রযোজক-পরিচালক-অভিনেতা শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও। তবে শোনা গিয়েছে, তিনি মন থেকে চাইছেন, সমস্যা মিটে যাক। নির্দিষ্ট সময়েই কৌশিক যেন তাঁর শুটিং শুরু করতে পারেন। অন্য দিকে, তাঁর আসন্ন ছবি ‘এই রাত তোমার আমার’ নিয়ে প্রচারে ব্যস্ত পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। প্রচারের ফাঁকে তিনি বলেছেন, ‘‘কৌশিকদার সঙ্গে কথা হয়েছে। পরিচালকের অনুরোধ, ‘তোরা এখনই কিছু করিস না। ফেডারেশনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করি, সমস্যা মিটে যাবে। না মিটলে তখন দেখা যাবে।’ কৌশিকদার অনুরোধকে সম্মান জানিয়ে এখনই তাই এই নিয়ে কিছু বলব না।’’
ফোনে পাওয়া যায়নি পরিচালক জয়দীপকে। টলিউডের গুঞ্জন অনুযায়ী, তিনিও নাকি কৌশিকের মতোই ফেডারেশনের সঙ্গে শুটিং সংক্রান্ত সমস্যায় জড়িয়েছেন। তবে কথা বলেছেন পরিচালক অরিন্দম। টলিউডের দাবি, তিনিই ব্যতিক্রমী, যিনি শুটিংয়ের অনুমতি পেয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার কোনও দিন টেকশিয়ান ভাইদের নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি। আমি কোনও দিন ফেডারেশনের নিয়ম ভাঙিনি। তার মানে এই নয় যে কৌশিকদা নিয়ম ভেঙেছেন। আমি আমারটুকুই বলতে পারি।’’ এই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিনোদন দুনিয়ার কিছু ব্যক্তির প্রশ্ন, অরিন্দম পরিচালক সংগঠন থেকে আইনি জটিলতার কারণে সাময়িক বরখাস্ত। তিনি আপাতত সংগঠনের সদস্য নন বলেই কি ফেডারেশন থেকে শুটিংয়ের অনুমতি পেলেন?
এ দিকে আরও শোনা যাচ্ছে, কৌশিক বা জয়দীপ শুধু নন, চলতি বছরে যখন যে পরিচালক শুটিং শুরু করবেন তাঁকেই নাকি ফেডারেশনের এই অসহযোগিতার মুখে পড়তে হবে! বাকি পরিচালকেরাও কি এই আশঙ্কায় কাঁটা? এই সম্ভাবনা অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন পরমব্রত। তাঁর দাবি, সবটাই গুজব। তিনি বিন্দুমাত্র শঙ্কিত নন।
কী কারণে টেকনিশিয়ানেরা কৌশিকের সঙ্গে কাজ করছেন না? সমস্যার কারণ কী? জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে। সমস্যার কথা তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন। বললেন, ‘‘টেকনিশিয়ান লিস্ট নিয়ে একটু সমস্যা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের আলোচনা চলছে। এর বেশি এখন কিছু বলতে চাই না।” যাঁর শুটিং স্থগিত হওয়ায় এত কথার সূত্রপাত, সেই কৌশিকের সঙ্গেও বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন এবং মেসেজের কোনও উত্তর দেননি।
অন্য দিকে এও শোনা যাচ্ছে, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের হস্তক্ষেপে নাকি পুরো বিষয়টির সুরাহা হতে চলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy