ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।
আজকাল বালিগঞ্জ ফাঁড়ি ছেড়ে সাদার্ন অ্যাভেনিউতে নাকি বেশি দেখা যাচ্ছে আপনাকে?
(হেসে) সাদার্ন অ্যাভেনিউ?
মানে ‘চতুষ্কোণ’য়ের পরে প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়ের বালিগঞ্জ ফাঁড়ির বাড়ি ছেড়ে আপনি নাকি বেশি সময় কাটাচ্ছেন সাদার্ন অ্যাভেনিউয়ে চিরঞ্জিত চক্রবর্তীর ফ্ল্যাটে?
হা হা হা। সাদার্ন অ্যাভেনিউয়ের ফ্ল্যাটে আমি একবারই গিয়েছিলাম। দীপকদাকে স্ক্রিপ্ট শোনাতে। সাদার্ন অ্যাভেনিউ ভাল জায়গা। প্রচুর গাছপালা। লেক কালীবাড়ি। আরামসে গাড়ি চালানো যায়...
বালিগঞ্জ ফাঁড়িতে ট্র্যাফিক জ্যাম?
(হেসে) বালিগঞ্জ ফাঁড়ি জীবনের শাশ্বত এক সত্য। আমার জীবনের খুব ইম্পর্ট্যান্ট ক্রসিংয়ের নাম বালিগঞ্জ ফাঁড়ি।
তবে হ্যাঁ, কয়েক মাস আগে আনন্দplus-য়ে দেখেছিলাম একটা আর্টিকল‘ভেন্টিলেটরে টলিউড’। আমি খুশি ‘চতুষ্কোণ’ ইন্ডাস্ট্রিকে ভেন্টিলেটর থেকে বের করতে পেরেছে। আগামী কয়েক মাসে আরও কয়েকটা ভাল ছবি হলে আইসিইউ থেকে বের করা যাবে ইন্ডাস্ট্রিকে। আর ‘চতুষ্কোণ’য়ে দীপকদা ইজ ফ্যান্ট্যাস্টিক। তবে দীপকদা যে এই চরিত্রটা ভাল করতে পারবে, সেটা আমাকে প্রথম বলেছিল বুম্বাদা।
কিন্তু ট্যুইটারে দেখলাম ‘চতুষ্কোণ’য়ের রিলিজের দিন শুধু ‘বেস্ট অব লাক’ মেসেজ পাঠিয়েছেন প্রসেনজিত্। আর কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের পরের ছবির ট্রেলর দেখে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
হা হা হা। দ্যাট ইজ আ গুড অবজার্ভেশন। আসলে ভীষণ নটি অবজার্ভেশন। আমারও যে চোখে পড়েনি তা নয়। (হেসে) হয়তো ব্যস্ত ছিলেন বলে দেখতে পারেননি।
লোকে বলছে পুজোয় ঠাকুর দেখা, খাওয়াদাওয়া, আড্ডা ছাড়া বাঙালির চতুর্থ কোণ ছিল আপনার ছবি।
থ্যাঙ্কস সো মাচ। এই বক্স অফিস সাফল্য পেয়ে আমি অভিভূত। লোকে যে ‘ব্যাং ব্যাং’ কি ‘হায়দার’ ছেড়ে বাংলা ছবি দেখছে এর থেকে ভাল খবর আর কী হতে পারে বলুন?
‘যোদ্ধা’ আর দেবকেও তো হারিয়ে দিয়েছে ‘চতুষ্কোণ’?
‘যোদ্ধা’র সঙ্গে যদিও বেশি কম্পিটিশন ছিল ‘বচ্চন’য়ের। আর যোদ্ধা যে সংখ্যক হলে রিলিজ করেছে, তার ওয়ান ফিফথ হলে রিলিজ করেছে ‘চতুষ্কোণ’। তাই অ্যাবসোলিউট টার্মসে দুটোর মধ্যে তুলনা চলে না। তবে হ্যাঁ, পার্সেন্টেজওয়াইজ ‘চতুষ্কোণ’ নিশ্চয়ই এগিয়ে ‘যোদ্ধা’র থেকে। তবে এখানেই থেমে থাকলে হবে না। এই মোমেন্টামটা ধরে রাখতে হবে। এবং আমি বিশ্বাস করি মৌলিক ভাল বাংলা ছবি বানালে দর্শক দেখতে আসবেই।
মৌলিক, দক্ষিণী ছবির রিমেক নয়?
হ্যাঁ মৌলিক। দক্ষিণী ছবির রিমেক ইন্ডাস্ট্রিকে কেবল পিছিয়ে দিচ্ছে। এটা আমার ব্যক্তিগত ধারণা। আমাদের এখানে এত ভাল ভাল টেকনিশিয়ান আছে। এত ভাল ভাল অভিনেতা আছে, তাদের নিয়ে মৌলিক ছবি ভাবা যায় না এটা আমি মানি না। আর ‘চতুষ্কোণ’য়ের সবচেয়ে ভাল দিক হল ‘ভূতের ভবিষ্যত্’য়ের পর একই সঙ্গে সমালোচক এবং বক্স অফিস সবাইকে খুশি করতে পেরেছে এই ছবি।
শুধু ‘ভূতের ভবিষ্যত্’য়ের নাম বললেন, ‘শব্দ’ বললেন না?
‘শব্দ’ অবশ্যই দারুণ। যে তিনটে ছবি দেখে আমার মনে হয়েছিল ডিরেক্টর হিসেবে আমার নাম থাকলে আমি গর্বিত বোধ করতাম সেই তিনটে ছবি হল ‘ভূতের ভবিষ্যত্’ , ‘শব্দ’ আর ‘মেঘে ঢাকা তারা’। কিন্তু ‘শব্দ’র পাল্লাটা বোধহয় একটু ‘নিশ’ দর্শকের দিকে ভারী ছিল।
‘জাতিস্মর’ বক্স অফিস সাফল্য পায়নি। তার পর এই সাফল্য মাস্ট বি ভেরি স্যাটিসফায়িং।
ইট ইজ ভেরি স্যাটিসফায়িং।
তবে ‘জাতিস্মর’ যদি ডিসেম্বরে রিলিজ হত, তা হলে ইতিহাসটা অন্য রকম হত।
মানে ‘চাঁদের পাহাড়’য়ের সঙ্গে রিলিজ হলে অন্য রকম হত বলছেন?
হ্যাঁ। আর এটা আমি কেন, আপনি ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে কথা বলবেন। তারাও আপনাকে একই কথা বলবে।
‘চতুষ্কোণ’য়ের সাফল্যের পর কি সেই ‘২২ শে শ্রাবণ’য়ের সুখস্মৃতিগুলো মনে পড়ে যাচ্ছে?
ইয়েস।
‘২২ শে শ্রাবণ’য়ের পরপরই কিন্তু আপনার গার্লফ্রেন্ডদের স্ট্রাইক রেটটা বেড়ে গিয়েছিল?
গার্লস-বয়েজ-মেন-ওমেন এদের থেকে আমি যাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসি সেটা সিনেমা।
ভীষণ ক্লিশে উত্তর..
না সত্যি। ‘চতুষ্কোণ’য়ের সাফল্যের পর আমার ওয়ার্কিং আওয়ারস বেড়ে গিয়েছে। পুরো পুজো ছবিটা প্রোমোট করেছি। শেষমেশ লোকেরা বলেছে, সৃজিতদা এ বার ছেড়ে দাও, ছবি হিট হয়ে গিয়েছে।
এ বার ফিল্ম নিয়ে আলোচনা করি।
শিওর।
দর্শকদের একাংশ মনে করছে, চিরঞ্জিত-অপর্ণা সেনের প্রেমটা আর একটু দেখাতে পারতেন আপনি।
হা হা হা। একটা ট্রিভিয়া কি জানেন?
কী?
‘সতী’ ছবির সময় সত্যি কিন্তু অপর্ণা সেন আর চিরঞ্জিতের বিস্তর ঝামেলা হয়েছিল। দু’জনেই দু’জনের সঙ্গে বহু দিন কথা বলত না।
তাই নাকি?
ইয়েস, ‘চতুষ্কোণ’য়ের সেটেও স্ট্রং আন্ডারকারেন্ট ছিল। কিন্তু দু’জনেই এত ব্রিলিয়ান্ট প্রফেশনালস. তার রেশ তারা পড়তে দেয়নি ছবিতে।
আর পরম?
পরমের জীবনের শ্রেষ্ঠ চরিত্র তো এটা। রোল অব হিজ লাইফ। এই রোলটার পর পরম অন্য জায়গায় চলে গেল অভিনেতা হিসেবে।
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের দেড় মিনিটের অ্যাপিয়ারেন্স নিয়েও প্রচুর হইচই....
কৌশিকদা রিলিজের পর আমাকে ওর ফোনটা দিয়ে দিতে চেয়েছে। কৌশিকদার বক্তব্য, দেড় মিনিটের রোলের জন্য এত এসএমএস নাকি কৌশিকদা কোনও দিন পায়নি। আমি তো পরমের রোলটা অফার করেছিলাম কৌশিকদাকে।
ঋতুপর্ণ ঘোষ যদি পরমের রোলটা করতেন, তা হলে কি আলাদা হত ছবিটা?
পরম ব্রিলিয়ান্ট। কিন্তু ছবির শেষে অপর্ণা সেনের একটা ডায়লগ আছে দীপকদার প্রতি, ‘তুমি থাকলে অন্য রকম হত জীবনটা।’ ঋতুদার ক্ষেত্রেও আমি একই কথা বলব। রিলিজের পর খুব মিস করেছি ঋতুদাকে। যখন ছবি দেখে স্ট্যান্ডিং ওভেশন দিচ্ছে, খালি মনে হচ্ছে ঋতুদা পাশে দাঁড়িয়ে।
‘চতুষ্কোণ’য়ে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়
আচ্ছা বহু দর্শকের প্রশ্ন, ফিল্মে অপর্ণা সেনের যে বাড়িটা দেখানো হয়েছে সেটা ওঁর নিজের সিলভার স্প্রিংয়ের ফ্ল্যাট। তাই কি?
না, ওটা রিনাদির সিলভার স্প্রিং-য়ের ফ্ল্যাট নয়। কিন্তু চার জনের ক্ষেত্রেইরিনাদি, দীপকদা, গৌতমদা আর পরম আমরা ওদের বাড়িতে শ্যুটিং করিনি কিন্তু ওদের নিজেদের বাড়ির নানা এলিমেন্টকে রেখেছি যাতে ফিল্মে মনে হয় ওটা ওদেরই বাড়ি। তাই হয়তো দর্শকের মনে এই প্রশ্নটা এসেছে।
ছবিতে চিরঞ্জিতের সিগারেটের যে গল্পটা দেখালেন, সেটা কি ইন্সপায়ার্ড বাই রিয়েল লাইফ?
ইয়েস, অ্যাবসোলিউটলি। যখন সিগারেট খেতাম তখন আমার সঙ্গেও ও রকম হয়েছে। রাতে হঠাত্ দেখি সিগারেট শেষ। ছবির গল্পের মতো অত মর্মান্তিক পরিণতি হয়তো আমার হয়নি। না হলে ইন্টারভিউটা দিতে পারতাম না। কিন্তু সব জায়গা খুঁজে শেষে কেওড়াতলা শ্মশানের সামনের সিগারেটের দোকান থেকে সিগারেট কিনেছি। সেই সময়ই গল্পটা আমার মাথায় আসে।
খুব চেনাশোনা জায়গাতেও শ্যুটিং করেছেন দেখলাম ওই সিনটার। একদম স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনের সিগারেটের দোকানটায়?
হা হা হা। আমাদের ওই দৃশ্যটার শ্যুটিং করার কথা ছিল হাজরা মোড়ে। কিন্তু সেখানে একটা ঝামেলা বাধে। তাই তড়িঘড়ি করে আমরা গল্ফ গার্ডেনে শ্যুটিং করার ডিসিশন নিই। আর গল্ফ গার্ডেনের ওই পাড়াটা তো আপনিও ভাল চেনেন।
‘চেনাশোনা’ মানুষরা ‘চতুষ্কোণ’ দেখে কি এসএমএস করল আপনাকে?
না। বেশ কিছু ‘চেনাশোনা’ মানুষের এসএমএস, বিবিএম, হোয়াটসঅ্যাপের অপেক্ষায় আছি। (হাসি)
‘২২ শে শ্রাবণ’য়ের পর এই ছবিতেও দেখলাম সত্যজিত্ রায়ের বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়িটা দেখালেন?
হ্যাঁ, ওটা আমার ট্রিবিউট। ওটা ছবির সিনেমাটোগ্রাফার সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের ট্রিবিউটও বটে। আমরা রুফটপ রেস্তোরাঁ থেকে ওই বিখ্যাত বারান্দার শট-টা নিয়েছিলাম। বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়িটা আমার লাকি ম্যাসকট।
ছবিতে পায়েল সরকারের ক্লিভেজ নিয়েও আলোচনা চার দিকে...
হ্যাঁ, মানে মদ খেলে আঁচল তো পড়ে যেতেই পারে। তাই ঠিক আছে সেটা। তবে আপনি আর একটা খবর কি জানেন?
কী?
‘বসন্ত এসে গেছে’ গানটা আমার নিজের কোরিওগ্রাফ করা। ওই পিয়ানোর কাছে দাঁড়িয়ে দুলে দুলে গানটা আমি দেখিয়েছিলাম পায়েলকে। আমার কিছু অ্যাসিস্ট্যান্ট সেটা মোবাইলে তুলেও রেখেছে। বলেছে ‘লাস্যময়ী সৃজিত’ নাম দিয়ে চড়া দামে ভিডিয়োটা তারা বিক্রি করবে (হাসি)।
শোনা যায় আপনার ছবির মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবে যার নামই যাক না কেন, আসলে ছবির মিউজিক ডিরেক্টরের নাম সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
মিউজিক ডিরেক্টর বলাটা বাড়াবাড়ি। তবে আই এগ্রিআমার ছবির গান কী হবে, কী অ্যারেঞ্জমেন্টস হবে, কী ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যবহার হবে সব কিছুই আমি ডিসাইড করি।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ব্যাপারে এটাও শোনা যায়, উনি যে কোনও ছবির প্যাকেজিংটা দারুণ করেন।
দেখুন, প্যাকেজিংটা তো আমার ব্যক্তিজীবনেও আছে। সিনেমাটা তো তারই প্রতিফলন।
ব্যক্তিজীবনে কী কী জিনিসের প্যাকেজিং আছে?
একটা আরবান স্মার্টনেস, সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ, সেন্স অব হিউমার।
মেয়েরা কোনটা বেশি ভালবাসে?
সেটা তো আপনাকে মেয়েদেরই জিজ্ঞেস করতে হবে (হাসি)।
পরের ছবির আগে কি আপনার সিঙ্গল স্টেটাসটা চেঞ্জ হবে?
এখন আমার ফার্টাইল অবস্থা। অন্তঃসত্ত্বা স্টেজ। এটুকুই বলব, সংসার সুখের হয় সিনেমার গুণে।
মানে এই মুহূর্তে ইউ আর নট ইন আ রিলেশন? ইন্ডাস্ট্রির ভিতরে কেউ না?
না।
বাইরে?
ইন্ডাস্ট্রির ভিতরে না হলে তো বাইরেই হবে ভাই (হাসি)।
আপনার আগের দু’টো ছবি ‘জাতিস্মর’ আর ‘মিশর রহস্য’র সময় ছবিতে এবং ব্যক্তিগত জীবনে স্বস্তিকা ছিলেন। ‘চতুষ্কোণ’য়ে নয়। এই থাকা না-থাকাটা কোনও ভাবে আপনার থট প্রসেসকে চেঞ্জ করে?
দেখুন, ব্যক্তিগত সম্পর্কের রিফ্লেকশন কোনও দিনই আমার সিনেমার ক্ষেত্রে হয়নি। না হলে আমার পরের ছবি ‘নির্বাক’য়ের সময় আমি অঞ্জন দত্তর কাছে যেতাম না। ওঁর সঙ্গে তো অনেক ঝামেলা হয়েছে। খারাপ লাগাগুলো তো বদলে যায় না। কিন্তু সিনেমার ক্ষেত্রে ও সব ব্যক্তিগত খারাপ লাগা, ভাল লাগা আমি গায়ে মাখি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy