কাঞ্চন-শ্রীময়ী। ছবি: সংগৃহীত।
দোলের আগে যুগলে হাজির। কথা ছিল বিয়ের পরেই আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে দেখা হবে। যে সময়ের কথা সে সময় তাঁরা, ‘সাংবাদিক, গাড়ির চালক ও নিরাপত্তারক্ষীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ’ বিতর্কে জড়িয়ে পড়েননি। কাঞ্চন-শ্রীময়ী। ঝলমলে তাঁদের বিয়ে-পরবর্তী নতুন প্রেম। সাক্ষাৎকার দিতে বসে শ্রীময়ী জানালেন, কাঞ্চনই বলে দিয়েছেন কোন শাড়ির সঙ্গে কী কী গয়না পরবেন তিনি।
প্রশ্ন: বিয়ের পরে কতটা বদলে গেলেন শ্রীময়ী?
কাঞ্চন: এখন বেশ অন্য রকম লাগছে। সিঁথিতে সিঁদুর পরানোর পর থেকেই আলাদা। যেন অন্য কোনও বৌদি (মজা করে)।
শ্রীময়ী: কী যে হয়েছে ওর। হঠাৎ করে দেখছি আমি একটানা কথা বলে যাচ্ছি, হাঁ করে আমায় দেখছে। আসলে আমাদের বন্ধুত্ব থেকে বিয়ে, তার পরে প্রেম। এই সম্পর্কের কম লড়াই তো ছিল না। ‘পরকীয়া’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হল। তার পর কাঞ্চনের বিচ্ছেদ নিয়ে ওঠাপড়া। বিয়ে যে হবে সেটাও ভাবিনি।
কাঞ্চন: তবে তৃতীয় বিয়ে করেছি, বেশ করেছি। কারও কিচ্ছু বলার নেই। বেশ করেছি!
প্রশ্ন: আপনি নিজের বিষয়ে এত কম কথা বলেন, কিছুই তো বোঝা যায় না! তিনটে বিয়ে, বিচ্ছেদ…
শ্রীময়ী: ওটাই তো! ও তো মুখচোরা। এ রকম যে কত বার হয়েছে, আমাদের সামনে এক জন মিথ্যে বলে চলেছে, ও চুপ করে শুনছে। কিছুই বলে না। বিচ্ছেদ নিয়েও তো কিছু বলল না। চুপ করে থাকে।
প্রশ্ন: আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া পিঙ্কির সাক্ষাৎকার শুনেও কি চুপ থাকবেন?
কাঞ্চন: শ্রীময়ী তো জানিয়েছিল যে আমরা সাক্ষাৎকার দেখেছি। ওরা ভাল থাকুক। ছেলে মানুষ হোক। ওর শৈশবে যেন বার্ধক্য না আসে।
প্রশ্ন: এই কথার অর্থ কী?
কাঞ্চন: ছেলের মুখে খুব ভারী কথা যেন বসিয়ে না দেওয়া হয়। ওর যে প্রাণবন্ত শৈশব...
প্রশ্ন: আপনি তো ওকে দেখতেই যান না, আপনি শৈশবের কথা বলছেন?
কাঞ্চন: আসলে আমি তো কিছু বলি না। আমি ছেলেকে নিরপেক্ষ স্থানে দেখতে চেয়েছিলাম। অপর পক্ষের অনুমতি মেলেনি। অপর পক্ষ বলেছিলেন তাঁর বাড়িতে গিয়ে ছেলেকে দেখতে হবে, নয়তো আদালতে। বাবা হিসাবে ছেলেকে আদালতে টেনে আনতে চাইনি। রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ নির্ধারিত অর্থও দিয়েছি। হ্যাঁ, এ বার আনন্দবাজার অনলাইনকে কিছু বলতে চাই...
প্রশ্ন: বলুন...
কাঞ্চন: আমার বাবা আমার কাছেই থাকুক। ওই যে ‘সৌম্যকান্তি’, ‘চায়ের পার্টনার’, এ সব বলা... (পিঙ্কি আনন্দবাজার অনলাইনের সাক্ষাৎকারে কাঞ্চনের বাবা সম্পর্কে এই কথা বলেছিলেন), সেই বাবা যখন আদরের নাতিকে কোনও এক দশমীর দিন দেখতে চাইল, তাকে তো আনা গেল না! বাবার শেষ দিনের অসুস্থতায়ও ‘চায়ের পার্টনার’-এর দেখা নেই! সংসারটা ঠিক করে করলে এই আবেগ তৈরি হত। ঘাটকজেও দেখা মেলেনি! তাই আবার বলছি, আমার বাবা-মা আমার কাছেই থাক। আর সাতাশ বছর ধরে বাবা অন্ধ ছিলেন না। ভুল তথ্য। বত্রিশ বছর। আমার বাবার সম্পর্কে কেউ ভুল বললে গায়ে লাগে। আমাদের বিচ্ছেদ উভয়ের সম্মতিক্রমে হয়েছে। আচমকা এক দুপুরে বা লকডাউনে পিঙ্কিকে বিচ্ছেদের নোটিস পাঠাইনি।
শ্রীময়ী: আমি একটা কথা বলি, বিবাহবিচ্ছিন্ন পুরুষকে বিয়ে করা যে ভুল, এটা আমি একদম মানি না। আমি তো উল্টো কথাই বলব। কাঞ্চন আইনত বিবাহবিচ্ছেদ করেছে। এ রকম তো নয়, যে একসঙ্গে তিনটে-চারটে বিয়ে করে রেখে দিয়েছে! একসঙ্গে থাকতে না পারলে সম্পর্ক থেকে মানুষ সরে আসে। দু’জনেই ভুল করে। সেই কাঞ্চন বিয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে যে ভুল দেখতে পেয়েছে, সেই ভুল আর আমার সঙ্গে করবে না। আমি নিশ্চিত। তাই বিবাহবিচ্ছিন্ন পুরুষকেই বিয়ে করা উচিত বলে মনে করি।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনারাই তো ভয়ঙ্কর ‘ভুল’ করে বসলেন!
কাঞ্চন: আমি এই ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। মানুষ মাত্রেই তো ভুল হয়।
প্রশ্ন: কাঞ্চন মল্লিক ঘরের ছেলে, মাটি থেকে উঠে আসা মানুষ, আপনার এই ভাবমূর্তি তো নষ্ট হয়ে গেল...
শ্রীময়ী: নিরাপত্তারক্ষী, সাংবাদিক, গাড়ির চালক, এ ভাবে বলতে চাইনি আমরা।
প্রশ্ন: আপনারা তো তাই-ই বলেছেন।
শ্রীময়ী: আজ সাক্ষাৎকারে যতটা পরিষ্কার করে বলতে পারছি, তখন তা পারিনি। ৬ মার্চের পর থেকে বার বার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আমরা ক্ষমা চেয়েছি।
প্রশ্ন: সাংবাদিকেরা যখন এই চিহ্নিতকরণ দেখে আপনাদের ফোন করেন, তখন তো প্রথম দফায় আপনারা ফোন ধরছিলেন না...
কাঞ্চন: ওই দিন বৌভাত ছিল। লোকজন আসছেন। আমি ব্যস্ত ছিলাম। বিষয়টা এ রকম এত দ্রুত খারাপ জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে এটা বুঝতেও সময় লেগেছে। তবে আমি সকলের ফোন ধরেছি। বলেছি, ভুল হয়ে গিয়েছে। আমি সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। যে আমি গাড়ির চালককে কোনও দিন ‘ড্রাইভার’ বলিনি, ‘পাইলট’ বলেছি, সে কেন এমন করতে চাইবে?
প্রশ্ন: আর সাংবাদিক?
কাঞ্চন: আমি দেখেছি অনেক বর্ষীয়ান সাংবাদিক আমার বিরুদ্ধে সমাজমাধ্যমে লিখেছেন। তাঁদের পড়াশোনা, অভিজ্ঞতাকে সম্মান জানিয়ে বলছি, তাঁরা ঠিক করেছেন।
শ্রীময়ী: আমরা ভুল করলে সমালোচনা শুনতে প্রস্তুত। আজকাল তো কেউ কারও সমালোচনাই শোনে না। পুরো বিষয়টা অনভিপ্রেত। তবে একটা কথা না বলে পারছি না, কিছু ‘ভালগার’ মানুষ আছেন। তাঁরা যে ভাষায় আমাদের সম্পর্ককে প্রকাশ করেছেন শুধুমাত্র নিজেদের চ্যানেলে দর্শকসংখ্যা বাড়ানোর জন্য, তা দেখে আমাদেরও খুব খারাপ লেগেছে। কেন বলুন তো আমাদের শোয়ার ঘর নিয়ে আলোচনা হবে? আমাকে মদ্যপ অবস্থায় কোনও এক মহিলা সাংবাদিক রাত তিনটের সময় ফোন করে ফুলশয্যার ভিডিয়ো চাইবে?
প্রশ্ন: সমাজমাধ্যমে ছবি দিলে তার প্রতিক্রিয়া তো হবেই।
কাঞ্চন: আমাদের ছবি দেখে লোকে তো আমাদেরই জনপ্রিয় করে তুলল। সেটা আমরা কেউ চাইনি। এক এক জন এমন প্রশ্নও করেছেন, ‘‘এই কাঞ্চন তুই এত রোগা, পারবি তো?’’ যা শুনে রীতিমতো থমকে গিয়েছি। তৃতীয় বার যেন কেউ বিয়ে করেনি! আমি প্রথম!
শ্রীময়ী: কোনও বিবাহবিচ্ছিন্ন পুরুষ, যার সন্তান আছে, সে ভালবেসে বিয়ে করতে পারে না? এটা কি পৃথিবীতে প্রথম হল? আজও আমি জানি কাঞ্চনের ছেলে আগে। দেখা হোক বা না হোক, ছেলে-বাবার সম্পর্কই আলাদা।
কাঞ্চন: (পিঙ্কির সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ এনে) তবে তুই তো বিয়ে করার আগে পড়াশোনা করিসনি!
প্রশ্ন: সে কী! আপনারা এখনও তুই সম্বোধন করেন?
শ্রীময়ী: মাঝেমাঝে হয়ে যাচ্ছে। দাদাও বলে ফেলছি! (হাসি)
প্রশ্ন: বিয়ের পরে সব থেকে কী ভাল লাগছে?
শ্রীময়ী: (কাঞ্চনকে বলতে না দিয়ে) একসঙ্গে এক চাদরের তলায় নিশ্চিন্তের ঘুম!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy