Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Saayoni Ghosh

মমতার সভায় ‘বামপন্থী’ সায়নীর তৃণমূলে যোগ, ‘তুইও বিক্রি হয়ে গেলি!’ কটাক্ষ শ্রীলেখার

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে পথে নামতে দেখা গিয়েছিল সায়নীকে। চলচ্চিত্র উৎসব কেন মুখ্যমন্ত্রীর ছবিতে ছেয়ে থাকবে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি।

এক সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে পথেও নামেন সায়নী। চলচ্চিত্র উৎসব কেন মুখ্যমন্ত্রীর ছবিতে ছেয়ে থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে পথেও নামেন সায়নী। চলচ্চিত্র উৎসব কেন মুখ্যমন্ত্রীর ছবিতে ছেয়ে থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৬:১১
Share: Save:

ঘোষিত ভাবেই এত দিন বামপন্থী ছিলেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে পথে নামতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। টলিউডে ‘ঠোঁটকাটা’ বলে পরিচিত সেই সায়নী ঘোষ এ বার তৃণমূলে যোগ দিলেন। বুধবার হুগলির সাহাগঞ্জের ডানলপ মাঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তৃণমূলের সভায় জোড়াফুল পতাকা হাতে তুলে নিলেন তিনি। আর তাতেই উত্তাল নেটমাধ্যম। অভিনেত্রীর এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন তাঁর বন্ধুদের একাংশ। তাঁরা কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘রাজনৈতিক উচ্চাশা থাকতেই পারে। তাই বলে তৃণমূলে’? অনেকে আবার বিস্ময়-সহ জিজ্ঞাসা করেছেন, ‘সায়নী তুইও’!

সায়নী নিজে যদিও তাঁর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কারণ এখনও খোলসা করেননি। তবে তাঁর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়েছে। যেমন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। সায়নী তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন জানতে পেরে ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘তোর কাছ থেকে এটা আশা করিনি সায়নী। তুইও বিক্রি হয়ে গেলি? খেলতে নেমে গেলি? দেখে কষ্ট হচ্ছে’।
রাজনীতির ময়দানে ‘জয় শ্রীরাম’-এর মতো ধর্মীয় স্লোগানের বিরোধিতা করায় সম্প্রতি গেরুয়া শিবিরের রোষে পড়েছিলেন সায়নী। শিবরাত্রি নিয়ে তাঁর পোস্ট করা একটি পুরনো টুইট সামনে তুলে এনেছিলেন বিজেপি-র প্রবীণ নেতা তথাগত রায়। যেখানে শিবলিঙ্গে কন্ডোম পরানো এক মহিলাকে ‘বুলাদি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। সায়নী হিন্দু ধর্মের অপমান করেছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন তথাগত। বিষয়টি আদালতে পর্যন্ত পৌঁছয়।

শ্রীলেখার টুইট।

শ্রীলেখার টুইট।

সেই সময় সায়নীর সমর্থনে এগিয়ে আসেন মমতা। নেটমাধ্যমে সায়নীকে হুমকি দেওয়ার তীব্র সমালোচনা তো করেনই। ‘ক্ষমতা থাকলে সায়নীর গায়ে কেউ হাত দিয়ে দেখাক’ বলে হুঁশিয়ারিও দেন। তার পর থেকেই সায়নী এবং তৃণমূলের ‘পরিবর্তিত রসায়ন’ নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। বুধবার সায়নীর তৃণমূলে যোগদানের পর সেই জল্পনায় সিলমোহর পড়ে।

সাহাগঞ্জে সায়নীর সঙ্গেই জুন মাল্য, রাজ চক্রবর্তী, কাঞ্চন মল্লিক, মানালি দে, সুদেষ্ণা রায় এবং ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারি ও ফুটবলার সৌমিক দে জোড়াফুলের পতাকা হাতে তুলে নেন। এঁদের অনেকের সঙ্গেই তৃণমূলের নৈকট্য ছিল। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের দায়িত্ব রাজের হাতে যাওয়ার পিছনেও তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর ‘নৈকট্য’ই অনুঘটকের কাজ করেছিল বলে বিতর্ক শুরু হয়েছিল এক সময়ে। বাকিদের অনেককেই একাধিক বার সরকারি অনুষ্ঠানে তৃণমূলনেত্রীর পাশে দেখা গিয়েছে।

কিন্তু সায়নীর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক সে রকম ছিল না। বরং অনীক দত্তের রাজনৈতিক ব্যঙ্গধর্মী ছবি ‘ভবিষ্যতের ভূত’ দেখানোর জন্য হল না পাওয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হওয়ায় রাস্তায় নেমে তাঁকে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেও দেখা গিয়েছিল এক সময়। সেখানে চলচ্চিত্র উৎসবে ছবির পোস্টারের বদলে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি কেন থাকবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। সেই মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে সায়নীর তৃণমূলে যোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

তবে তৃণমূলে যোগ দিলেও বুধবার মমতা বা তৃণমূলের সমর্থনে সে ভাবে মন্তব্য করতে শোনা যায়নি সায়নীকে। বরং আগাগোড়া তাঁর নিশানায় ছিল বিজেপি। সায়নী সাহাগঞ্জের সভা থেকে বলেন, ‘‘দিদিকে ধন্যবাদ। এত কম বয়সে, কম সময়ে আমাকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। বাংলার মা-বোনেদের সম্মান রক্ষা করতে হবে আমাদের। বাংলায় শান্তি এবং সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। বাংলার মাটি ১০ কোটি বঙ্গবাসীর হৃদয়ের টুকরো এবং হৃদস্পন্দন। শুধুমাত্র ভোটের আগে তা কারও পাখির চোখ হয়ে উঠতে পারে না। নিজেদের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে আমাদের।’’

সায়নীকে দলে নিয়ে কী বলছেন দলনেত্রী মমতা? তিনি বলেন, ‘‘আজ সায়নী আপনাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সামান্য দুটো টুইট করেছে। সামান্য কথা বলেছে। সে জন্য প্রতি দিন ওকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। কয়েক জন অসভ্য লোক রয়েছে বিজেপি-তে। যা নয়, তা ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে ওকে। দেবলীনাকেও কী অপমানটাই না করেছে ওরা। তার পরেও বিজেপি করবেন? মা বোনেদের বিজেপি-তে পাঠাবেন? ওদের দলে মেয়েদের কোনও সম্মান নেই। যারা গিয়েছে, তাদের সঙ্গে প্রতি দিন কী ঘটে চলেছে, তা যদি বললে জল অনেক দূর গড়াবে। ওই দলে মেয়ে পাঠাবেন না।’’

বুধবার তৃণমূলে যোগ দিয়ে প্রথমেই ভাষণ দেন জুন মাল্য। তিনি বলেন, ‘‘এখন সবার মুখেই খেলা হবে স্লোগান শুনছি। আমি রাজনীতি বুঝি না। কিন্তু মানুষ বুঝি। নেতা বলতে এক জনকেই বুঝি। তিনি আমাদের দিদি মমতা। বাংলার মানুষ বাংলার মেয়েকেই চান। আমি দিদির সঙ্গে আছি এবং আজীবন থাকব।’’

এত দিন রাজনীতি থেকে সযত্নেই নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলেন কাঞ্চন মল্লিক। তিনি বলেন, ‘‘আপনারা হয়তো জিজ্ঞেস করবেন, গত ১০ বছর কেন চুপ করে ছিলাম? এত দিন কী করছিলাম? আসলে আমি দেখছিলাম। সত্যি বলতে কী রাজনীতি বুঝি না আমি। অভিনয় করি। মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই আমার কাজ। কারও চোখের জল দেখতে পারি না। বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এত দিন যাঁরা বলতেন এই দলে একটাই পোস্ট বাকি সব ল্যাম্পপোস্ট, আজ তাঁরাই সবুজ শিবির থেকে গিয়ে গেরুয়া বাগানে আলো দিচ্ছেন। আমাদের এই একটা পোস্টই যথেষ্ট। মানুষ বুঝিয়ে দেবেন। মমতা হ্যাট্রিক করবেন এবং ‘খেলা হবে’।’’

রাজনীতির ময়দানে শিল্পীদের আনাগোনা কোনও নতুন ঘটনা নয়। তাপস পাল, দেবশ্রী রায়, শতাব্দী রায়, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়েরা বছরের পর বছর ধরে রাজনীতি করেছেন। তাঁদের পর রাজনীতিতে পা রেখেছেন দেব, মিমি চক্রবর্তী, নুসরত জাহান, সোহম চক্রবর্তীর মতো নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা। আবার তৃণমূলের হাত ধরে যাত্রা শুরু করলেও গেরুয়া শিবিরে চলে যেতেও দেখা গিয়েছে লকেট চট্টোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষ এবং হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীদের।

তবে বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই ওতপ্রোত ভাবে তার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ। বিজেপি-র তরফেও চেষ্টায় কোনও খামতি নেই। সম্প্রতি টলিউডের প্রথম সারির একঝাঁক তারকার সঙ্গে কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে দেখা যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরকে। রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং তাঁর ভাই স্বরূপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ‘মাফিয়ারাজ’ চালানোর অভিযোগ এনে অভিনেতা থেকে কলাকুশলী, সকলকে নিয়ে মঙ্গলবার কলকাতায় ‘টলিউড বাঁচাও অভিযান’ করতে দেখা যায় বিজেপি-কে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy