জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই উত্তেজনা বেড়েছে সীমান্ত এলাকায়। তারই মাঝে শনিবার পুঞ্চ জেলায় নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) সংলগ্ন গ্রামে দেখা গেল ভিন্ন এক চিত্র। দিনভর ভূগর্ভস্থ ‘মোদী বাঙ্কারে’ রসদ জমা করতে দেখা গেল সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দাদের।
সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, সম্ভাব্য অশান্তির কথা মাথায় রেখেই ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারগুলিকে ফের বাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টা শুরু করেছেন স্থানীয়েরা। এএনআইয়ের একটি ভিডিয়োতে পুঞ্চের একটি গ্রামের বাসিন্দাদের ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারগুলি মেরামত করতে দেখা গিয়েছে। আবার পাক সামরিক ঘাঁটির কাছে অবস্থিত সালোত্রি এবং কর্মারহার মতো এলাকার বাসিন্দারা বাঙ্কারে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও মজুত করে রাখতে শুরু করে দিয়েছেন।
এক সময় বছরের পর বছর ধরে শান্ত, নিরিবিলি জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন এই গ্রামগুলির মানুষ। তাঁরাই এখন আসন্ন সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। সকলেই ভবিষ্যৎ হামলার আশঙ্কায় ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে কম্বল, বিছানা-সহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছেন। করমারহা গ্রামের এক বাসিন্দা এএনআইকে বলেন, “মানুষ বাঙ্কারগুলির কথা ভুলেই গিয়েছিল। এখন আবার সেগুলি পরিষ্কার করা হচ্ছে। আমরা আতঙ্কে আছি, তবে আশা করি উপত্যকায় শীঘ্রই শান্তি ফিরবে।’’ গ্রামের অন্য বাসিন্দাদের গলাতেও একই সুর। সরকার ও ভারতীয় সেনার প্রতিও দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে তাঁদের। পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘যখনই প্রয়োজন হবে, আমরা আমাদের সেনাবাহিনী এবং প্রশাসনের সম্পূর্ণ সহযোগিতা করব। প্রয়োজনে আমরা জীবনও দিতে প্রস্তুত।’’ তিনিই জানান, অনেক আগে ওই এলাকায় গোলাগুলি চলত। তবে দীর্ঘ দিন এমন দিন দেখেননি তাঁরা। সে কারণেই তাঁরা বাঙ্কারগুলি পরিষ্কার করে বাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করছেন, যাতে যে কোনও বিপদের সময় তাঁদের পরিবারকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
আরও পড়ুন:
কিন্তু কেন এ ধরনের বাঙ্কারকে ‘মোদী বাঙ্কার’ বলেন স্থানীয়েরা? তাঁরাই জানালেন উত্তর। বেশ কয়েক বছর আগে আন্তর্জাতিক সীমান্ত (আইবি) এবং নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের সময় এই ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারগুলি তৈরি করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে নির্মিত এই বাঙ্কারগুলি সীমান্তে গুলির লড়াইয়ের সময় সেখানকার সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। এর আগে পুঞ্চ, রাজৌরি, বারামুল্লা এবং কুপওয়ারার মতো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলিতে এ ধরনের একাধিক বাঙ্কার তৈরির জন্য আর্থিক সহায়তা এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করেছিল সরকার। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এত বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা সেই বাঙ্কারগুলির কথাই এখন মনে করছেন স্থানীয়েরা।