Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Grammy 2024

গ্র্যামির মঞ্চে টেলরের নজির, পুরস্কার বড় না কি শিল্প? মতামত জানালেন বাংলার শিল্পীরা

‘অ্যালবাম অফ দ্য ইয়ার’-এর গ্র্যামি এই প্রথম কেউ চতুর্থ বার জিতলেন। শিল্পীকে পুরস্কার কতটা অনুপ্রাণিত করে? টেলর সুইফ্‌টের সাফল্য নিয়ে মতামত দিলেন অনুপম রায় এবং লগ্নজিতা চক্রবর্তী।

Bengali singer Anupam Roy and Lagnajita Chakraborty reacts to Taylor Swift’s Grammy win

(বাঁ দিক থেকে) অনুপম রায়, টেলর সুইফ্‌ট এবং লগ্নজিতা চক্রবর্তী। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:৪০
Share: Save:

সম্প্রতি ৬৬তম গ্র্যামির মঞ্চে নয়া নজির সৃষ্টি করেছেন টেলর সুইফ‌্‌ট। গায়িকার ‘মিডনাইট্‌স’ অ্যালবামটি জিতে নিয়েছে ‘অ্যালবাম অফ দ্য ইয়ার’ শিরোপা। এই নিয়ে কেরিয়ারে চার বার তিনি এই পুরস্কার পেয়ে নজির গড়েছেন। এর আগে ফ্র্যাঙ্ক সিনাত্রা, পল সাইমন এবং স্টিভি ওয়ান্ডারের মতো শিল্পীরা তিন বার ‘অ্যালবাম অফ দ্য ইয়ার’ খেতাব জিতেছিলেন। কিন্তু এ বার তাঁদের নজিরকে টপকে গেলেন টেলর।

গ্র্যামির মঞ্চে পুরস্কৃত হওয়া যে কোনও সঙ্গীতশিল্পীর কাছে সম্মানের। বিগত কয়েক বছরে দেখা যাচ্ছে, গ্র্যামি ‘পপুলার’ শিল্পীদের পাশাপাশি সঙ্গীতের অপেক্ষাকৃত কম জনপ্রিয় ঘরানার উপরেও আলোকপাত করতে চাইছে। কিন্তু এই ধরনের পুরস্কার কি স্বাধীন শিল্পীকে ভবিষ্যতে আরও ভাল কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে? টেলরের গ্র্যামি জয় নিয়ে এক দিকে শুভেচ্ছাবার্তা দিতে চাইলেন সঙ্গীতশিল্পী অনুপম রায়। তাঁর কথায়, ‘‘এ রকম নজির তো সচরাচর হয় না। নিঃসন্দেহে এর জন্য ওঁকে শুভেচ্ছা জানাতে চাই। আমি ওঁকে নিয়ে গর্বিত।’’ কিন্তু একই সঙ্গে এ কথাও উল্লেখ করতে চাইলেন যে, শিল্পী বা সঙ্গীত কোনও নির্দিষ্ট পুরস্কারের মধ্যে আবদ্ধ থাকে না। অনুপম বললেন, ‘‘বহু শিল্পী পুরস্কারের দিকে তাকিয়ে বসে থাকেন। আবার পুরস্কারের তোয়াক্কা না করেও দিনের পর দিন অনেকে কাজ করে চলেছেন। পুরস্কার কোনও শিল্পীকে উদ্বুদ্ধ করে কি না সেটা সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত উপলব্ধির উপর নির্ভরশীল।’’ পুরস্কার তাঁকে কতটা ভাবায়? অনুপম বললেন, ‘‘আমার গানকে মানুষের মনে জায়গা করে দেওয়ার ক্ষেত্রে পুরস্কারের কোনও ক্ষমতা নেই। আমার গান তার গুণে শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নেবে বলেই বিশ্বাস করি।’’

যে কোনও পুরস্কার শিল্পীর মুকুটে পালকসম, সে কথা অনুপম স্বীকার করে নিলেন। কিন্তু তাঁর মতে, কোন শিল্পী কটা পুরস্কার পেয়েছেন তা কারও মনে থাকে না। শিল্পীকে শ্রোতা মনে রাখেন তাঁর কাজের মাধ্যমে। অনুপম বললেন, ‘‘পণ্ডিত রবিশঙ্কর, পিঙ্ক ফ্লয়েড বা বিটল্‌স কটা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন সেটা অনেকেরই জানা নেই। জানার প্রয়োজনও নেই।’’ শিল্পীর সৃষ্ট শিল্প সার্থক হলে মানুষের মনে তা চিরস্থায়ী স্থান দখল করবে বলেই বিশ্বাস করেন অনুপম। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘লালন ফকির তাঁর জীবদ্দশায় কোন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন? কিন্তু লালনগীতি আজও গাওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, এমনকি, বয়স্ক শিল্পীরাও তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করছেন।’’

এই প্রজন্মের তরুণ শিল্পীদের মধ্যে লগ্নজিতা চক্রবর্তী অন্যতম। চার বার ‘অ্যালবাম অফ দ্য ইয়ার’-এর গ্র্যামি পাওয়ার জন্য টেরল সুইফ্‌টকে নিয়ে তিনিও উচ্ছ্বসিত। বললেন, ‘‘এ রকম নজির সকলের কেরিয়ারে থাকে না। তাই যাঁর রয়েছে, তাঁকে কুর্নিশ না জানিয়ে উপায় নেই।’’ জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে কোনও ‘বড়’ পুরস্কার যে প্রচলিত এবং পরীক্ষামূলক, এই দুই ধারার শিল্পকেই সম্মান জানাতে চায়, তা নিয়ে লগ্নজিতা কোনও দ্বিমত পোষণ করেন না। তবে, তাঁর যুক্তি, ‘‘কম পরিচিত শিল্পীকে সম্মানিত করা ভাল। কিন্তু এখন যে সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা এগোচ্ছি, সেখানে যাঁর বাজার বড়, সে রকম শিল্পীকেও কিন্তু গ্র্যামি সম্মানিত করতে চাইবে।’’ কারণ সারা বছর সঙ্গীতের বাজারে ‘বিনিয়োগ’ বা ব্যবসা বড় তারকারাই এনে দেন বলে মনে করেন লগ্নজিতা।

গ্র্যামির মতো পুরস্কার যে কোনও শিল্পীকে ভবিষ্যতের জন্য উদ্বুদ্ধ করে বলেই মনে করেন লগ্নজিতা। কিন্তু এর পাল্টা যুক্তিও রয়েছে তাঁর কাছে। স্পষ্ট বললেন, ‘‘সঙ্গীত জগতে থাকার সুবাদে বহু বড় মাপের মানুষদের সঙ্গে আলাপ করে দেখেছি, তাঁদের কাছে পুরস্কার কিন্তু সেই ভাবে কোনও আলাদা অর্থ বহন করে না।’’ লগ্নজিতার মতে, সারা পৃথিবীতে অগণিত গুণী সঙ্গীত শিল্পী রয়েছেন। কিন্তু সকলে তো গ্র্যামি জেতেন না। ‘প্রেমে পড়া বারণ’ গানের গায়িকার কথায়, ‘‘তা হলে কি ভাল কাজ থেমে রয়েছে? বড় পুরস্কার পেলে নিশ্চয়ই ভাল লাগে। যাঁরা গ্র্যামি পেয়েছেন, তাঁরা যে মাপের শিল্পী তা দেখে আমার ধারণা পুরস্কার না পেলেও তাঁরা তাঁদের কাজ ঠিকই চালিয়ে যেতেন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE