তারানাথ বলে ওঠেন, ''মন দিয়ে শোনো, মন খারাপের গল্প।''
১৯৩৯। কলকাতার এক চায়ের দোকান। পা দোলাতে দোলাতে হুল্লোড় করার সময় একেবারেই নয়। উথালপাতাল করা সেই সময়ে সকলেরই কান তখন রেডিওর দিকে। খবর আসে, হিটলারের সেনাবাহিনী পোল্যান্ড দখল করে ফেলেছে।চায়ের দোকানে আড্ডারত দুই বন্ধুর উত্কণ্ঠা, এক দিকে দুর্ভিক্ষ, আর এক দিকে যুদ্ধ। অর্থাত্ মৃত্যুই একমাত্র রিয়্যালিটি। এই দশা থেকে মুক্তির কি কোনও উপায় নেই? আছে অবশ্যই আছে। একজনই বাঁচাতে পারেন। তিনি তারানাথ তান্ত্রিক।
দুই বন্ধু চলেছেন তারানাথের সঙ্গে দেখা করতে। এক বন্ধুর আবার তন্ত্রসাধনার মতো ‘বোগাস’ জিনিসপত্র একেবারেই পোষায় না। কিন্তু অপর জন নাছোড়বান্দা। দু’জনে এসে দাঁডালেন তারানাথের দুয়োরে। সাইনবোর্ডে লেখা, তারানাথ জ্যোতির্বিদ্যাবিনোদ। হাত দেখানো, সঙ্গে কোষ্ঠী বিচার করা হয়। গ্রহ শান্তির কবচ তন্ত্রমতে প্রস্তুতও করেন তারানাথ। এমনকি এ হেন তন্ত্রসাধকের কাছে বড় বড় রাজা-মহারাজাদের সার্টিফিকেট অবধি আছে। তবে খরচা নিমিত্ত মাত্র। বড়জোড় একটা সিগারেট চেয়ে বসতে পারেন তান্ত্রিক মহাশয়। বদলে গালভরা গল্প। গল্পের পর গল্প। লোকটার বড় অদ্ভুত ইতিহাস। আর তাঁর সঙ্গে থাকেন তাঁর কন্যা চারী।
''গল্প নয়। সত্যি কথা। আর সেটা মারাত্নক।'' ওই দুই বন্ধুকে বলেন তারানাথ। একটা সিগারেটেরও আবদার জানান পাঁচতারা যুক্ত তান্ত্রিক। আর তার পরেই অলৌকিক আর অতিলৌকিক দুনিয়ায় ঢুকে পড়ে তারানাথ বলে ওঠেন, ''মন দিয়ে শোনো, মন খারাপের গল্প।''
আরও পড়ুন, ‘স্বাধীন মনে হচ্ছে নিজেকে’, বললেন আয়ুষ্মান খুরানার ক্যানসার আক্রান্ত স্ত্রী তাহিরা
হইচই স্ট্রিমিং সাইটে গতকাল থেকেই শুরু হয়েছে অরিজিনাল সিরিজ তারানাথ তান্ত্রিক। পরিচালনা করেছেন কিউ। বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর পুত্র তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আটটি ছোট গল্প নিয়ে তারানাথ তান্ত্রিকের মশলা তৈরি করেছেন কিউ এবং তাঁর রিসার্চার সুরজিত সেন। এই আটটি ছোট গল্পের দু’টি বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এবং বাকি ছয়টি তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তারানাথের যুবক বয়সের চরিত্রটিতে অভিনয় করেছেন টালিগঞ্জের চেনা মুখ কৌশিক রায় এবং বয়সকালের চরিত্রে রয়েছেন অভিনেতা এবং লেখক জয়ন্ত কৃপালনি। এ ছাড়াও এই সিরিজে রয়েছেন জয়রাজ ভট্টাচার্য, কমলিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্বেতা চৌধুরী, উমা বন্দ্যোপাধ্যায়, গীতিঞ্জলি ড্যাং, সত্রাজিত সরকার এবং আরও অনেকে।
অভিনেতা এবং পরিচালক।
চার বছর ধরে এই সিরিজের জন্য রিসার্চ করছেন কিউ। তাঁর কথায়, ''সুরজিতদা আমাকে তারানাথের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। প্রথমে আমরা তারানাথ তান্ত্রিককে নিয়ে একটা ইন্সটলেশন আর্ট করি। গত বছর একটা গ্রাফিক নভেলও বের করি। কিন্তু এরকম একটা বিষয় নিয়ে যাতে ছবি করা যায়, সেই চিন্তাভাবনা সব সময়েই ছিল। কিন্তু কে এই ধরনের ছবি করতে টাকা দেবে? ঠিক তখনই হইচই-এর সঙ্গে কথা হয়।''
আরও পড়ুন, যৌন হেনস্থা হয়েছিল, বুঝতেই পারিনি, স্বীকারোক্তি স্বরার
সাদা কালো এই সিরিজের মোট তিনটে এপিসোড।বহু দিন পর আবার স্ক্রিনে জয়ন্ত কৃপালনি। জয়ন্তকে কী ভাবে পেলেন কিউ? পরিচালক বললেন, ''জয়ন্তের সঙ্গে আমার ২২ বছরের সম্পর্ক। ও আমার মেন্টর, বন্ধু। বহু দিন ধরেই ভাবছিলাম ওঁর সঙ্গে কাজ করব। কিন্তু কিছু পাচ্ছিলাম না। আর তারানাথের চরিত্রটার জন্য একজন সেক্সি লোকের দরকার ছিল। জয়ন্ত সেই জায়গায় এক্কেবারে উপযুক্ত। কম বয়সের তারানাথ অর্থাত্ কৌশিকও ততোধিক সেক্সি।''
আর সেই তারানেথের গল্পে দুই বন্ধু এতটাই মশগুল হয়ে গিয়েছে যে, বাড়ি যাওয়ার আর নাম নেই। তারানাথকে যে ‘বোগাস’ বলে এল, সেই আবার যাওয়ার বেলা বলে ওঠে, ''আচ্ছা! আবার আমরা কবে আসব?''
(মুভি ট্রেলার থেকে টাটকা মুভি রিভিউ - রুপোলি পর্দার সব খবর জানতে পড়ুন আমাদের বিনোদন বিভাগ।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy