শরীর জড়ানো একটা ম্যাক্সি ড্রেস আর হাতে রঙবেরঙের বালা। টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির উঠতি তারা সোহিনী সরকার কোক আর পিজ্জার জমায়েতে আড্ডা দিতে বসলেন আনন্দplus-এর সঙ্গে। তাঁর বাড়িতেই জমল আড্ডা। সেই বাড়ি অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতায় মোড়া... বেশ আরামেরও বটে!
আপনার কি ভূতের ভয় নেই? একা এই বাড়িতে থাকেন?
(হাসি) না, আমি ভূত-ভবিষ্যতে বিশ্বাস করি। সম্প্রতি হুমায়ূন আহমেদের গল্প পড়ছি। উনি অধ্যাপক, মনস্তত্ত্ববিদ। সাঙ্ঘাতিক ভূতের গল্প লেখেন। এমনি ভূতের গল্প নয়। খুব সায়কোলজিক্যাল। আমি দেখলাম রাতের বেলায় পড়তে আমার ভয় লাগছে, আবার ভালও লাগছে। আমি অন্ধকারে ভয় পাই। ভূতের নয়।
তার মানে অনেক ওঝা চেনা আছে...
(জোর হাসি) হ্যাঁ! আমি তো সাহিত্য পড়তে ভালবাসি। সাহিত্যে বারবার করে আসে ওগুলো। সাহিত্যের ভূত।
শুনেছি ‘ফড়িং’য়ের মতো উড়ে বেড়ান...
আমি যদি একটা জায়গায় বসেও থাকি, আমার মন একই জায়গায় বসে থাকে না। উড়ু উড়ু সব সময় (চোখ টিপে)। আমি ফ্রি লাইফ লিড করি।
আপনার এক্স ফ্যাক্টরটা কী?
আমি খুব স্বতঃস্ফূর্ত। সেটাই আমার এক্স ফ্যাক্টর। আমি যে খুব সুন্দরী, সেটা তো নয়। কিন্তু আমি স্বতঃস্ফূর্ত, আর যা বলি, খুব ন্যাচারালি বলি, মন থেকে বলি। গুছিয়ে মিথ্যে বলি না। হয়তো আমার শব্দচয়নগুলো এদিক ওদিক হয়ে যেতে পারে। কিন্তু যা বলি বা করি, দুটোই মন থেকে হয়। ফিজিক্যাল এক্স ফ্যাক্টর যদি বলো, তা হলেই বলতে পারি আমি অন্য বাঙালি মেয়েদের চেয়ে বেশি লম্বা।
আপনার গুণগ্রাহীর লাইনটাও লম্বা...
আমি নিজেকে নিয়ে এত ভাবি না। আয়নায় যখন নিজেকে দেখি, দেখি যে ওজনটা বাড়ল কিনা। তা ছাড়া আর কিছু দেখি না। সত্যি বলছি, ফিল্ম না করলে আমি গোয়াতে শ্যাক চালাতাম।
ইন্ডাস্ট্রিতে আপনি যাঁদের আকর্ষণীয় মনে করেন, দশের মধ্যে তাঁদের কত নম্বর দিতে চাইবেন?
তাঁদের সঙ্গে অভিনয় করে বা কথা বলে যা মনে হয়েছে, তার ভিত্তিতেই বলব। কারণ কাউকে অন্য ভাবে ‘ম্যান’ হিসেবে তো আর পাইনি। ঋত্বিকদাকে দশে আট দেব। ও আমায় খুব অনুপ্রাণিত করে। ঋত্বিকদা যদি ছ’ফুট হত বা চার ফুট হত, জানি না কী হত। কিন্তু ঋত্বিকদা তো ঋত্বিকদাই। সেকেন্ড যিশুদা। ওকে আমি সাত দেব। দেখতে খুব সুন্দর, খুব ভাল স্বামী, খুব ভাল বাবা। তার ওপর ও আমার ছোটবেলার ক্রাশ। কী করে ভুলব বলুন? পরমব্রতকেও আমার খুব ভাল লাগে। ওকে আমি ছয় দেব। আবীরও আছে। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে ছেলেদের অপশন খুব কম। আরও হলে ভাল হত।
সবাইকে কি দাদা বলেই ডাকেন?
জানেন তো এটা নিয়ে খুব চাপে পড়ে যাই। যখন ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন ছিলাম, একজন সিনিয়র অভিনেত্রী আমাকে এটা নিয়ে বকেছিলেন। তখন কাউকে দাদা, দিদি বলতাম না। তার পর থেকে বলা শুরু করলাম। আর জানেনই তো বাঙালিদের দাদা-দিদির ব্যাপারটা। ওটা তো হয়েই যায় (হাসি)।
তা হলে বড়দা, মেজদা, ফুলদা কাদের বলবেন?
বড়দা অবশ্যই বুম্বাদা। উনি সব রকম ছবিতেই হিট। মেজদা আমি ঋত্বিককে বলব। আর দেব ফুলদা।
বাণিজ্যিক ছবি করবেন না?
আমি ওই সব ছবির সঙ্গে রিলেট করতে পারি না। বিশ্বাসও করতে পারি না। নিজেও মূলধারার ছবি তখনই করব, যদি গল্পটা বাস্তব হয়। নয়তো করতে পারব না। হঠাৎ করে কেউ সুইজারল্যান্ডে গিয়ে নাচগান করছে— সেটা বিশ্বাস করতে পারি না। কমার্শিয়াল সিনেমা যদি কোনও দিন করি, সেটা আমার পছন্দের ছবিগুলোর মার্কেটিংয়ে সাহায্য করবে, সেটা ভেবে করব। শুনেছি যে ছবির ডিস্ট্রিবিউশন করতে গিয়ে আমাদের নাম না হয়ে যদি কোনও ‘ম’, ‘স’-এর নাম হত, তা হলে বোধহয় বেশি কাজে দিত। সুতরাং ওরা অভিনয় করতে পারে কি পারে না সেটা বড় কথা নয়। তারা আছে বলেই সেই ছবির ডিস্ট্রিবিউশন করতে সুবিধে হয়। আমি যদি ওই ছবি করতাম, তা হলে নিশ্চিত ভাবে ওদের চেয়ে ভাল অভিনয় করতাম।
টালিগঞ্জে কেউ আপনাকে এমন কিছু বলেছেন, যা শুনে চমকে গিয়েছেন?
তোমাকে আমার বৌয়ের মতো দেখতে (চোখ টিপে হাসি)।
আপনি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। উচ্চাকাঙ্খী। এক নম্বরে পৌঁছতে আপনার পরিকল্পনা কী?
এগুলো নিয়ে বড্ড চাপ। এই চাপ আমি নিতে চাই না। অনেক বছর তো হয়ে গেল ইন্ডাস্ট্রিতে। আমি আর এগুলো নিয়ে বাঁচতে চাই না। আমায় সব সময় লাইমলাইটে থাকতে হবে— কাজ না করতে পারলে মরেই যাব, আমার এই ব্যাপারটা নেই। হ্যাঁ, ব্যাঙ্কে টাকা হতে হবে। কিন্তু এটা নয় যে আজ আমি গাড়ি চড়ে ঘুরছি। কাল টাকা না থাকলে ট্যাক্সি করে যাব বা আরও কম টাকা থাকলে বাসে যেতে হবে। এটায় আমার অসুবিধে নেই। যদি কোনও অসুবিধে থেকেও থাকে, আমি সেটা কাটিয়ে দিতে চাই। স্টারডম নিয়ে বাঁচাটা দমবন্ধ করা। স্টারডম নিয়ে দম বন্ধ করে থাকাটা দু’সাইজ ছোট অন্তর্বাস পরিয়ে দেওয়ার মতো। আমি ছোট অর্ন্তবাস পরতে চাই না।
তা হলে ছবিতে এলেন কেন?
কারণ ছবি ইতিহাস তৈরি করে। সিরিয়ালে কোনও সিনে যতই ভাল অভিনয় করি, লোকে সেটা ওই মুহূর্তের জন্য মনে রাখে। পরে ভুলে যায়। সিনেমার প্রতি আমার ভালবাসাটাকে তাই আটকে রাখতে পারলাম না...
আপনার ছবি ‘ঝুমুরা’ রিলিজ হচ্ছে এই সপ্তাহে। সেখানে আপনার দ্বৈত চরিত্র। আপনি কি সেই স্তরে পৌঁছেছেন যেখানে গিয়ে দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করা যায়?
‘ঝুমুরা’-এ ঠিক ডাবল রোল নেই। খুব সুন্দর গল্প। মজার ছবি। গল্পটাতে মনে হবে যে গল্প শোনাচ্ছে, তার মাধ্যমে অন্যরা সেখানে পৌঁছে যাচ্ছে। আমি নিজেকে অন্য এক চরিত্রে দেখতে পাচ্ছি। সব চরিত্র দু’বার করে আসছে। দু’টো চরিত্র এক্কেবারে আলাদা। করতে কোনও অসুবিধে হয়নি। সমস্যা তখনই হয় যখন দু’টো চরিত্রের বৈশিষ্ট্য কাছাকাছি হয়। এই ছবিতে একটি মেয়ে সাংবাদিক। আর একজন সাঁওতালি। একদম আলাদা দুই চরিত্র। শেড একদম আলাদা। সময় আলাদা। জার্নালিস্ট চরিত্রটা করতে কোনও গবেষণার প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু অন্য চরিত্রের কোনও রেফারেন্স আমার কাছে ছিল না। ছবিটা করতে আমি প্রচুর হোমওয়ার্ক করেছি।
কোয়ালিটি মিটারে আপনার মতো যাঁরা চরিত্রাভিনেত্রী হয়েও লিড রোলে খুব জনপ্রিয়, তাঁদের কত নম্বর দেবেন?
সুদীপ্তাকে অবশ্যই আট দেব। পাওলি সাত। গার্গী ছয়। সম্প্রতি জয়া এহসানের সঙ্গেও কাজ করেছি। ওকে আট দেব। ঋতুদি সব নম্বরের ঊর্ধ্বে।
নিজেকে কত নম্বর দেবেন?
আমি তো শূন্য। তার আগে যা নম্বর ইচ্ছে হয় বসিয়ে নিন।
ছবি: কৌশিক সরকার; মেক আপ: সোনালী কর্মকার; পোশাক: সুমন নাথওয়ানি লোকেশন সৌজন্য: দ্য পার্ক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy