Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Entertainment News

দেব কি ভাল বাংলা বলেন? উত্তরে সহ-অভিনেতা অর্ণ বললেন...

নাটকের মঞ্চে তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। কিন্তু সিনেমার ক্ষেত্রে তিনি নতুন। ‘কবীর’-এর পর দেবের প্রযোজনা ‘হইচই আনলিমিটেড’-এ ফের দেখা যাবে তাঁকে। তিনি অর্থাত্ অর্ণ মুখোপাধ্যায়।

দেব। ইনসেটে অর্ণ।

দেব। ইনসেটে অর্ণ।

স্বরলিপি ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৮ ১৪:১৬
Share: Save:

নাটকের মঞ্চে তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। কিন্তু সিনেমার ক্ষেত্রে তিনি নতুন। ‘কবীর’-এর পর দেবের প্রযোজনা ‘হইচই আনলিমিটেড’-এ ফের দেখা যাবে তাঁকে। তিনি অর্থাত্ অর্ণ মুখোপাধ্যায়। শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা, নায়িকাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব, নাটক— সব কিছু নিয়ে আড্ডায় ধরা দিলেন অর্ণ।

প্রথমে ‘কবীর’, তার পর ‘হইচই আনলিমিটেড’— এটা আপনার দ্বিতীয় ছবি?
হ্যাঁ। রিলিজ দেখলে সেটাই। তবে আরও একটা ছবির কথা বলব।

কোনটা?
‘হীরালাল’। অরুণ রায়ের ছবি। ‘কবীর’ হওয়ার আগে কথা ছিল ওটার। হয়েছে। নভেম্বরে হয়তো রিলিজ। শুটিং শুরু হয়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

আপনার বড় হওয়া তো পুরোপুরি নাটকের আবহে?
একদম। ‘নটধা’। আমাদের দল। প্রায় ৪৫ বছর বয়স এই দলের। সেখানেই চর্চা শুরু করেছি। এখনও সেখানে করছি। প্রায় বছর দশেক হল নির্দেশনাও দিচ্ছি। থিয়েটারই সিরিয়াসলি করি আমি। অনিকেতদা (পরিচালক) থিয়েটার দেখে ডেকেছিলেন। এর আগেও বলেছিলেন অনেকে। কিন্তু সামহাউ হয়নি।

নাটকে অভিনয় করেন বলে, সিনেমা করতে চাননি?
না। আমার কোনওদিনই কোনও বিরোধ ছিল না। তবে ছোটপর্দা করব না, তখন থেকেই ঠিক ছিল। বড়পর্দায় কাজ আসলে করব। সব কিছুই অর্গানিক্যালি হয়েছে। কোনও কিছু প্ল্যান করা ছিল না।

আরও পড়ুন, ‘অন্য হিরোরাও তো প্রোডিউসার হয়েছেন, ডিফারেন্স দেখতে পাচ্ছেন?’ বলছেন দেব

আপনার পড়াশোনাও কি নাটক নিয়েই?
আমার স্কুল হাওড়ার বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশন। তার পর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক নিয়ে পড়েছি।

বরাবরই কলা বিভাগের ছাত্র ছিলেন?
না। ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলাম। রেজাল্টও মন্দ করতাম না। কিন্তু যা হয়... থিয়েটার পরিবারেই। বাবা শিব মুখোপাধ্যায়ের দল। সেখান থেকেই থিয়েটারের মানুষগুলোর সংস্পর্শে আসা। স্কুলে পড়তাম যখন ক্রিকেট, ফুটবল দুটোই খেলতাম। ওটাই প্রফেশনালি করব ভেবেছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়েও ক্রিকেট খেলেছি। ক্লাস ১১-১২-এ নাটকের ভুত মাথায় ঢুকেছিল।


‘হইচই আনলিমিটেড’-এর পোস্টারে চার অভিনেতা।

কোনও বিশেষ নাটক দেখে ভুতটা আরও পাকাপাকি বসত শুরু করল?
হ্যাঁ, এটা বলতে পারেন। ‘নটধা’ মহাভারত করেছিল। বিভাস চক্রবর্তী, মেঘনাদ ভট্টাচার্যরা পাট করেছিলেন। ওটা দেখে মনে হয়েছিল জীবনের থেকে বড় কিছু ঘটতে দেখছি। তার পর মনে হল, জীবনে কিছু করলে এটাই করব। ২০০৫-০৬ থেকে ডিসাইড করি সর্বক্ষণের থিয়েটার কর্মী হব। কিন্তু যা হয়, থিয়েটারে পয়সা কম। নানা রকম প্রজেক্টের কাজ করতে হত। দৌড়ে বেড়াতম। ওয়ার্কশপ করতাম ভাত জোটাতে...।

সেখান থেকে সুপারস্টার দেবের প্রোডাকশনে কাজ। আচ্ছা, দেবের সঙ্গে প্রথম দেখাটা কেমন ছিল?
খুবই ফর্মাল ছিল ফার্স্ট মিটিং। আমি ভেবেছিলাম একজন সুপারস্টার, একজন এমপি। কিন্তু সেই ব্যাগেজটা তাঁর কোনওদিনই ছিল না। দীপক অধিকারীর সঙ্গেই দেখা করেছিলাম। আর ‘হইচই’তে তো বুঝতেই পারিনি। খুবই সাপোর্ট করেছেন। শুটিংয়ের মাঝে নাটকের শো থাকলে সেখানেও হেল্প করেছেন।

আরও পড়ুন, দেবী-র মিসির আলি চ্যালেঞ্জিং চরিত্র, বললেন চঞ্চল়

‘হইচই’তে অর্ণ কেমন?
আমি থিয়েটারে রাজপুরুষের চরিত্র করে বড় হয়েছি। সেখানে ‘হইচই’য়ে যে চরিত্র করেছি তা কখনও করব ভাবিনি। অনিকেতদাও বলেছিলেন, তুই কি করবি? এক ব্রিটিশ অভিনেতা বলেছিলেন, অভিনেতার কোনও জাত থাকা উচিত নয়। আমার সেটা নেই। কিন্তু তবুও ভাবছিলাম, এই চরিত্রটা পারব তো?দেবই ইনসিস্ট করেন, তুই কর এটা। অনিকেতদাকেও বলেন, ওকেই দাও। গ্যারাজ মেকানিকের পাট। খুবই ইনকনফিডেন্ট একটা লোক। কথা বলতে গিয়ে তুতলে যায়। চ্যালেঞ্জিং চরিত্র। পাশাপাশি তিনজন দানবের মতো অভিনেতা অভিনয় করেছেন। আমি থিয়েটারে দীর্ঘদিন অভিনয় করলেও এই ক্রাফ্টটা তো সম্পূর্ণ আলাদা। চ্যালেঞ্জ নিয়েছি, দেখা যাক কী হয়।

শুটিংয়েও নিশ্চয়ই খুব ‘হইচই’ করেছেন?
সে আর বলতে! প্রথমে দু’জন অভিনেত্রীর করার কথা ছিল ছবিটা। কিন্তু শুটিংয়ের দু’দিন আগে তাঁরা বেঁকে বসলেন। সেটা থেকে হইচই স্টার্ট। তার পর শুটিংয়ে খরাজ মুখোপাধ্যায় এবং শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয় করা...। সেটা যেমন কঠিন, অফস্ক্রিন তাঁদের সঙ্গে থাকাটাও একটা এক্সপিরিয়েন্স। বোমার মতো একটা এনার্জি লেভেল নিয়ে এই বয়সেও ঘোরেন ওঁরা, সেটা শেখার। এতদিন তো দূর থেকে অভিনয় দেখেছি। কখনও ভাল লেগেছে, কখনও বা ভাল লাগেনি। কিন্তু সঙ্গে থেকে দেখলাম, ওঁদের এখনও অভিনয়ের যে প্যাশন সেটা শেখার। তার সঙ্গে দেবদা তো আছেনই। পিকনিকের মোডে শুট করেছি আমরা। এত বড় মাপের ছবি ওই সরকার কখনও দেখেনি। ধরুন, পুলিশের কস্টিউম। ড্রেস আসছে তো বেল্ট আসছে না। টুপি আসছে তো লাঠি আসছে না। সেখানেও দেবদাকে ধোনির মতো মাথা ঠাণ্ডা রাখতে দেখেছি।


শুটিংয়ে অর্ণ এবং শাশ্বত।

নায়িকাদের সঙ্গে কতটা বন্ধুত্ব হল?
দেখুন, এই ছবিতে আমার বউয়ের অভিনয় করেছে রোজা। সেটা প্রিয়ঙ্কার করার কথা ছিল। ওর সঙ্গে আলাপ ছিল। কথা হয়েছিল। থিয়েটার করে বড় হওয়া তো, সব সময় মনে হয় সিনেমায় করতে পারব না। কারণ একটা নাটক আমি ছ’মাস ধরে করি। এই সুযোগ ছবিতে নেই। আমি রিহার্সাল রুমে ডেভলপ করতে অভ্যস্ত...। এ বার আমার যে বউ তার সঙ্গে ঝগড়া, মারামারির সিন। কিন্তু তাকে আমি চিনি না। এটা আমার কাছে রাতে ঘুম না হওয়ার মতো। সে এল, দেখলাম খুবই স্বাভাবিক। দিব্যি সহজ করে দিল রোজা, যেন অনেক দিনের পরিচয়। খুব ভাল করে শুট করলাম, দর্শকের কেমন লাগবে জানি না। বাকি নায়িকাদের সঙ্গে ফর্মাল সম্পর্ক।

শুটিংয়ে দেব অভিনয় নিয়ে পরামর্শ দিতেন?
দেবকে দু’একটা জায়গায় জিজ্ঞেস করেছি। ক্রাফ্টের জায়গা থেকে তো এটা সম্পূর্ণ আলাদা। সেখানে গন্ডোগোল হচ্ছিল। অপুদার কাছে ধমক খেয়েছি। খরাজদা পরামর্শ দিয়েছেন। দেবও পরামর্শ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন, এত ছোট্ট জায়গা, কে কী বলছেন জানি তো, বিস্ফোরক অরিন্দম

দেবের অভিনয় আপনি পছন্দ করেন?
দেবদার সব ছবি যে দেখেছি, এমনটা নয়। ‘চ্যালেঞ্জ’, ‘জুলফিকার’ দেখেছি। একটা কথা বলব, দেব যখন স্ক্রিনে আসেন তখন অন্য কারও দিকে চোখ যায় না। সেটা একটা বড় ব্যাপার। ‘ধুমকেতু’ এখনও রিলিজ হয় না। উনি আমাকে কিছু কিছু জিনিস দেখাচ্ছিলেন, আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি। ছবিটা রিলিজ হলে অভিনেতা দেবকে লোকে বুঝতে পারবেন।

সে তো বোঝা গেল। কিন্তু দেবের অভিনয় আপনার পছন্দের?
(হাসি) লোকে বলে দেব অভিনেতা নয়, আবার কেউ দেবের ফ্যান। আমি দু’টোর কোনওটাই নই। মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি।


নাচের দৃশ্যে শাশ্বত, দেব অবং অর্ণ।

দেবের সঙ্গে কাজ করার আগেও এটাই বলতেন?
হুম, আগেও আমি এটাই বলতাম। কারণ কর্মাশিয়াল ছবি করে যাঁরা নাম করেছেন, তাঁদের যে স্কিলটা আছে সেটা যাঁরা ইগনোর করেন, আমি সেই দলে পড়ি না। কারণ ‘সুজন মাঝি রে’ নাচতে গিয়ে আমি বুঝেছি কাজটা খুব সহজ নয়। আজ এই হাউজে কাজ করছি বলে, দেব ভাল বাংলা বলতে পারেন, বা পারেন না বলব, তেমনটা নয়...।

দেব কি ভাল বাংলা বলেন?
এ বার আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে... (হাসি)

আরও পড়ুন, ‘কিশোর কুমার জুনিয়র’-এ আমার একটা ভেতরের লড়াই আছে: প্রসেনজিৎ

আপনিই তো বললেন, তাই জানতে চাইছি...
আমরা, মানে থিয়েটার করে যে স্পিচ ট্রেনিং নিয়েছি, তিনটে ছবি করলাম, তার একটাতেও সেটা অ্যাপ্লাই করতে পারিনি। ফলে আমার মনে হচ্ছে এটা বোধহয় বাংলা ছবির জন্য খুব দরকারি নয়। মোটামোটি বাংলা বলতে পারলেই তো কাজ চলে যাচ্ছে...। দেব সেটা পারেন। রবীন্দ্রনাথ বা জীবনানন্দ পড়লে যে বাংলা হয়, সে বাংলা নয়। আমি একটা কথা বলতে পারি, দেবদার সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করে মনে হয়েছে এই সময়ে দাঁড়িয়ে নতুন কিছু করার ইচ্ছে রয়েছে ওঁর। জীবনে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যাওয়া নায়কদের মতো ভাবনা দেবের নয়। দেব মনে করেন, অভিনেতা হিসেবে সমাজে কিছু কন্ট্রিবিউট করার দায়িত্ব ওঁর আছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE