সমাধান: নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে গত ছ’দিনের টেলি সমস্যার সমাধান হল। এক পাশে প্রবীণ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, প্রসেনজিৎ এবং অন্য পাশে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা, কলাকুশলীদের সংগঠনের নেতা তথা অরূপের ভাই স্বরূপ বিশ্বাসদের সঙ্গে নিয়ে বসে বৃহস্পতিবার নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা, ‘‘প্রবলেম একটা হয়েছিল। এখন সব মিটে গিয়েছে। কাল (শুক্রবার) থেকে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শুটিং করবে।’’
সমস্যার নিষ্পত্তির লক্ষ্যে যুযুধান সব শিবিরকে এক ছাতার নীচে টানতে এ দিনই টালিগঞ্জে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একটি জয়েন্ট কনসিলিয়েশন কমিটি গড়ে দিয়েছেন মমতা। প্রতি মাসে সভা করবে কমিটি। আপাতত, সমস্যা সমাধানের সূত্র হল, প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে আগের মাসের বকেয়া মেটানো হবে। অভিনেতাদের কাজের সময়সীমা ১০ ঘণ্টা, কলাকুশলীদের ১৪ ঘণ্টা। বকেয়া মেটানো হবে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী চান, সব পক্ষের মূলত প্রযোজকদের সুযোগ-সুবিধাও দেখা হোক।
নবান্নের ১৪ তলায় ঘণ্টা খানেকের বৈঠক। তার পরেই সকলকে পাশে নিয়ে মমতার সাংবাদিক সম্মেলন। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, সরকার কি তবে এই ভাবে টালিগঞ্জ পাড়ায় ‘নিয়ন্ত্রণ’ কায়েম করতে চায়? নবান্ন এই জল্পনা নস্যাৎ করে দিয়েছে। সরকারের শীর্ষ স্তরের বক্তব্য, এটা কোনও মতেই নিয়ন্ত্রণ নয়, সহায়তা। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী টেলি ও টলি শিল্পকে বৃহৎ পরিবার বলে মনে করেন।
দেখুন ভিডিয়ো:
তিনি সব সময়ে বলেন, টালিগঞ্জ পাড়ার উপরে বিপুল সংখ্যক মানুষ ও তাঁদের পরিবারের ভরণপোষণ নির্ভরশীল। তাই সেখানে অচলাবস্থা তৈরি হলে সরকার চুপ করে থাকতে পারে না, সমাধানের চেষ্টা করা তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা। এ দিনও তিনি সেটাই করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও এ দিন বলেছেন, ‘‘এই শিল্পে হাজার হাজার লোক চাকরি করে। মা-বোনেদের পাশাপাশি ছেলেরাও দেখেন। আমি নিজেও সিরিয়ালের ভক্ত।’’
বৈঠকের পরে অভিনেতা-কলাকুশলী-প্রযোজক সবার তরফে সৌমিত্রবাবু বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে অশেষ ধন্যবাদ। তাঁর পৌরোহিত্যেই সমস্যা অতি সহজে মিটে গিয়েছে।’’ কথা কেড়ে নিয়ে মমতা বলে ওঠেন, ‘‘আমি তো আপনাদের ঘরের লোক।’’ অভিনেতাদের সংগঠন আর্টিস্টস ফোরামের সভাপতি সৌমিত্রকেই উপদেষ্টার ভূমিকায় রেখে এ দিন কমিটি গড়ে দিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘কারও সঙ্গে কারও যাতে ভুল বোঝাবুঝি না-থাকে, একদম ওয়ান উইন্ডো সিস্টেম করে দিলাম। সমস্যা হলেই কথা বলে মিটিয়ে নেবেন।’’ কমিটিতে সভাপতির ভূমিকায় মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস (যিনি রাজ্য টেলি অ্যাকাডেমিরও সভাপতি), সহ-সভাপতি প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা। শিল্পীদের পক্ষে প্রসেনজিৎ, অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়, প্রযোজকদের তরফে নিসপাল সিংহ, শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়, কলাকুশলীদের সংগঠনের তরফে স্বরূপ বিশ্বাস, অপর্ণা ঘটক, লেখকদের তরফে লীনা গঙ্গোপাধ্যায় এবং তিনটি টিভি চ্যানেলের প্রতিনিধিকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। সিরিয়াল-সঙ্কট মেটাতে এই প্রথম চ্যানেলের লোকেদেরও ডাকা হয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, ‘‘বিষয়টা খুব বড় কিছু নয়। সকলের ভূমিকাই খুব ইতিবাচক। শরীর থাকলে কখনও একটু অসুস্থতাও হয়।’’ তবে টলিউডে চাপানউতোর নিয়ে চাপা আশঙ্কা যে রয়েছে, তা স্পষ্ট সৌমিত্রের মন্তব্যে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘দয়া করে কার সঙ্গে কার ঝগড়া, তা নিয়ে কাটাছেঁড়া করবেন না।’’ মমতা বিষয়টিকে আরও একটু হাল্কা করে বলেন, ‘‘যা হয়েছে, কেউ তা নিয়ে রং চড়াবেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy