Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

চর্চায় শর্ট ফিল্ম, কী বলছে ইন্ডাস্ট্রি

‘ভালবাসার শহর’-এর শুরুতে রয়েছে পরিচালকের স্বীকারোক্তি। ছবিটা দেখে কারও ভাল লাগলে যেমন খুশি সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন ইন্দ্রনীল। দেওয়া রয়েছে অ্যাকাউন্ট নম্বর।

রূম্পা দাস
শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৭ ১২:০০
Share: Save:

সদ্য অনলাইনে মুক্তি পেয়েছে বাংলার বেশ কয়েকটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র। প্রতিটিরই ভিউয়ার নেহাত কম নয়। কোনও পরিচালক ছবি বানানোর স্বাধীনতার জন্য বেছে নিচ্ছেন শর্ট ফিল্মের পথ, কারও রয়েছে এর প্রতি ভাল লাগা।

ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী ‘ভালবাসার শহর’-এ দেখিয়েছেন দুটো ভিন্ন ধর্ম ও ভাষার মানুষের এক হয়ে বেঁচে থাকার গল্প। প্রায় ৫০০০ কিমি দূরের সিরিয়ার সঙ্গে এক হয়ে গিয়েছে কলকাতা। মীর আর পরান বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বাবারা থাকে...এই ভাবে...নিঃশব্দে’-তে তুলে ধরেছেন আপাতকঠিন মুখের পিছনে বাবাদের নরম সত্তার গল্প। ‘ট্যালেন্ট’ নিয়ে বাঙালির বস্তাপচা, তথাকথিত একগুঁয়েমি মনোভাবকে তির মেরেছেন চন্দ্রিল ভট্টাচার্য।

অনেকেই পূর্ণ দৈর্ঘ্যের সফল ছবির পরেও ঝুঁকছেন শর্ট ফিল্মের দিকে। ইন্দ্রনীলের ‘ফড়িং’ জনপ্রিয় হয়েছিল। তা হলে বড় পরদা ছেড়ে শর্ট ফিল্ম কেন? ‘‘ছবি বড় হোক বা স্বল্প দৈর্ঘ্যের, তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। আমি যা বুঝি, তা হল পরিচালক হিসেবে কাজ করার স্বাধীনতা। পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবির সময়ে আমার যা দরকার, তা অনেক ক্ষেত্রে মেলে না। যে ছবি তৈরির পরে আমার লজ্জা হবে, তা বানাব না। আমার বিশ্বাস, একটা ভাল ছবি তৈরি করতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগে,’’ জবাব পরিচালকের।

পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যও ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’র আগে-পরে অনেক শর্ট ফিল্ম বানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘শর্ট ফিল্মের চল নতুন নয়। বদল হয়েছে দেখানোর সুযোগে। আগে উৎসব বা ফেস্টিভ্যালের উপরে ভরসা করতে হতো। এখন অনলাইনে দেখার সুযোগ বেড়েছে। ফোন, ট্যাব বা ল্যাপটপে যত্রতত্র দেখা যায় শর্ট ফিল্ম। তবে আমার কাছে বড় ছবি আর শর্ট ফিল্ম বানানোর ভাবনাটাই আলাদা। একটা উপন্যাস লেখার মতো, আর একটা কবিতা।’’ টিভি বা সিনেমায় যেমন বাঁধাধরা সময়ের ব্যাপার থাকে, এ ক্ষেত্রে শর্ট ফিল্মে সময়ের বাধা নেই। যখন খুশি দর্শক দেখতে পারেন শর্ট ফিল্ম। তা থেকে বাড়ছে ভিউয়ারও। এ কথাও মানছেন পরিচালকেরা।

‘ভালবাসার শহর’-এর শুরুতে রয়েছে পরিচালকের স্বীকারোক্তি। ছবিটা দেখে কারও ভাল লাগলে যেমন খুশি সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন ইন্দ্রনীল। দেওয়া রয়েছে অ্যাকাউন্ট নম্বর। সাড়া পাচ্ছেন? ‘‘ভেবেছিলাম, কিছুই পাব না। কিন্তু কিছুটা হলেও, টাকা আসছে। অনেকে বাড়ি এসেও সাহায্য করতে চাইছেন।’’ প্রদীপ্তর আবার ছবি বানিয়ে টাকা চাওয়ার ক্ষেত্রে কিঞ্চিৎ আপত্তি রয়েছে। বললেন, ‘‘আইডিয়াটা চমৎকার, সন্দেহ নেই। তবে আমি অনুরোধ করে টাকা চাইতে পারব না। শর্ট ফিল্মের ক্ষেত্রে মানুষ একটা ছবিতে টাকা দেবে। কিন্তু পরপর ছবিতে কতটা টাকা উঠবে, জানি না। অন্য পথের কথা সকলকেই ভাবতে হবে।’’

শর্ট ফিল্মের ভবিষ্যৎ? প্রদীপ্ত বলছেন, ‘‘ক্যামেরাটা সহজলভ্য। এখন দেখি, লোকে কবিতা লেখার মতোই শর্ট ফিল্ম বানায়। তবে চর্চা তো বাড়ছেই।’’ ইন্দ্রনীলের জবাব, ‘‘এক-তৃতীয়াংশ টাকা উঠে এলেই আবার ঝাঁপাব নতুন ছবিতে। সাহস, মনোবল দুটোই বাড়বে।’’ জানালেন, দুই বাংলা মিলে কাজ করলে অখণ্ড বাংলায় ছবির কাজ ভাল হবে।

‘ভালবাসার শহর’-এ দাঙ্গাবিধ্বস্ত সিরিয়ার মানুষ আর নিজের পাশের বাড়ির মানুষটা একদম এক, কোনও ফারাক নেই। ইন্দ্রনীল বললেন, ‘‘যে যে পরিস্থিতি আজ সিরিয়াকে এই ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছে, কলকাতাও সে দিকেই এগোতে পারে। বিশ্বায়ন মানে তো শুধু পণ্যের বিকিকিনি নয়। বিশ্বের অন্য প্রান্তে বসে থাকা অচেনা একটি মানুষের সুখদুঃখের ভাগীদার হওয়াও। স্রেফ রিফিউজির সংখ্যা নয়, বাস্তুহারাদের যন্ত্রণাও আমাদের নাড়া দিক।’’ আসলে প্রাসঙ্গিকতার হাত ধরেই চর্চা বাড়ছে ইদানীংকালের বাংলা শর্ট ফিল্মের।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE