Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Anirban Chakrabarti birthday

‘আমরা মজা করে ওকে ফ্লোরে ‘মঞ্জুলিকা’ বলে ডাকতাম’, অনির্বাণের জন্মদিনে লিখলেন পরিচালক জয়দীপ

৩১ অগস্ট শনিবার অভিনেতা অনির্বাণ চক্রবর্তীর জন্মদিন। বিশেষ দিনে আনন্দবাজার অনলাইনের পাতায় বন্ধুর সঙ্গে তাঁর সমীকরণ বিশ্লেষণ করলেন পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়।

Bengali director Joydeep Mukherjee penned his association with actor Anirban Chakrabarti on his birthday

অনির্বাণ চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।

জয়দীপ মুখোপাধ্যায়
জয়দীপ মুখোপাধ্যায়
পুরী শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৩৯
Share: Save:

চারটে ওয়েব সিরিজ় এবং দুটো ছবি। একেনবাবুর দৌলতে অনির্বাণের সঙ্গে বেশ একটা দীর্ঘ সফর কাটিয়ে ফেলেছি। আজ অনির্বাণের জন্মদিন। আমিও কলকাতায় নেই। তবে সকালেই ওকে ফোনে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। অনির্বাণকে নিয়ে লিখতে হলে অনেক কিছু লিখতে হয়। তবে, আমি যতটা সম্ভব সংক্ষেপে ওর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব নিয়ে কিছু কথা জানাতে চাই।

অনির্বাণের সঙ্গে প্রথম আলাপ দিয়েই না হয় শুরু করি। যত দূর মনে পড়ছে, লকডাউনের দ্বিতীয় পর্যায়। প্রচুর কড়াকড়ি। আমার প্রথম একেনের সিরিজ়ের। শুটিং শুরু হবে। লকডাউন বলেই পদ্মকে (চিত্রনাট্যকার পদ্মনাভ দাশগুপ্ত) এমন একটা গল্প বাছতে বলেছিলাম, যার শুটিং একটা বাড়ির মধ্যে করে নেওয়া সম্ভব। সেই মতো ‘বর্মন বাড়ির রহস্য’ বেছে নেওয়া হল। সেই মতো আমরা পাড়ি দিলাম মুর্শিদাবাদ। মনে আছে, ওই সিরিজ়ে অভিনেতাদের কোনও লুকসেট হয়নি। কারণ, কোভিড পরিস্থিতিতে সেটা করা সম্ভব হয়নি। তাই ফোনে এবং ভিডিয়ো কলেই আমরা পুরো পরিকল্পনা করেছিলাম।

হোটেলে পৌঁছে আমি অনির্বাণের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। ওর ঘরে দরজায় নক করে ঢুকতে গিয়ে দেখি, দরজা খুলল, কিন্তু পিছন থেকে একটা ছোট্ট টেবিল দিয়ে আটকে রাখা। কারণ অতিমারির জন্যই তখন সকলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছিলেন। সেটা সরিয়ে ঢুকতেই ওর পরিচিত হাসি। খাটের এক কোণে বসে রয়েছে। আমি ঢুকে একটা চেয়ারে বসি। বলা যায়, সামাজিক দূরত্ব মেনেই আমাদের আলাপের সূত্রপাত। তবে সেই আলাপ যে নিবিড় বন্ধুত্বে পরিণত হবে, সে প্রসঙ্গে তখন আমার কোনও ধারণা ছিল না।

হোটেলে শুধু আমাদের টিমই ছিল। ন'দিনের মধ্যে পর পর দু’দিন লকডাউন হয়ে গেল। সেই সময় হোটেলে একটা ঘরে আমরা সকলে আড্ডা দিতাম। একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, গান-বাজনা। অনির্বাণকেও দেখলাম, ও যেন খোলস ছেড়ে কিছুটা বেরিয়ে এল। আমিও মজা করে শুটিং করতে ভালবাসি, অনির্বাণও বেশ মজার মানুষ। তাই অল্প সময়ের মধ্যেই দু’জনের বন্ধুত্বটা জমে উঠল।

Bengali director Joydeep Mukherjee penned his association with actor Anirban Chakrabarti on his birthday

একেনবাবুর চরিত্রে অনির্বাণ চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।

একেন যে অনির্বাণকে পরিচিতি দিয়েছে, তা নিয়ে আমার কোনও দ্বিমত নেই। তবে একেন ছাড়াও ওর সঙ্গে বেশ কিছু ছবি এবং সিরিজ়েও আমি কাজ করেছি। বলা যায়, এখনও পর্যন্ত আমার সঙ্গেই ওর সবচেয়ে বেশি কাজ। সে দিক থেকে অনির্বাণকে একজন বহুমুখী শক্তিশালী অভিনেতা হিসেবেই আমার মনে হয়েছে। কারণ ‘এফআইএর’-এর সঙ্গে ‘অপরিচিত’র অনির্বাণের কোনও মিল নেই । আবার ‘ডুগডুগি’র থেকে ‘মিসিং লিঙ্ক’-এর অনির্বাণ একদম আলাদা। আবার যখন ও জটায়ুর চরিত্রে অভিনয় করেছে, তখন কিন্তু ওর মধ্যে অনুকরণের কোনও প্রবণতা দেখিনি। আর এটা শুধু আমি বলছি না, আমার বিশ্বাস, দর্শকও আমার বক্তব্যকে সমর্থন করবেন। আমি নিজেও কিন্তু একেনের বাইরে অনির্বাণকে নিয়ে যখনই কাজ করেছি, ওকে নতুন ভাবে পর্দায় হাজির করার চেষ্টা করেছি। সেই পরীক্ষায় ও ভাল ভাবেই পাশ করে গিয়েছে। আবার শুটিংয়ের সময়ে ওর মতামতও অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি আমাকে সাহায্য করেছে।

এখন অনির্বাণের সঙ্গে আমার দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক। দু’জনের মধ্যে একটা আত্মীয়তা তৈরি হয়েছে। কখনও ওর কোনও সমস্যা হলে, সবার আগে আমাকে ও সেটা জানায়, আমার ক্ষেত্রেও প্রয়োজনে আমি ওর মতামত নিই। আগামী দিনে আমাদের দু’জনেরই কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। তবে তা নিয়ে এখন আলোচনা করতে চাই না।

অনির্বাণের জন্মদিনে একটা মজার বিষয় জানাই। সন্ধ্যার পর শুটিং একটা সময় পর্যন্ত ওর খুব একটা পছন্দ হত না। সারা দিনের পরিশ্রমের পর তখন বাড়ি যেতে চাইত। ইউনিট বুঝে যেত, সন্ধ্যা নেমেছে মানে সেই সময়ে অনির্বাণ যা খুশি করে ফেলতে পারে। তাই আমরা মজা করে ওকে ‘মঞ্জুলিকা’ বলতাম। তবে এখন দেখি, ওর সেই সময়সীমাটা বেড়েছে। কারণ ও বুঝতে পেরেছে, সব সময় তো শুটিং শিডিউল এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই এখন রাতের শুটিংয়েও অনির্বাণ বেশ মানিয়ে নিয়েছে।

মনে আছে, এক বারই আমাদের দু’জনের মধ্যে একটু মন কষাকষি হয়েছিল। গত বছর ‘রুদ্ধশ্বাস রাজস্থান’ ছবির শুটিংয়ে আমরা তখন জয়সলমেরে। সারা দিন শুটিং হয়েছে। তার পর রাতেও কিছু দৃশ্যের শুটিং হবে। একটু ছুটোছুটির দৃশ্য। আমি অনির্বাণকে দৃশ্যটা বুঝিয়ে দিলাম। অনির্বাণ তখন বলল যে, ও আর রিহার্সাল করবে না। সরাসরি টেক দেবে। বুঝতে পারলাম, ও ক্লান্ত। আর পারছে না। আমি তখন প্যাক আপ করে দিই। আমাদের দু’জনেরই একটু খারাপ লাগে। পরদিন ফ্লোরে এসে দু’জনেই ভুল বুঝতে পারি। তার পর একে অপরকে জড়িয়ে ধরি। সব ঠিক হয়ে যায়।

জন্মদিনে অনির্বাণের কাছে আমার খুব বেশি কিছু দাবি নেই। ওকে জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা। ও খুবই বড় মাপের একজন অভিনেতা। মানুষ হিসেবেও ও যেমন আছে, আগামী দিনেও যেন সে রকমই থাকে। এটাই চাই। আর আজীবন আমাদের বন্ধুত্ব যেন অটুট থাকে।

আমি বা অনির্বাণ, কেউই জন্মদিন পালনে খুব একটা বিশ্বাসী নই। তবে জুন মাসে আমার জন্মদিনে অনির্বাণ একটা উপহার পাঠিয়েছিল। আজ ওর জন্মদিনে আমি পুরীতে। ভাবছি, এখান থেকেই ওর জন্য একটা কিছু উপহার নিয়ে যাব।

(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy