Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Aindrila Sharma Death

ভাবতে পারছি না, কোনও উৎসবে ও আমাকে আর জড়িয়ে ধরবে না

‘‘ঐন্দ্রিলার সঙ্গে আমার পরিচয় বহরমপুরের নতুন বাজারের সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী স্যরের ‘চয়নিকা’ নাচের স্কুলে। ছোট থেকে আমরা একসঙ্গে নাচ শিখতাম। ও আমার থেকে কিছুটা ছোট। ওর ডাক নাম মিষ্টি।’’

ঐন্দ্রিলার সঙ্গে তাঁর প্রথম পরিচয় বহরমপুরের ‘চয়নিকা’ নাচের স্কুলে, জানালেন প্রয়াত অভিনেত্রীর বান্ধবী পর্ণা বিশ্বাস।

ঐন্দ্রিলার সঙ্গে তাঁর প্রথম পরিচয় বহরমপুরের ‘চয়নিকা’ নাচের স্কুলে, জানালেন প্রয়াত অভিনেত্রীর বান্ধবী পর্ণা বিশ্বাস। — নিজস্ব চিত্র।

পর্ণা বিশ্বাস (লেখক: ঐন্দ্রিলা শর্মার বান্ধবী)
পর্ণা বিশ্বাস (লেখক: ঐন্দ্রিলা শর্মার বান্ধবী)
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২২ ১৩:৫৮
Share: Save:

ঐন্দ্রিলার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় বহরমপুরের নতুন বাজারের সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী স্যরের ‘চয়নিকা’ নাচের স্কুলে। ছোট থেকে আমরা একসঙ্গে নাচ শিখতাম। ও আমার থেকে কিছুটা ছোট। ওর ডাক নাম মিষ্টি। মিষ্টির চলে যাওয়ার খবরটা পাওয়ার পর থেকে আমার সেই সব দিনের কথা খালি মনে পড়ছে।

আমরা দু’জনে নাচের স্যরের খুব প্রিয় ছিলাম। ছোট হলেও ওই সময় থেকেই ঐন্দ্রিলা প্রচণ্ড পরিশ্রমী ছিল। ও সকালবেলা স্কুলে যেত। স্কুল শেষ করে টিউশন পড়ে তার পর নাচ শিখতে আসত। নাচের ক্লাসের ফাঁকে ও পরের টিউশনের পড়াও তৈরি করে নিত। পড়া তৈরি হয়ে গেলে ওর মাকে ফোন করত। সেটা ওর মা মানে কাকিমাকে শোনাত। মাঝেমাঝে পরীক্ষা হত টিউশনে। কখনও যদি ও ১০-এর মধ্যে নয় পেত, তা হলে প্রচণ্ড বিরক্ত হত। কম পেলেই মাকে ফোন করে বলত, ‘‘ওটা পারিনি। এটা ভুল করেছি। এটা আমায় শিখিয়ে দেবে।’’ যে দিন ও ১০ পেত সে দিন ওকে পায় কে! সে দিন ও অন্য মেজাজে থাকত। একটা নাচ এক বারেই আয়ত্ত করে নিত। যে কোনও নাচ উপস্থাপন করার ভঙ্গিমা অসাধারণ ছিল ওর। আমরা মুগ্ধ হয়ে দেখতাম ওর নাচ। স্যরও বলতেন, ‘‘ওকে দেখে তোমরা শেখো।’’

ছোট থেকেই ওর মধ্যে আমরা দেখেছি ভরপুর ইতিবাচক মানসিকতা। বহরমপুরের মতো মফস্‌সল শহরে ড্রেস কোড একটা বড় ব্যাপার ছিল। সবাই তাকিয়ে থাকে, আমরা কী ধরনের পোশাক পরছি, কী ভাবে পরছি, সেই দিকে। আমরা ভয়ে ভয়ে থাকতাম যে, আমি যদি এটা পরি তবে পাড়ার লোকে কী বলবে? মিষ্টি অবশ্য ছোট থেকেই একটু সাহসী পোশাক পরত। অন্য রকম ভাবে চুল কাটত। মানে একদম ‘কুল’। সব সময় ও বলত, ‘‘কী হয়েছে? আমার জীবন। আমার পোশাক। আমি পরব। মানুষের কথা মানুষ বলবে।’’ ও নিজেকে সব সময় এতটা ‘কুল’ রাখত দেখে আমাদেরও ভাল লাগত। কাকিমা ওকে সব সময় অনুশাসনের মধ্যে রাখতেন। কখনও ওকে একা কোথাও যেতে দিতেন না। নাচের ক্লাস শেষ করে আমরা সবাই একসঙ্গে ফিরতাম।

প্রথম বার মিষ্টির যখন ক্যানসার ধরা পড়ল, তখন ওকে বাড়িতে দেখতে যাই। বিছানায় শুয়ে থাকলেও ওর মধ্যে ভীষণ ইতিবাচক মানসিকতা দেখেছিলাম। আমি তো একরাশ মনখারাপ নিয়ে দেখা করতে গিয়েছিলাম ওর সঙ্গে। কিন্তু ও এমন ভাবে কথা বলতে শুরু করল যে, আমার মন ভাল হয়ে গেল। আইসক্রিম খেতে মিষ্টি খুব ভালবাসত। আমি সেই সময় ওর জন্য একটা আইসক্রিম নিয়ে গিয়েছিলাম। ওই অবস্থাতেও মাকে ও বলেছিল, ‘‘মা, পর্ণাকেও একটা আইসক্রিম দাও।’’ ও খুব হাসিখুশি ছিল। সব সময় হাহাহিহি করত। আনন্দে থাকত। মাতিয়ে রাখত। কখনও মুখ চেপে হাসতে পারত না।

এক বার রাস্তায় দেখা হতেই আমাকে স্কুটি করে বাড়ি দিয়ে গেল। সেই সময় পিছনে বসে আমার মনে হচ্ছিল, ও যেন বয়ফ্রেন্ড। ঈশ্বর ওকে নিজের হাতে তৈরি করেছিলেন। সব কিছুতেই একদম ‘পারফেক্ট’। এত মিশুকে স্বভাবের মধ্যেও ওর মধ্যে একটা অন্য ব্যক্তিত্ব ছিল। যে কেউ চাইলেই ওকে ছুঁতে পারত না। আমাদের সকলের থেকে ও একদম আলাদা ছিল এই জায়গায়।

প্রথমে একটা নাচের রিয়্যালিটি শো-তে ও অংশগ্রহণ করেছিল। একের পর এক এপিসোডে ও সেরা হচ্ছিল। হঠাৎ করে লিগামেন্ট ছিঁড়ে গিয়ে সেখান থেকে ফিরতে হয় ওকে। দীর্ঘ চিকিৎসার পর আবার নাচ শুরু করে মিষ্টি। ওখান থেকেই বোধ হয় ওর লড়াইয়ের শুরু। গত বছর সব্যসাচী, মিষ্টি এবং আমি একসঙ্গে পুজোয় ঘুরলাম। সব্য ভীষণ ভাল মানুষ। যত বার পুরনো সেই দিনগুলো আমার মনে পড়ছে, তত বার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। হয়তো আমাদের রোজ কথা হত না, তবুও ওর এবং আমার মধ্যে একটা খুব ভাল বন্ডিং ছিল। দেখা হলেই ও আমাকে জড়িয়ে ধরত। ওকে আর ও ভাবে দেখতে পাব না।

এই মাত্র খবর পেলাম, আমাদের মিষ্টি আর নেই। ওর টানা কয়েক বছরের লড়াই শেষ হল। এর বেশি কিছু বলতে ভাল লাগছে না। এটা ভাবতে পারছি না যে, আর কোনও আনন্দ উৎসবে ও ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরবে না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE