তালিবান শাসনে মহিলাদের অবস্থান নিয়ে মুখ খুললেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি।
আফগানিস্তানের পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে তাঁর মত ব্যক্ত করলেন হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। ইনস্টাগ্রামে দু'টি পোস্ট মারফত তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানালেন আফগানিস্তান সঙ্কটে তাঁর উদ্বেগ ও অবস্থান। সম্প্রতি সেখানে তালিবান শাসনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়েছে, এবং তার পর থেকেই আবার এক অন্ধকার ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতে প্রবেশ করেছেন আফগান মহিলারা। আফগানিস্তানের মাটিতে সদ্য তৈরি হওয়া এই পরিস্থিতিতে মেয়েদের দুর্দশা ও উদ্বাস্তু সঙ্কটের পিছনে আমেরিকার ব্যর্থতা নিয়ে এ বার কলম ধরলেন 'লারা ক্রফট' চরিত্রের সাহসী অভিনেত্রী।
৪৬ বছর বয়সি এই হলিউড অভিনেত্রী দীর্ঘদিন ধরে সমাজসেবামূলক কাজ করে আসছেন। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বরাবরই যথাসম্ভব নীরব তিনি, তাই নেটমাধ্যমে প্রচার ও প্রদর্শনীর ইঁদুর-দৌড়ে তাঁকে বিশেষ দেখা যায় না। কিন্তু আফগানিস্তান পরিস্থিতি তাঁকে বাধ্য করল ২০ অগস্ট ইনস্টাগ্রামে মুখ খুলতে। তাঁর কাছে পৌঁছনো এক আফগান কিশোরীর চিঠিই তাঁর প্রথম ইনস্টাগ্রাম পোস্ট। এক দিন পরে তিনি ফের আরেকটি পোস্ট দেন, তবে এ বার বিষয় বিশ্বে ক্রমবর্ধমান উদ্বাস্তু সংকট, বিশেষ করে আফগানিস্তানের প্রেক্ষিতে।
২১ তারিখ তাঁর প্রথম পোস্টে তিনি লেখেন, 'এই চিঠিটি আমায় আফগানিস্তানের এক কিশোরী পাঠিয়েছে। এই মুহূর্তে, আফগানিস্তানের মানুষ নেটমাধ্যমে যোগাযোগ ও স্বাধীন ভাবে মত প্রকাশের ক্ষমতা হারিয়েছেন।' তিনি জানিয়েছেন যে, সেই ভয়াবহ ৯/১১-র সপ্তাহ দুয়েক আগেই তিনি আফগানিস্তানের সীমান্তে ছিলেন, যেখানে তাঁর সাক্ষাৎ হয় আফগান উদ্বাস্তুদের সঙ্গে। তাঁর কথায়, যে সমস্ত মানুষ বিশ্বব্যাপী নিজেদের ন্যূনতম মানবাধিকারের জন্য লড়াই করছেন তাঁদের কণ্ঠের প্রতিনিধিত্ব করে তাঁদের বিভিন্ন কাহিনিকে তুলে ধরার জন্যই তিনি ইনস্টাগ্রামে এসেছেন।
কিছু দিন আগেই আফগান পরিচালক সাহরা করিমির খোলা চিঠি নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। তালিবান শাসনের মুখে অন্যান্য শিল্পের মতোই চলচ্চিত্রের স্বাধীনতা হারানোর আশঙ্কায় শিল্পচর্চার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের অসহায়তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। সম্প্রতি অ্যাঞ্জেলিনা জোলি আফগান কিশোরীর যে চিঠিটি প্রকাশ করেছেন, তার ছত্রে ছত্রে এক অজানা ভয়, উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ। চিঠিতে এই মেয়েটি লিখেছে, ‘তালিবান আসার আগে সকলে ঠিকঠাক ভাবে কাজে যেতাম, স্কুলে যেতাম। আমাদের সবার অধিকার ছিল... কিন্তু ওরা আসার পরে আমরা সকলেই ওদের ভয়ে সন্ত্রস্ত, এবং আমাদের মনে হচ্ছে আমাদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।’
আফগানিস্তানে ইতিমধ্যেই তালিবান শাসন জারি হওয়ার পর মিডিয়া সূত্রে খবর যে, দেশের বিভিন্ন অংশে মেয়েরা যেতে পারছে না শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে, পুরুষ সঙ্গী ছাড়া রাস্তায় বেরোনোর উপরেও এমনকি জারি হয়েছে ফতোয়া। নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু বিক্ষিপ্ত খবর মারফতও জানা যাচ্ছে এ ধরনের ঘটনার কথা । তালিবানি শাসনের ভয়ে দেশছাড়া আফগান শরণার্থীদের বিপন্ন ভিড়ের ছবিতে ভরে উঠছে গণমাধ্যম।
দ্বিতীয় পোস্টে অ্যাঞ্জেলিনা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উদ্বাস্তু মানুষদের নিয়ে। তিনি লিখেছেন, 'স্থানচ্যূত মানুষদের নিয়ে আমি কাজ শুরু করি। কারণ, মানবাধিকারের প্রতি আমার স্থির বিশ্বাস আছে।' তিনি এও যোগ করেন যে, দাক্ষিণ্য প্রদর্শনের জন্য নয়, বরং এই সব মানুষ ও তাঁদের পরিবারের জন্য এক গভীর শ্রদ্ধাবোধ থেকেই তিনি এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। এই কাজে তাঁর পাশে এগিয়ে আসার জন্য তিনি এক মুক্ত আহ্বান দিয়ে পোস্ট শেষ করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy