বনিতা সান্ধু
ছোট ছোট চুল, লম্বা চেহারা, পরনে ফুলকাটা টপ আর ছোট্ট স্কার্ট... মুম্বইয়ে সাংবাদিকদের সামনে যখন এলেন, তত ক্ষণে আসার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গিয়েছে। অনুষ্ঠানের মাঝেই প্রবেশ করলেন। খানিকটা জড়োসড়ো, তবে মুখে অমলিন হাসি। দেখেই বোঝা যায়, ইন্ডাস্ট্রির নবাগতা তিনি। বনিতা সান্ধু। ‘অক্টোবর’ ছবির জন্য পরিচালক সুজিত সরকার বেছে নিয়েছেন তাঁকেই। আর বিদেশে জন্ম ও বড় হওয়া বনিতার আসলে কাজের অভিজ্ঞতা বলতে হাতে গোনা ক’টা বিজ্ঞাপন মাত্র!
আড্ডা শুরু হওয়ার আগেই সুজিত আলাপ করিয়ে দিলেন, ‘‘আনন্দবাজার থেকে এসেছেন। আমার শহর...’’ শুনে বেশ খানিকটা আশ্বস্ত হলেন বনিতা। বলেই ফেললেন, ‘‘তা হলে তো আর টেনশন করার কোনও মানে নেই!’’ আর নায়িকার সামনেই পরিচালকের সঙ্গে বাংলায় আলাপচারিতার কিছুই বুঝতে না পেরে হেসে ফেললেন বনিতা, ‘‘হ্যাঁ হ্যাঁ, যত গোপন কথা আছে সুজিত স্যরের সঙ্গে, সেরে নিন।’’
বনিতা পড়াশোনা করছেন লন্ডনে। এখনও স্নাতক স্তরের পরীক্ষা শেষ হয়নি। ফলে ছবির পাশাপাশি পড়াশোনাও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। বনিতা থেকে শিউলির (ছবিতে তাঁর চরিত্র) সফর কেমন ছিল? ‘‘আমার কাছে ভীষণ স্পিরিচুয়াল। তখন আমি মাত্র উনিশ। কিশোরীবেলার নানা টানাপড়েন কাটিয়ে উঠছি। আর সেই সময়ে শিউলি নিষ্পাপ এক জন মেয়ে। শিউলির চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে, ধ্যান করার মাধ্যমে... আমি ছবিটা করতে গিয়ে ভাল মানুষ হয়ে উঠেছি। আর তাই ‘অক্টোবর’ আমার কাছে শুধু একটা ছবি নয়। একটা অভিজ্ঞতাও। ছবিটা দেখলে অনেকেরই অনেক ধারণা বদলে যাবে,’’ বলছেন বনিতা।
ছোট থেকেই কি অভিনেত্রী হতে চাইতেন? ‘‘অবসেস্ড ছিলাম। প্রথমে ওয়েলসে থাকতাম। তার পর লন্ডনে এলাম। তখন বোধহয় আমি ১০ বা ১১। ঠিক করে নিই, অভিনেত্রীই হব,’’ হেসে ফেললেন বনিতা। আর প্রথম দেখা ছবি, যেটা মনে করতে পারেন? ‘‘অ্যানিমেশন ছবি দুটো। ‘দ্য প্রিন্স অফ ইজিপ্ট’ আর ‘লায়ন কিং’। আজ অবধি আমার দেখা সেরা দুটো ছবি,’’ চটজলদি মিলল উত্তর। আর হিন্দি ছবি দেখেন কতটা? ‘‘মিথ্যে বলব না। সে রকম ভাবে দেখা হয় না। কারণ, ওয়েলসে এই ব্যাপারগুলো বেশ সীমিত। আর আমি এই ইন্ডাস্ট্রি থেকে অনেকটা দূরেও ছিলাম। তবে আমি ভাগ্যবান যে, প্রথম ছবি হিসেবে ‘অক্টোবর’ পেয়েছি। এমন ছবি তো করতেই পারতাম, যা আদতে আমার জন্য ঠিক নয়। আমি সেই মহা শক্তিমানের কাছে কৃতজ্ঞ যে, কোথাও না কোথাও তিনি আমার জন্য এটাই লিখে রেখেছিলেন।’’
বেলা গড়িয়ে প্রায় চারটে তখন। সকলের পেটে খিদের আগুন জ্বলছে। তার মাঝেই বনিতার জন্য এল স্যালাড। সাংবাদিককেও অনুরোধ করলেন খাওয়ার জন্য। ছোটবেলা থেকে ইংরেজি ভাষার মধ্যে বড় হয়ে ওঠা বনিতার কাছে হিন্দি শেখা কতটা কঠিন? ‘‘সত্যি বলতে, এখনও মোটেও শিখে উঠতে পারিনি। ছবির জন্য যতটা দরকার, চেষ্টা করেছি। জুহি (চতুর্বেদী) ভীষণ সাহায্য করেছেন। তবে ছবির কাজ শেষ হওয়ার পরে গত তিন-চার মাসে আমি আবার লন্ডনে ফিরে গিয়েছি। সেখানে তো সেই ইংরেজি কথা বলা মানুষজনের ভিড়েই আমি! তাই হিন্দির যে চর্চাটুকু চলছিল, সেটায় খানিকটা ছেদ পড়েছে,’’ বলছেন বনিতা।
আপনি নাকি ‘অক্টোবর’-এ সবচেয়ে বেশি খেটেছেন? পরিচালক তো তাই-ই বলছেন। ‘‘আমিও শুনে অবাক হয়ে গিয়েছি। আসলে কী বলুন তো, সবচেয়ে বেশি খেটেছেন সুজিত স্যর। ওঁর মতো প্রতিভা খুব কমই আছে,’’ হেসে ফেললেন নায়িকা। ওয়র্কশপও করেননি তিনি। কারণ বিশ্বাস করেন, ‘‘কোনও কিছু আগে শিখে আলাদা করে প্রয়োগ করা যায় না। বরং বলা যায়, কাজ করার মধ্য দিয়েই তো শেখা যায়।’’ প্রিয় অভিনেতাদের মধ্যে ইরফান খান, মেরিল স্ট্রিপ, কেট ব্লাঞ্চেট... তালিকায় নাম অগুনতি।
পড়াশোনা আর ছবিতে কাজ— দুটো সামলাতে অসুবিধে হয়নি? ‘‘আমি তো কাজের ফাঁকেই পড়াশোনা করতাম। সুজিত স্যর এসে দেখতেন কী লিখছি। হয়তো কোনও সকালে আমি শিউলি নই। বসে বসে কার্ল মার্ক্সের উপর লিখছি। আসলে আমার কাছে এটা ভালই হয়েছে। পড়াশোনা আর অভিনয়, দুটোই সৃজনশীল। একটায় হাঁপিয়ে গেলে আর একটা করতাম। পালানোর পথ বলতে পারেন,’’ স্পষ্ট জবাব বনিতার।
আপনার সৌন্দর্যের জন্য অনেকেই নিশ্চয়ই আপনাকে কমপ্লিমেন্ট দেন? ‘‘সব মা-বাবার জন্যই হয়েছে। আর আমি এটা বলতে চাই, সুন্দর মুখের চেয়েও আমি আরও বেশি কিছু। আর সেটা আমাকে মা-বাবাই দিয়েছেন,’’ ঝকঝকে হাসি বনিতার মুখে। আর হঠাৎ করে তারকা হয়ে যাওয়ায় কিছু কি বদলে গিয়েছে? ‘‘এখনও ব্যাপারটা আমাকে তেমন ধাক্কা দেয়নি। বসে ভাবারও সময়টা পাইনি। কী হচ্ছে, সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি এখনও। আপাতত আমি দিন গুনছি। ছবি মুক্তি পেলে হয়তো বুঝতে পারব। তবে বিশ্বাস করি, এটাই হওয়ার ছিল আমার জীবনে। সুজিত স্যরের সঙ্গে আমার এই দেখাটা হওয়ারই ছিল,’’ স্পষ্টবক্তা বনিতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy