তিয়াসা রায়
কী ভাবছেন নায়িকা শ্যামা? শ্যামা মানে তিয়াসা রায় যুক্তি সাজালেন, “সিরিয়ালটা অলরেডি হিট। উপরি পাওনা একত্রিশ সপ্তাহ ধরে তালিকার প্রথমে থাকা। এটা সম্ভব হচ্ছে গোটা টিমের জন্য। মিলেমিশে যে কোনও কাজ করলে কাজটা ভাল হয়। তাই না? আমাদের মধ্যে এত ভাল বন্ডিং... টেকনিশিয়ানস থেকে শুরু করে আর্টিস্টদের মধ্যে... এ জন্যই আমরা প্রথম।” কেমন অনুভূতি হচ্ছে? তিয়াসা হাসছেন, “খুবই ভাল লাগছে... ক্লাসে ফার্স্ট হলে যে রকম হয় আর কি। আশা করব, এ ভাবেই যেন ‘কৃষ্ণকলি’ চলতে থাকে। কৃষ্ণর কাছে এই প্রার্থনা আমার।”
নায়ক নিখিল, মানে নীল ভট্টাচার্যের যুক্তি কী? বললেন, “সব গল্পেরই কয়েকটা পিলার থাকে। এখানে মেন পিলার হল আমাদের রাইটার, সুশান্তদা। নিখিল, শ্যামা চরিত্র তো পুরোটাই রাইটারের ভিজুয়ালাইজেশন। উনি এত ভাল ভাবে লিখেছেন, প্রেজেন্ট করতে পেরেছেন... আমার মনে হয় মানুষজন হয়তো এটার সঙ্গে রিলেট করতে পেরেছে, মেনলি শ্যামার সঙ্গে তো অবভিয়াসলি। আমি যখন প্রথম কনসেপ্টটা পড়েছিলাম তখন সুশান্তদা আমাকে বলেছিলেন যে, ‘‘তুই পেপার পড়, পাত্রপাত্রী বিজ্ঞাপন। নিজেই দেখবি যে ‘ফর্সা বউ চাই’, এ রকম লেখা।’ তো সত্যি দেখলাম এখনও লোকজন ‘ফর্সা, সুশ্রী’ বউ চায়। তখন বুঝলাম যে ব্যাপারটা ভীষণ রেলিভেন্ট। তা ছাড়া, সবগুলো ক্যারেক্টার এখানে ভীষণ নরম্যাল। ভীষণ যুক্তিপূর্ণ ভাবেই আমাদের গল্পটা লেখা হচ্ছে। আমার মনে হয় এটাই দর্শকদের কানেক্ট করছে। এত মানুষ রেগুলারলি দেখছেন। খুব ভাল লাগছে।”
দিশা সারাক্ষণ জ্বালাতন করেন নায়িকা শ্যামাকে। দিশার চরিত্রাভিনেতা রিমঝিম মিত্র’র মত খানিক ভিন্ন। তাঁর কথায়: “আমাদের সিরিয়ালের ইউএসপি আমার মনে হয় যে, কোনও কিছুই... কোনও ছোট ইনসিডেন্ট খুব বেশি ড্র্যাগ করে না। দু’-তিনটে এপিসোড জুড়ে একটা ইস্যু নিয়েই গল্প এগিয়ে যাচ্ছে, এটা খুব একটা হয় না। খুব চটপট সলিউশন হয়ে যায়। এটা একটা প্লাস পয়েন্ট। অন্য দিকে, আমাদের প্রচুর ক্যারেক্টার নেই, মোটে কয়েকটা ক্যারেক্টার। সে জন্য প্রত্যেকটা ক্যারেক্টার রোজ দেখতে দেখতে তাদের চেনা সুবিধা হয়ে যায়। মানে একটা ক্যারেক্টারকে সাত দিন পর পর দেখলে যতটা না কানেকশন তৈরি হয় তার থেকে রোজ একটা মানুষকে দেখলে কানেকশনটা স্ট্রং হয়ে যায়।”
‘কৃষ্ণকলি’ সিরিয়ালের দৃশ্য
টপ রেটেড হওয়ার দৌড়ে দিশা কতটা ইন্ধন জোগালো? রিমঝিম চটপট বললেন, “সেটা তো দর্শক বলতে পারবে। সব সময় দেখা যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় দিশাকে নিয়ে ডিবেট চলে। বেশ মজা লাগে। আমরা যারা পার্ট করছি তাদের পক্ষে বলা মুশকিল যে কোন চরিত্রর জন্য রেটিং বাড়ছে। তবে একটা ইস্যু ছিল, শাশুড়িমা দিশাকে সব থেকে বেশি ভালবাসতেন। সেই শাশুড়িমা-ই দিশাকে চড় মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। সেটা একটা বড়সড় ইনসিডেন্টই ছিল আমার মনে হয়। কারণ দর্শক চাইছে, যে বাজে কাজ করছে সে ধরা পড়ুক এবং শাস্তি পাক। কিন্তু সব সিচুয়েশন থেকে দিশা বেঁচেই যাচ্ছিল। দিশার সব থেকে বড় ট্রাম্প কার্ড ছিল শাশুড়িমা। তো শাশুড়িমা দিশাকে বের করে দিয়েছে, এটা দর্শকের খুব এক্সাইটিং লেগেছে। এ বার দর্শক অপেক্ষা করছে দিশা কী ভাবে বাড়িতে রি-এন্ট্রি নেয়।”
আরও পড়ুন:রানির ‘মর্দানি’ ফিরতে চলেছে বড় পর্দায়
ধারাবাহিকের প্রযোজক ও গল্পকার সুশান্ত দাস মনে করেন, “মাঝখানের দু’-তিন সপ্তাহ বাদ দিলে পঞ্চাশ সপ্তাহের বেশি সময় ‘কৃষ্ণকলি’ টপ। এখনও আমাদের সোসাইটিতে ডার্ক কমপ্লেকশনের মেয়ের বিষয়ে ট্যাবু আছে। বিষয়টা নিয়ে আমরা যে জায়গাটা তৈরি করার চেষ্টা করেছি সেটার সঙ্গে মানুষ রিলেট করেছে। মানে শ্যামার সঙ্গেও রিলেট করতে পেরেছে আর নিখিলদের পরিবারের সঙ্গেও রিলেট করতে পেরেছে... একান্নবর্তী পরিবার, বন্ডিং... এগুলো মানুষের ভাল লাগতে পারে বলে মনে হয়।”
ধারাবাহিকটির ইউএসপি কী? তিনি বিশ্বাস করেন, “ইউএসপি কালো মেয়ে। মেয়েটি তার মতো করে গান গেয়ে লড়াই করছে, অন্য ভাবে জীবন তৈরি করছে। তো সেই জায়গা থেকে হয়তো ভাল লাগছে মানুষের। শুধুমাত্র হিরো-হিরোইন নয়, ‘কৃষ্ণকলি’-তে যতগুলি চরিত্র আছে প্রত্যেকেই স্বকীয়তায় উজ্জ্বল। তারা প্রত্যেকেই একটা ক্যারেক্টারাইজেশন পেয়েছে এবং প্রত্যেকেই এক একটা স্বতন্ত্র চরিত্র হয়ে উঠতে পেরেছে। এ জন্যই মানুষের ভাল লাগছে।”
নীল ভট্টাচার্য এবং তিয়াসা রায়
ধারাবাহিকের পরিচালক বিজয় মাজি বললেন, “অ্যাকচুয়ালি কি হয়... খারাপ লোক এবং ভাল লোকের মধ্যে ভাল লোকের জয় দেখতে দর্শক অভ্যস্ত। একটা সংসারে ভাল মানুষকে সবসময় আটকে রাখার চেষ্টা হয়। শ্যামার মধ্যে সেটাই দর্শক পাচ্ছে বলে এখনও দেখছে।”
নায়কের বাবার চরিত্রাভিনেতা শঙ্কর চক্রবর্তী মনে করেন, “এখন যা অবস্থা তাতে এটা তো নম্বর ওয়ান শো হয়ে গেছে এবং এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে যেখানে অন্য ধারাবাহিকের পক্ষে আমাদের ধরা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত মানুষের ভাল লাগছে। কারণটা এটাই যে ওই ভাল লাগাটা থেকে গেছে। এখন পর্যন্ত যে টিআরপি এসেছে তাতে দেখলাম যে তিরিশতম সপ্তাহের থেকে একত্রিশতম সপ্তাহে দর্শক আরও বেড়েছে। এটা একটা রেকর্ড, অল টাইম রেকর্ড। এটা ভাঙা মুশকিল আছে।”
আরও পড়ুন:জাতীয় পুরস্কারজয়ী আয়ুষ্মানের কবিতায় বুঁদ সোশ্যাল মিডিয়া
এর পরের গল্প কী? সুশান্ত বললেন, “এ বার নতুন নতুন চমক অপেক্ষা করছে। ‘কৃষ্ণকলি’-র গল্প আরও ইন্টারেস্টিং হতে চলেছে। এখনই সেগুলো বলা যাবে না। আশা করছি দর্শক উপভোগ করবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy