শিশির অধিকারী এবং লকেট চট্টোপাধ্যায়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাঁথির সভায় থাকার জন্য স্থানীয় সাংসদ শিশির অধিকারীকে আমন্ত্রণ জানাতে তাঁর বাড়িতে গেলেন বিজেপি-র সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। আগামী ২৪ মার্চ কাঁথিতে জনসভা করার কথা প্রধানমন্ত্রীর। শিশির কাঁথির সাংসদ। সেই সূত্রেই তাঁকে আমন্ত্রণ। সেই আহ্বান রক্ষা করে শিশির যদি শেষপর্যন্ত সত্যিই মোদীর সভায় হাজির হন, তা হলে বিধানসভা ভোটের আগে সেটি নিশ্চিত ভাবেই একটি অন্য ‘মোচড়’ তৈরি করবে।
বিজেপি সূত্রের খবর, শিশিরকে আমন্ত্রণ জানানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদী। সেই ইচ্ছা মেনেই লকেট গেলেন প্রবীণ রাজনীতিকের বাড়িতে।
শনিবার সকালে ওই বিষয়ে আনন্দবাজার ডিজিটালের তরফে যোগাযোগ করা হলে প্রবীণ সাংসদ জানান, লকেটের সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়েছে। তাঁর কাঁথির বাড়ি ‘শান্তিকুঞ্জ’-এ অনেকেই এসেছেন। লকেট এলেও আপত্তির কিছু নেই। শিশিরের কথায়, ‘‘আমার বাড়িতে দলমতনির্বিশেষে সকলেরই অবারিত দ্বার। এর আগেও অনেকে এসেছেন। ভবিষ্যতেও আসবেন। লকেট চাইলে উনিও নিশ্চয়ই আসতে পারেন। আমি অন্য সকলের মতোই তাঁকেও স্বাগত জানাব।’’ কিন্তু তিনি কি আমন্ত্রণ মেনে প্রধানমন্ত্রীর সভায় উপস্থিত থাকবেন? শিশিরের জবাব, ‘‘এখনও তেমন নির্দেশ পাইনি।’’ কার নির্দেশ, তা নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি অশীতিপর নেতা। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, কাঁথির অধিকারী পরিবার এখন একজনের নির্দেশই মেনে চলছে— শুভেন্দু অধিকারী। অর্থাৎ, শিশির তাঁর মেজোছেলের নির্দেশের অপেক্ষায়।
আর লকেট শনিবার সকালে আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলছেন, ‘‘কাঁথিতে এই প্রথম মোদী’জি আসছেন। সেই শহরের প্রবীণতম রাজনীতিককে প্রণাম করে সভার প্রস্তুতি শুরু করতে চাই। ওঁর অভিজ্ঞতা বিশাল। সেটা কাজে লাগাতে ওঁর পরামর্শ এবং আশীর্বাদ চাই আমরা।’’ শিশির কি মোদীর মঞ্চে থাকবেন? লকেটের জবাব, ‘‘সেটা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। আমি শুধু একটা বড় দায়িত্ব পালনের আগে ওঁর আশীর্বাদ নিতে চাই। তার পর কাঁথি শহরে একটা প্রস্তুতি বৈঠক করব।’’ সেই বৈঠক হবে ‘চারুভিলা’য়।
শিশিরকে ‘স্থানীয় সাংসদ’ হিসেবেই আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে বিজেপি সূত্রের খবর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে স্থানীয় সাংসদ বা বিধায়কদের আমন্ত্রণ জানানোর রেওয়াজ নেই। যদিও সরকারি কর্মসূচিতে ওই আমন্ত্রণ জানানোই রেওয়াজ। প্রধানমন্ত্রী কাঁথির সভায় আসছেন পুরোদস্তুর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে। বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে। কারণ, ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর আর সরকারি কোনও কর্মসূচি হওয়ার প্রশ্ন নেই। ফলে শিশিরকে ওই রাজনৈতিক সভায় আমন্ত্রণ জানানো যেমন ‘তাৎপর্যপূর্ণ’, তেমনই এটাও দেখার যে, শিশির ওই আমন্ত্রণ গ্রহণ করলে তার অভিঘাত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। বিরোধী শিবিরের প্রধান নেতার রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য তৃণমূল তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয় কি না, দেখার সেটাও।
শিশিরকে আমন্ত্রণের পাশাপাশি লকেট বা বিজেপি-র অন্য কোনও নেতা তাঁর সেজো ছেলে তথা তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দুকে আমন্ত্রণ জানান কি না, সেটাও দেখার। আমন্ত্রণ পেলে দিব্যেন্দু সেই সভায় হাজির হন কি না, দেখার সেটাও। প্রসঙ্গত, হলদিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সরকারি কর্মসূচিতে দিব্যেন্দুকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল স্থানীয় সাংসদ হিসেবে। সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে দিব্যেন্দু সেখানে হাজিরও ছিলেন। কিন্তু সেটি একান্ত ভাবেই ‘সরকারি কর্মসূচি’ হওয়ায় বিতর্ক তোলার কোনও অবকাশ পাওয়া যায়নি। যদিও তৃণমূল শিবিরের সকলেই বুঝেছিলেন, ঘটনার গতিপ্রকৃতি কোনদিকে যাচ্ছে। এখন মোদীর নির্বাচনী জনসভায় দিব্যেন্দুকে আমন্ত্রণ জানানো হয় কি না, তা যেমন দেখার, তেমনই দেখার, দিব্যেন্দু সেই সভায় হাজির থাকেন কি না। সেদিক দিয়ে ২৪ মার্চ বাংলার রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হতে চলেছে। যার তিনদিন পর, ২৭ মার্চ বাংলায় ভোটগ্রহণ শুরু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy