এমন পরিস্থিতিতে নিজের দেশ ভারতকে নিয়ে কী ভাবছে টলিউড?
তালিবানদের আফগানিস্তান দখলের এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। অত্যাচার, শোষণের মাত্রা বাড়ছে প্রতিদিন। নির্বিচারে চলছে হত্যা। দেশের সমস্ত নাগরিক সসম্মানে স্বাধীন ভাবে বাঁচতে দেশত্যাগ করছেন। ইতিমধ্যেই আমেরিকায় আশ্রয় নিয়েছেন আফগানিস্তানের প্রথম সারির পপ গায়িকা আরিয়ানা সইদ। গোটা বিশ্ব স্তম্ভিত, শঙ্কিত নিজেদের দেশ নিয়ে। তালিবানে শাসনের পরিণাম চিন্তা করে। এই পরিস্থিতিতে নিজের দেশ ভারতকে নিয়ে কী ভাবছে টলিউড? আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে নিজেদের অনুভূতি ভাগ করে নিয়েছেন অনুপম রায়, সায়নী ঘোষ, রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়, মনামী ঘোষ, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়।
জাতীয় পুরস্কারজয়ী অনুপমের মতে, মৌলবাদের নিকৃষ্ট উদাহরণ আফগানিস্তান। এই জন্যেই ভারতীয়রা নিজেদের স্বাধীন মৌলিক অধিকার নিয়ে সময় সজাগ। মৌলবাদকে তাঁরা কখনওই প্রশ্রয় দেন না। যখন যে দেশে মৌলবাদ মাথাচাড়া দেবে, স্বাধীন মৌলিক অধিকার নষ্ট হবে ভারত তার তীব্র বিরোধিতা করবে। অনুপমের আরও দাবি, ‘‘আমি কথার থেকেও গানে বেশি স্বচ্ছন্দ। বরাবর প্রতিবাদ জানিয়েছি সুরে সুরে। এ বারেও তার ব্যতিক্রম হবে না। হয়তো খুব শিগগিরিই প্রতিবাদের গান নিয়ে আসছি।’’
ত্রিপুরা থেকে সদ্য ফিরেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের যুব শাখার সভাপতি সায়নী ঘোষ। মুঠোফোনে পুরো ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন তিনি। শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সে দেশের নাগরিকদের জন্য। আফসোস করেছেন, আফগানি শিল্প, সংস্কৃতি চলচ্চিত্র দুনিয়ার জন্য। সায়নী দাবি, ‘‘গত কয়েক বছরে ওই দেশ সব ক্ষেত্রেই উন্নতি করেছিল। তালিবানি যুগে আবার তা অন্ধকারে ঢাকা পড়তে চলেছে।’’ পাশাপাশি তিনি এও জানিয়েছেন, নারীদের তালিবানি শাসনে জীবন কাটানো মানে জীবন্ত নরকদর্শন। এর থেকে খারাপ কিছু হতে পারে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলে আফগানিস্তানের জন্য ত্রাণ পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন, সে কথাও বলেন সায়নী।
অনেক বাঙালিই আফগানিস্তানকে চিনেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পের সৌজন্যে। রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় সেই তালিকায় জুড়েছেন সৈয়দ মুজতবা আলির লেখা ‘দেশে বিদেশে’ ভ্রমণ কাহিনিকে। সাহিত্যিকের লেখা পড়ে তিনি জেনেছেন, আপাত রুক্ষ এই দেশের মানুষেরাও যথেষ্ট মানবিক, আন্তরিক। সেই দেশ ২০০০ সাল থেকে ধ্বংসলীলার সাক্ষী। বামিয়ানের বুদ্ধি মূর্তি নষ্ট দিয়ে যার সূত্রপাত। মাঝে আবার ছন্দে ফিরছিল সে দেশ। রশিদ খান, নবি, মুজিবুর রহমানের মতো ক্রিকেটারের হাত ধরে সে দেশেও খেলার চর্চা হচ্ছিল বেশ। সে সব আবার অতীত হতে চলেছে। আফগানিস্তানের এই পরিস্থিতি নিজের দেশ নিয়েও কি নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে রাহুলকে? অভিনেতার দাবি, ‘‘আমাদের দেশে মাঝেমধ্যে ধর্ম নিয়ে জিগির উঠলেও তা স্থায়ী প্রভাব ফেলবে না বলেই আশা করি। কারণ, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। এখানে ধর্মকে বেশি দিন বিক্রি করা যাবে না।’’
একই সুর শোনা গিয়েছে মনামী ঘোষের কথাতেও। মনামীর আফসোস, ‘‘এত দূরে বসে আছি যে চুপচাপ দেখা ছাড়া এই মুহূর্তে আর কিচ্ছু করার নেই। রোজ খবর শুনছি। অত্যাচারের বিবরণ পড়ছি। আফগানিস্তানের মানুষগুলোর জন্য মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। শারীরিক ভাবে না হলেও মানসিক ভাবে ওঁদের পাশে আছি।’’ পাশাপাশি অভিনেত্রীর বিশ্বাস, ভারত বিবিধের মাঝে মহামিলনের স্থান। তাই চট করে এ দেশে ধর্মের ধুয়ো তোলা সম্ভব নয়। তার জন্য সজাগ থাকতে হবে প্রত্যেক দেশবাসীকেও।
দিন দুই আগেই আফগানিস্তানের জন্য অর্থ সাহায্যের অনুরোধ জানিয়ে ইনস্টাগ্রামে গান গেয়েছেন ঋদ্ধি সেন এবং সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রজন্মের অভিনেতা ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়ও অতিমারির সময় থেকে সমাজের সঙ্গে মানুষের পাশে। আফগানিস্তানের দুর্দিনে তাঁর ভূমিকা কী? ‘‘যে সংস্থা সরাসরি আফগানিস্তানে ত্রাণ পাঠাবে আমি সব সময় তাদের সঙ্গে’’, বললেন ঋতব্রত। এই ধরনের সংগঠন বা সংস্থার কথা বেশি করে ছড়িয়ে পড়া উচিত। যাতে সবাই আফগানবাসীদের পাশে দাঁড়াতে পারেন, মত তাঁর। এও জানালেন, সে দেশের নাগরিকদের জন্য প্রতি মুহূর্তে প্রার্থনা জানাচ্ছেন। তবে যে কোনও স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে নেটমাধ্যমে মুখ খুলতে নারাজ তিনি। আফগানিস্তানের মতোই নিজের দেশ ভারতকে নিয়েও সমান চিন্তিত ঋতব্রত। তাঁর যুক্তি, ‘‘গত ৫-১০ বছর ধরে যুদ্ধটাকে ভিডিয়ো গেম বানিয়ে যেন খেলা হচ্ছে। অবশ্যই ধর্মকে সামনে রেখে। এতে যারা যুদ্ধ বাধাচ্ছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। বিপর্যস্ত হচ্ছে সাধারণ জনজীবন।’’ তরুণ অভিনেতা তাই এই ধরনের মনোভাব বা কার্যকলাপের ঘোর বিরোধী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy