Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

তথ্যচিত্রে হাতির বারোমাস্যা

হাতি আর মানুষের জোড়া সমস্যার এই ‘শাঁখের করাত’ নিয়েই তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন জয়দীপ ও সুচন্দ্রা কুণ্ডু। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করেন তাঁরা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুনন্দ ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

একটি পূর্ণবয়স্ক হাতির দিনে ৩০০ কিলোগ্রাম খাবার লাগে।

ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৪০টি হাতির এই খোরাক জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের জঙ্গল। পর্যাপ্ত খাবার না-পেয়ে হাতির দল হানা দিচ্ছে ধানখেতে, মানুষের ঘরে। ফলে জঙ্গল সংলগ্ন লোকালয়ের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। প্রশ্ন উঠছে, মাঠের ফসল থেকেই যে-সব প্রান্তিক মানুষের সংসার চলে, তাঁদের ফসল বা ধানের গোলা হাতির দল সাবাড় করে দিলে কৃষক পরিবারগুলি সারা বছর খাবে কী!

হাতি আর মানুষের জোড়া সমস্যার এই ‘শাঁখের করাত’ নিয়েই তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন জয়দীপ ও সুচন্দ্রা কুণ্ডু। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করেন তাঁরা। বন সংরক্ষণেরই ছবি তৈরি করেন তামিলনাড়ুর শশিধর ভেমপালা। রাজ্যের বন দফতরের সাহায্যে ভেমপালাকে দিয়েই ২৮ মিনিটের তথ্যচিত্র বািনয়েছেন জয়দীপেরা। ২৪ জুলাই কলকাতায় হয়েছে তার প্রথম প্রদর্শনী। লন্ডনের পাইনউড ফেস্টিভালে দেখানো হয়েছে আগেই।

মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, খড়্গপুর— এই তিনটি ফরেস্ট রেঞ্জে সমস্যা সব চেয়ে গভীর। ডিএফও রবীন সাহা জানান, জঙ্গলে কাঁঠাল, চালতা, জংলি আমের গাছ ছাড়াও হাতির ভোজ্য ঘাস লাগালে ওরা কিছুটা খাবার পেতে পারে। উত্তরবঙ্গের জঙ্গল সংরক্ষিত। সেখানে জঙ্গলের প্রাণীদের এই খাবারে ভাগ বসানোর কেউ নেই। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গে মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, খড়্গপুরের চাদরা, পিড়াকাটা, আড়াবাড়ি, শিলদা, জামবনি, কলাইকুন্ডা, মানিকপাড়ায় জঙ্গলের গায়ে বসতি। বাসিন্দারা গরু-ছাগল পোষেন। হাতির খাবারের অনেকটাই খেয়ে নেয় প্রাণী। ‘‘তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া যায় যে, গরু-ছাগলকে জঙ্গলে ঢুকতে দেওয়া হবে না, তাও বনসৃজন করে বড়জোর ২৫-৩০টি হাতির খোরাক জোগানো সম্ভব। ফলে সমস্যা থেকেই যাবে,’’ বলেন রবীনবাবু।

জয়দীপ বলছেন, ‘‘শহরে ঠান্ডা ঘরে বসে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। কেন হাতির উপরে অত্যাচার হবে, তা নিয়ে অনেকের রাতের ঘুম নেই! কিন্তু প্রান্তিক চাষি ও তাঁদের পরিবারের কী করুণ অবস্থা, তার সম্যক ধারণা নেই অনেকেরই। আমরা সেই দিকটাও তুলে ধরার চেষ্টা করছি।’’ সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে বন দফতরের কর্মীদের ‘হুলা’ নিষিদ্ধ হয়েছে। হুলা হচ্ছে লাঠির মাথায় মশাল জ্বেলে হাতি তাড়ানোর পদ্ধতি। হুলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাতিদের ভয় দেখানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে জঙ্গল সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দাদের সমস্যা বেড়েছে।

তা হলে উপায়? খোলা জায়গায় হাড়িয়া তৈরি বন্ধ করতে বলা হয়েছে গ্রামবাসীদের। হাড়িয়ার গন্ধে আকৃষ্ট হয় হাতিরা। গ্রামে শস্য মজুত রাখার জায়গায় কড়া সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। রবীনবাবুর সমাধানসূত্র: জঙ্গলের লাগোয়া গোটা গ্রাম সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে অন্যত্র। হাতিদের জন্য ছেড়ে দিতে হবে করিডর।

জয়দীপ-সুচন্দ্রার তথ্যচিত্রে সেই সম্ভাবনার দিকটিও তুলে ধরা হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Documentary Elephants
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy