Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Chitraganda Chakraborty

‘বাঙালি প্রকাশ্যে সেক্স নিয়ে আলোচনা করবে না কিন্তু হামলে পড়ে দেখবে!’

উৎসব মুখোপাধ্যায় এবং চিত্রাঙ্গদা। তাঁদের আড্ডায় উঠে এল নতুন ওয়েব সিরিজ ‘কর্কট রোগ’ থেকে বাঙালির সেক্স চর্চার কথা।

মুখোমুখি উৎসব ও চিত্রাঙ্গদা। —নিজস্ব চিত্র।

মুখোমুখি উৎসব ও চিত্রাঙ্গদা। —নিজস্ব চিত্র।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৯ ১৭:১৭
Share: Save:

দু’জনে নিজের মতো করে বাঁচেন। কাজ না পেলে খুব বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েন না। দশ ঘণ্টার ওয়েব সিরিজ শুট করার পরেও এমন নয় যে তাঁরা সাক্ষাৎকারে শুধু নিজেদের ছবির কথা বলেন। বরং বেরিয়ে আসে বাংলা ছবি নিয়ে তাঁদের সোজাসাপ্টা মতামত। উৎসব মুখোপাধ্যায় এবং চিত্রাঙ্গদা। তাঁদের আড্ডায় উঠে এল নতুন ওয়েব সিরিজ ‘কর্কট রোগ’ থেকে বাঙালির সেক্স চর্চার কথা।

গত চার বছর আপনি ছবি পরিচালনা করেননি...

উৎসব: হ্যাঁ। কারণ আমায় কেউ কাজ দেয়নি। আর যে পদ্ধতিতে কিছু কাজের সুযোগ এসেছিল সে পদ্ধতিতে আমার পক্ষে ছবি করা সম্ভব নয়।

কেন?

উৎসব: আমি পনেরো দিনে ছবির শুট করে ফেলব। যা যা ছবিতে সেই সময় করতে পারলাম না, বলে দিলাম পোস্ট প্রোডাকশনে মিলিয়ে দেব। এ ভাবে সিনেমা হয় না।

কেন? নাম করা পরিচালকেরা তো বছরে দু’-তিনটে ছবি করছেন...

উৎসব: দেখুন আমি অনেক ছবি করছি। আর প্রত্যেক ছবিতে আমার ছবির মান পড়ছে— এ রকম করে কাজ করার কী মানে? কাজের ক্ষেত্রে আমি তো দেখব আমার আগের কাজটার চেয়ে পরের কাজটা কতটা ভাল হবে। সেটা না হলে কাজ করব না। ঠিক আছে!

আপনি এ ভাবে বলছেন, ভয় করছে না?

উৎসব: কীসের ভয়? আমি কী হারাবো? শুনুন, কান ফেস্টিভালে গিয়েছিলাম ভারত থেকে। ওরা কোনও দিন কমার্শিয়াল বলিউডের ছবি নিয়ে মাথা ঘামায় না। ওরা আমাকে দেখে বলল, ও, ইন্ডিয়াতে এখনও ছবি হয়! আমরা তো ‘রে’ আর ‘সেন’ জানি।

এ বার মুখ খুললেন পাশে বসা চিত্রাঙ্গদা।

চিত্রাঙ্গদা: আমাদের কোথাও কিছু হারানোর নেই। তবে এ কথা বলার সময় এসেছে যে বাংলা ছবি নির্মাণের ধারণাগুলো এ বার বদলাতে হবে। আমি একটা খুবই কম বাজেটের ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছোট ছবি করেছিলাম। সেটা করতেও দিন কুড়ি লেগেছিল। অন্যদের কাজ তো দেখি, পৃথিবীতে যা যা হচ্ছে সেগুলো এ বার কলকাতার মানুষের দেখা উচিত। শুধু কমার্শিয়াল বলিউড ছবি বাংলা ছবির লক্ষ্য হতে পারে না। আর বন্ধুর ছবি বলে দেখলাম আর একে অন্যের পিঠ চাপড়ালাম, এটাও চলবে না আর। বড় ব্যানারের ছবি করলাম। প্রিমিয়ার, অ্যাটেনশন খুব ভাল লাগে। কিন্তু সংলাপগুলো বোকা বোকা হলে ছবিটা করে কী লাভ?

উৎসব: বন্ধুর ছবি দেখতে যাওয়াটাও নেগেটিভ অর্থে। মানে ও কতটা ছড়াল সেটা দেখার জন্য ছবি দেখা।

ছবিতে চিকিৎসকের চরিত্রে চিত্রাঙ্গদা।

আপনাদের ছবির প্রসঙ্গে আসি। বাংলা ছবিতে এক জন নায়িকা ব্রেস্ট ক্যানসার সার্ভাইভার, আবার মর্গের ডাক্তার!

চিত্রাঙ্গদা: এটা মেডিক্যাল থ্রিলার। ডাক্তার হলেও ব্রেস্ট ক্যানসার তাকে মানসিক ভাবে এফেক্ট করে।

উৎসব: ওর চরিত্রটা খুব ইন্টারেস্টিং। পোস্টমর্টেম সার্জন। বাংলা ছবিতে চরিত্রেরা মিডিয়া, আইটি, কলেজে পড়ায়, ব্যান্ড করে। এই চরিত্র সহজ নয়। আমরা দু’জনে দিনের পর দিন মর্গ ভিজিট করেছি। দেখেছি, এই প্রফেশনে মহিলাদের উপস্থিতি কম। প্রচুর কেস ধামাচাপা দেওয়া হয়।

চিত্রাঙ্গদা: ছবিতে অপারেশনের পর খুব তাড়াতাড়ি কাজে যোগ দেয় এই চরিত্র। এমন কিছু ডেড বডি পায় যা দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া। আর প্রত্যেকের বডিতে সোলেন লিম্প নোড পায়। ও বোঝে, এর পিছনে কিছু আছে। বিষয় নিয়ে ঘাঁটতে গিয়ে আরও অনেক সত্যের মুখোমুখি হয়।

বাংলা ছবির চরিত্র নিয়ে কথা উঠল যখন জিজ্ঞেস করি, আজকের বাংলা ছবিকে কী মনে হয়?

চিত্রাঙ্গদা: বাংলা ছবিতে মেয়েদের চরিত্রের গভীরতা আজও কম। ওয়েব আসাতে সুবিধে হলেও ছাড়া গরুর মতো লোকে যা খুশিও করছে।

উৎসব: ছবি তৈরির প্রসেস সহজ হওয়ায় সবাই ভাবছে সব করে ফেলব। গোটা স্ক্রিপ্ট পনেরো দিনে লেখা হচ্ছে। বারো দিনেই নামকরা পরিচালকরা শুট করে ফেলছেন। আমি তো অনীকদার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, আমার ন্যারেটিভ সাজাতেই পনেরো দিন লাগে। তাড়া নিয়ে বাংলা ছবির কাজ হলে তো ক্রিস্টোফার নোলান-ও সেই ছবিকে বাঁচাতে পারবে না!

আবার এ ভাবে বলছেন, আপনার ভয় করছে না?

চিত্রাঙ্গদা: ভয় কেন পাবে? ওর তো হারাবার কিছু নেই! পৃথিবীতে প্রচুর ভাল কাজ হচ্ছে। সেগুলো দেখা দরকার। আর কোয়ান্টিটি সব নয়। অনেক কাজ সেই কারণে না করেছি। তাতে আর্থিক স্বচ্ছলতাও আসত, করিনি তবুও।

উৎসব: হোল পয়েন্ট ইজ টু গেট বেটার। সিনেমার একশো চব্বিশ বছর হয়ে গিয়েছে। কোথাও কেউ আমরা বলতে পারি না, আমিই প্রথম কিছু করছি। সব বলা হয়ে গিয়েছে। তবে আঙ্গিক সময়ের প্রেক্ষাপট আলাদা সয়। দশ ঘণ্টা চল্লিশ মিনিটের কনটেন্ট তৈরি হয়েছে। আমি খুব আন্ডার-প্রিপেয়ারড ছিলাম এই কাজের জন্য। মনে হচ্ছিল, চ্যানেলের অনিন্দিতাদিকে বলি আমায় ছেড়ে দাও। তবে চ্যানেলের কাছে আমার প্রযোজকের কাছে প্রচুর সহযোগিতা পেয়েছি। যা চেয়েছি দিয়ে দিয়েছে প্রোডিউসার। প্রশ্ন করেনি। প্রচন্ড ইয়ং টিম পেয়েছিলাম যারা পঞ্চান্ন দিনের শিডিউলে লড়ে গিয়েছে। চিত্রাঙ্গদা তো পুরো ছবি জুড়ে। পরিচালক-নায়িকার বোঝাপড়াও তৈরি হয়ে গিয়েছিল।

প্রেম হয়নি?

উৎসব: এত ডিপ্রেসিং চরিত্র যে প্রেমের প্রশ্নই ওঠে না। একটা সিন এক বার হিন্দিতে, তার পরেই বাংলাতে ওকে বলতে বাধ্য করিয়েছি। এত কাজের চাপে প্রেম কী করে হবে?

চিত্রাঙ্গদা: এই কাজে প্রেম নয়, অনেক কিছু শেখা আর করার ছিল তা-ই করেছি এই ছবিতে।

মুম্বই চলে গেলেন কেন?

চিত্রাঙ্গদা: ব্রাত্যদার সঙ্গে নাটক করতাম কলকাতায়। মায়ের জন্য সবাই চিনত আমায়। আর বলত, তোকে তো ছোটবেলায় দেখেছি! তাতে কী? এ বার ছবিতে কাস্ট কর। সে দিকে নেই! তাই মুম্বই গেলাম কাজের খোঁজে। থ্যাঙ্কফুলি ছোটবেলা থেকে কেউ চিনত না ওখানে। অনুরাগ বসুর সঙ্গে ‘স্টোরিজ অব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ করার পর লোকে চিনতে শুরু করল।

ঋতাভরী আপনার চেয়ে বেশি জনপ্রিয়

চিত্রাঙ্গদা: ও এখানেই থাকে। সিরিয়াল করেছে।

কতটা লড়াই করতে হয়?

চিত্রাঙ্গদা: লড়াই সারা জীবনের। আনফেয়ার হতে দেখলে মনখারাপ হয়ে যায়। তবে বডি অব ওয়ার্ক বেশি জরুরি। কাজটা ভাবলে সেন্স অব স্ট্রাগলটা কমে যায়।

উৎসব কেমন পরিচালক?

চিত্রাঙ্গদা: প্রথমে খুব কিছু আশা করিনি। চিনতামও না। পরে বুঝি, উৎসবদা খুব ছোট ছোট করে ধরিয়ে দিত। সেটা সহজ ভাবেই গিয়েছে। স্বাধীনতা দিয়েছে কাজের। দুটো ভাষায় একসঙ্গে কাজ করেছি। সেটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।

এখানে ফ্রন্টাল নুডিটি আছে?

উৎসব: নাহ্। আমি এই ধারার সিন শুট করতে পারি সেটা দেখাতে চাইনি। তবে দেখলাম, ইন্টিমেট সিন শুটের দিন সবাই কেমন চুপসে আছে। শ্মশানের নীরবতা যেন! কলকাতায় লাভ মেকিং সিনে বলে, তোমরা কর, বলে শুট হয়। এ আবার কী! বলতে পারে না এই সিনে ওর প্যান্টি খোলা হবে। লিখবে, কিন্তু শুটের সময় বলতে পারবে না। বাঙালি আজও সেক্স নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করবে না। অথচ দেখার জন্য হামলে পড়ে!

সিনটা দেখে আপনার কী মনে হয়েছে?

চিত্রাঙ্গদা: মনে হচ্ছে ওটা বিয়াস। ছবিতে গালি দিলে পরে অনেক সময় মনে হয়েছে, ইস্স্, আমি এটা করলাম! এখানে মনে হয়নি, এটা আমি করলাম!

এখন বিকিনি শুট নিয়ে খুব চর্চা হচ্ছে। আপনার কী মনে হয়?

চিত্রাঙ্গদা: আমি রিয়েল লাইফে ঢাকা জামা পড়ি আবার শর্টস পরি। এতটাই ছোট যে মা বলে, নেই-নেই জামা। এ বার গোয়ায় গেলে তো আমি বিকিনি পরব। ক্লিভেজ আছে। দেখা যাবে। এমন তো নয় আজ গজাল, তাই খোলামেলা জামা পরলাম! এগুলো আলাদা করে কিছু না। সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ার বাড়াবার জন্য কিছু করি না। তবে দেখেছি, সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনই ছবি দিলাম কিছু সে রকম পোস্ট এল না, একটু অন্য পোশাক পরে দিলাম তো কমেন্ট আসতে লাগল... এ সবে গুরুত্ব না দিয়ে কাজটাকে মর্যাদা দিতে চাই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy