ছবি: কৌশিক সরকার মেকআপ: অনিরুদ্ধ চাকলাদার হেয়ার: মল্লিকা পাড়ুই।
সদ্য শেষ করেছেন ‘মহানায়ক’-এর শ্যুটিং। বৃষ্টিভেজা সকালে গল্ফগ্রিনের বাড়িতে পৌঁছে দেখা গেল তিনি সুকুমার রায় পড়ছেন।
• ‘মহানায়ক’ সিরিয়াল করার আগে লোকে কিন্তু আপনাকে চিনত না।
হ্যাঁ, তা বলতে পারেন। অডিয়েন্সের কাছে চট করে পৌঁছে গেছি। এটা আমার কেরিয়ারের ক্ষেত্রে খুব ইম্পর্ট্যান্ট।
• ঘরে ঘরে পৌঁছলেও উমা দেবীকে নিয়ে কিন্তু সমালোচনাও হচ্ছে।
প্রথম দিকে কিছু সমালোচনা হচ্ছিল। কিন্তু আমি নিজে এ সব খুব একটা ফেস করিনি। অনেকে আমাকে বলেছেন, উমাকে খুব বয়স্ক লাগছে। তবে কী জানেন, খুব ইয়ং, চুলবুলি দেখানোর মতো ক্যারেকটার কিন্তু আমার ছিল না। ক্যারেকটারের যে গাম্ভীর্যটা দরকার ছিল সেটা আমার চেহারায়, আমার লুকে মেনটেন করার চেষ্টা হয়েছে।
• গৌরীদেবীর যে লক্ষ্মীমন্ত মুখ। সেটার সঙ্গে আপনার মুখের আদল একদম মেলে না। চরিত্রটা করতে রাজি হলেন কেন?
দেখুন, লক্ষ্মীমন্ত বউ-এর ছবি তৈরি করাটা বোধহয় উদ্দেশ্য ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল কারেক্টরাইজেশনটা। গৌরীদেবীর মতো দেখতে কাউকে যদি কাস্ট করা হতো, তা হলেও কি কথা হতো না? হতো। আর লক্ষ্মীমুখের যে ধারণাটা আমাদের সবার মধ্যে রয়েছে সেটা একেবারে নিখুঁত। তা হলে তো ঐশ্বর্যা রাইকে কাস্ট করতে হয়! কমলদা( কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়) আমার অভিনয়ে বিশ্বাস রেখেছিলেন। দেখতে সুন্দর-টুন্দর বোধহয় খুব একটা ম্যাটার করেনি। লোকের খারাপ লাগলে আর কী করতে পারি! সিরিয়ালটা তো হয়ে গেছে। এখন সরি বলে দিতে পারি।
• অন্যদের যেমন রেফারেন্স ছিল, আপনার তো তেমন কিছু ছিল না। কী করে উমা দেবী হয়ে উঠলেন?
গৌরীদেবীকে দেখাটা তো সম্ভব ছিল না। সবটাই ইনফর্মেশনের উপর দাঁড়িয়ে। ওঁর জীবনের নানান ঘটনা, গল্পের মতো শুনেছি। বইয়ে পড়েছি। ওঁর চরিত্রের বিভিন্ন দিক রয়েছে। কখনও উনি বাড়ির দায়িত্বশীল বউ, কখনও প্রচণ্ড অভিমানী, কখনও প্রেমিকা, আবার কখনও রাগী, ছেলেমানুষ — প্রতিটার রেফারেন্স আছে। সেগুলো মাথায় রেখে এগিয়েছি। আর আমরা কেউই তো এগজ্যাক্ট ওই ক্যারেক্টরগুলো করছি না। এই লিবার্টিটা ছিল। ফলে অসুবিধে হয়নি।
• আচ্ছা, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘ক্ষত’ ও ‘মহানায়ক’ করার পর মাইলেজটা তো বেড়ে গেল।
মাইলেজ! এখনও কিছু বুঝিনি। এটা বুঝতে পারব যখন নেক্সট কাজটা পাব। উমার চেয়ে স্ট্রং ক্যারেকটার এখনও পর্যন্ত আমার কাছে আসেনি। আজকের দিনে একটা কাজ দিয়ে কিছু হয় না। চারিদিকে যেমন অনেক ঘটনা ঘটছে, তেমন অনেক ভাল কাজও হচ্ছে। কতটা মাইলেজ পেলাম বোঝার জন্য নেক্সট অফার অবধি ওয়েট করতে হবে।
• ওঁর সঙ্গে আপনার কেমিস্ট্রিটা কেমন বলুন তো?
(চোখ গোল গোল করে) আপনারা বলুন কেমিস্ট্রিটা কেমন? কেমন লাগছে আপনাদের, আমাদের কেমিস্ট্রি দেখতে?
• আর অফস্ক্রিন কেমিস্ট্রি...
এখন আমি বুম্বাদার সঙ্গে খুব কমফর্টেবল। তবে ‘ক্ষত’-তে বুম্বাদাকে দেখে নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম (হাসি)। একটা সিন ছিল, যেখানে পাওলি আর বুম্বাদা। আমার এন্ট্রি। উফ! কী নার্ভাস লাগছিল। ডায়ালগ গুলিয়ে একাকার কাণ্ড। কমলদা (কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়) এসে আমায় বুঝিয়েছিলেন (হো হো হো)।
• নার্ভাসনেসটা কাটালেন কী ভাবে?
বুম্বাদা এত সুইট। পরের দিন শটের আগে আমায় ডেকে নিয়ে গিয়ে রিহার্সাল করিয়েছিলেন। এর পর আমি ফ্রি হয়ে গিয়েছিলাম। ‘মহানায়ক’-এর সেটে আর অসুবিধে হয়নি। ফার্স্ট ডে-তে আমার আর বুম্বাদার লিপলক সিন ছিল। সবাই ভাবছিল আমি নতুন মেয়ে... কিন্তু শটগুলো জাস্ট ‘ওকে’ হচ্ছিল। ইউনিটের সবাই বলল কেমিস্ট্রিটা নাকি খুব ভাল লাগছে (একগাল হাসি)।
• আচ্ছা, আপনার ব্যাকগ্রাউন্ডটা বলুন না।
বাবা ডব্লিউবিসিএস অফিসার ছিলেন। ফলে ছোট থেকে নানান জায়গায় ঘুরেছি। জন্ম বহরমপুরে। স্কুল লাইফের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় ক্লাস এইট থেকে টুয়েলভ পর্যন্ত পড়েছি দুর্গাপুরে। ভাল মার্কস থাকায় শ্রীশিক্ষায়তনে জিওগ্রাফি অনার্সে চান্স পেয়ে গিয়েছিলাম। সেই আমার কলকাতা আসা। কিন্তু পোষাল না। অ্যাডমিশন নেওয়ার পরেও রবীন্দ্রভারতীতে ড্রামা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। বুঝলাম এই কাজটাই আমার দ্বারা হবে (হাসি) ইউনিভার্সিটিতে পড়তে পড়তেই সীমা মুখোপাধ্যায়ের ‘রূংরূপ’-এ জয়েন করি। আস্তে আস্তে বদলে গেল জীবনটা। কত গুণী মানুষের সঙ্গে কাজ করলাম। বিভাস চক্রবর্তী, উষা গঙ্গোপাধ্যায়, সুমন মুখোপাধ্যায়। কত কী শিখেছি ওঁদের কাছে। তারপর সিনেমায়।
• ‘মহানায়ক’-এ ফিরি। সিরিয়ালটার টিআরপি কম। শো টাইমিংও সন্ধে সাতটা থেকে চেঞ্জ হয়ে রাত এগারোটা হয়ে গেল। খারাপ লাগছে তো...
হ্যাঁ, এটা স্যাড। আমার মনে হয় টেলিভিশনে ‘মহানায়ক’ খুব ইন্টারেস্টিং একটা কাজ। এই লুকে, এ রকম অ্যাপ্রোচে কাজ আগে হয়নি। অন্যান্য সিরিয়ালের অ্যাক্টিং প্যাটার্নের থেকে এই সিরিয়ালের অ্যাক্টিং প্যাটার্নের তফাত রয়েছে। অনেকেই বলছেন আমরা সিনেমার মতো অ্যাক্টিং করেছি। তা কিন্তু নয়। আর আজকাল সবাই সবেতে গালাগালি করে। একবাক্যে ভাল বলছে, এই সংখ্যাটাও যেমন থাকবে আবার কিছু লোক অপছন্দ করবে সেটাও মানতে হবে।
• ‘মহানায়ক’-এর শ্যুটিং তো শেষ। এ বার...
পরিচালক অরুণ রায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ বছরে ওঁর নতুন কাজ শুরু হতে পারে। আরও অনেকের সঙ্গে কাজ করতে চাই আমি। সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অরিন্দম শীল। কমলদার সঙ্গে আমি কমফর্টেবল। ওঁর সঙ্গে আরও কাজ করতে চাই।
• যেহেতু উমা করছেন আপনাকে প্রশ্ন করি। সোজাসুজি বলবেন কিন্তু
হ্যাঁ, বলুন না...
• আপনার বিয়ের পর আপনার স্বামী যদি একাধিক মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন, মানতে পারবেন?
পাগল নাকি! আমি খুব পজেসিভ। প্রচণ্ড ঝামেলা হবে। উমার মতো খুব রেগে যাব (হাসি)। আসলে সম্পর্কে বিশ্বাসটা খুব জরুরি। উমা তো এত সবের পরেও থেকে গিয়েছিল, ও দারুণ প্রেমিকা। রিয়েল লাইফে এমন হলে আমি সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে যাব।
•প্রেম করছেন বলেই কি সম্পর্ক নিয়ে এখনই এতটা পজেসিভ?
(অবাক চোখে তাকিয়ে) না, না। প্রেম করছি না। বন্ধুবান্ধব রয়েছে। কোনও প্রেম বা সম্পর্কের মধ্যে আমি নেই।
• প্রেম না হোক, ঘনিষ্ঠ বন্ধু...নাটকের জগতের বা সিনেমার। নামটা লুকিয়ে না রেখে বলুন না...
আমি খোলামেলা মিশি বলি আমায় নিয়ে নানান আলোচনা হয়। আর এখানে সবাই তো আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। থিয়েটারের কারও যদি নাম করি, সেও তো কোনও না কোনও ভাবে এই ইন্ডাস্ট্রির, তার পর কোথা থেকে কী বেরিয়ে যাবে (হা হা হা)। আলোচনাটা বরং থাক।
• সেফ খেলবেন না...
সেফ খেলাটাও তো প্র্যাকটিস করতে হবে (হাসি)। কোনও ছেলের সঙ্গে ছেলের বন্ধুত্ব হলে ব্যাপারটাকে সেই চোখে দেখা হয় না। অথচ কোনও ছেলের সঙ্গে মেয়ের বন্ধুত্ব হলেই লোকে বলে, ডেটিং করছে। এই ডেটিং ব্যাপারটা আমার মাথায় ঢোকে না। বিশ্বাস করুন বয়ফ্রেন্ড নেই...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy