Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Radio Channel

বাংলার বুকেই বন্ধ হল বাংলা এফএম চ্যানেল

সম্প্রতি নিঃশব্দে হারিয়ে গেল একটি জনপ্রিয় বাংলা গানের এফএম চ্যানেলে। এর অন্যতম কারণ অবশ্যই যুবসমাজের রুচির বদল। লিখেছেন শিক্ষক সুদেব বসু।এই চ্যানেলের প্রচারের ক্যাচলাইনটাও ছিল এটাই, কলকাতার মানুষের জন্য কলকাতা পরিচালিত চ্যানেল।

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৫:২৭
Share: Save:

আমাদের ছেলেবেলায় এমন অনেক কিছু ছিল যা আজ আর নেই, এরকম একটা লাইন দিয়ে সত্যজিৎ রায় শুরু করেছিলেন ‘যখন ছোট ছিলাম’ বইটা। কথাটা কলকাতার পরিপ্রেক্ষিতেও খাটে। কলকাতা তো শুধু শহর নয়, তা এমন এক সত্তা যা বিভিন্ন স্মৃতির অনুষঙ্গে জড়িয়ে থাকে তার মানুষের সঙ্গে। সময় যত এগোয়, ততই লম্বা হয় সেই তালিকা। সম্প্রতি সেই হারানো কলকাতার তালিকায় যোগ হল একটি জনপ্রিয় এফএম চ্যানেলের নাম। সেদিন সকালে নব ঘুরিয়ে পাওয়া গেল না তার খোঁজ। ক্ষোভ জানালেন কাজ হারানো কর্মীরা, পাল্টা জবাব দিল মার্কেটিং-এর দায়িত্বে থাকা সংস্থা। অনেকদিন ধরেই ক্ষতিতে চলা এই চ্যানেল বন্ধের নোটিশ আগেই দেওয়া হয়েছিল। চলতে থাকল দোষারোপের পালা। থেমেও গেল।

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। মধ্যবিত্ত বাঙালি বাড়ি থেকে ছোট কারখানা, পাড়ার সেলুন থেকে মিষ্টির দোকানের অলস দুপুর, হাওয়ায় ভেসে আসত চেনা সুর ‘কলকাতার গান, কলকাতার প্রাণ’....এই চ্যানেলের সবচেয়ে বড় ইউএসপি ছিল এটাই। নিখাদ বাঙালির চ্যানেল, বাংলা গানের চ্যানেল। এই চ্যানেলের প্রচারের ক্যাচলাইনটাও ছিল এটাই, কলকাতার মানুষের জন্য কলকাতা পরিচালিত চ্যানেল। জনপ্রিয়তায় যে কোনও চ্যানেলের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা রাখা এই এফএম চ্যানেলটি ছিল বাংলা ব্যান্ড ও সিনেমার গানের আদর্শ প্ল্যাটফর্ম। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা বাংলা সিনেমার গানের স্বাদ নেওয়ার জন্য রেডিওর নব ঘুরিয়ে এখানেই আসতেন বাঙালি শ্রোতা। গানে গানে মনখারাপ করা বিকেল পালটে যেত হালকা মেজাজের সন্ধ্যেয়।

শুধু এটুকুই নয়। এই চ্যানেলটি রকমারি শ্রোতার জন্য নানা অনুষ্ঠান সাজিয়ে রাখত। কখনও উঠতি অভিনেতা-অভিনেত্রীর টক শো। কখনও প্রেমদিবস স্পেশাল। কখনও বয়ঃসন্ধির সমস্যা নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান, ফোনে থাকতেন শ্রোতা। রেডিও বহুকাল ধরেই বাঙালির কাছে এক সুন্দর নস্টালজিয়া। সেই ‘বোরোলিনের সংসার’, ‘গল্পদাদুর আসর’ থেকেই। রবিবার সকালে গান শেখাচ্ছেন প্রবাদপ্রতিম পঙ্কজ মল্লিক, এমন চমৎকার অনুষ্ঠানও পেয়েছে বাঙালি শৈশব। কিন্তু টিভির চরম দাপটেও যে রেডিওর প্রচার বিলুপ্ত ডোডোপাখি হয়ে যায়নি তার কারণ সময়ের সঙ্গে পাল্টে যাওয়া। হয়তো যন্ত্রটা ক্রমশ বিরল হয়ে গিয়েছে, কিন্তু মোবাইলে এফএম রেডিও ধরে রেখেছিল অস্তিত্ব। সঙ্গে ছিল চলমান গাড়িতে গান শোনার ব্যবস্থা। সেখানেও নব ঘুরিয়ে রবীন্দ্রনাথের গান থেকে বাংলা ব্যান্ডের গান সবই ছিল। কিন্তু শেষ তিন-চার বছরে সামাজিক মাধ্যম এতটাই সুলভ হয়েছে, বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এতটাই কাছে এসে গিয়েছে যে এফএমের জনপ্রিয়তা বেশ কিছুটা কমেছে। আর একটা কারণ অবশ্যই যুবসমাজের রুচি পাল্টে যাওয়া। হিন্দি গানের প্রতি তীব্র আকর্ষণ, কথার মাঝে ইংরেজি শব্দের স্রোত— এগুলোও বাঙালির চ্যানেলকে পিছনে ফেলছিল। তাই ইথার তরঙ্গের জগৎ থেকে নিঃশব্দে হারিয়ে যাওয়ার পিছনে বাঙালির কোণঠাসা হওয়াও কি একটা কারণ নয়?

এখন আমরা শুধু গুণতে পারি হারানো মণিমুক্তোর সংখ্যা। দোতলা বাস, পার্কস্ট্রিটের মিউজ়িক ওয়ার্ল্ড, ধর্মতলার বোর্ন অ্যান্ড শেপার্ড।

কলকাতার ল্যান্ডস্কেপের এক-একটা রং ক্রমশ ফিকে হচ্ছে। বাঙালির এফএম চ্যানেলের নিঃশব্দে হারিয়ে যাওয়া আরও ধূসর করে দিল কল্লোলিনীর সাজকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Radio Channel Bengali
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy