Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
KANCHAN MALLIK

কাঞ্চন মল্লিক । উত্তরপাড়া

আনন্দবাজার ডিজিটাল
শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২১ ১৯:০৯
Share: Save:

পেটে খিলে ভোটে সয়: অনেক হাসি এবং হাসানো হল। কিন্তু ভোটে শেষ হাসিটা হাসবে কে? কাঞ্চন আত্মবিশ্বাসী। বলছেন, বিধানসভা ভোটে উত্তরপাড়ায় মানুষের পেটে খিল ধরিয়ে দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জিতে যাবেন।

বায়বীয়: প্রচারে মানুষের মন জয় করতে নানা উপায় নিয়েছেন। কখনও মানুষকে হাসাচ্ছেন। কখনও মাঠে বাচ্চাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলছেন। তাজা থাকতে, অনুপ্রেরণা পেতে নাইট্রোজেন-হিলিয়াম যা পাচ্ছেন, তা-ই ফুসফুসে ভরে নিচ্ছেন। শরীরটা চাঙ্গা রাখতে হবে তো!

রোগা-দারোগা: তিনি রোগা হতে পারেন। কিন্তু ভিতরে ভিতরে দারোগা। টিংটিঙে চেহারা নিয়ে এই তাঁর জবাব। অন্তরের দারোগাগিগির প্রমাণ দিতে কড়া রোদ উপেক্ষা করে ‘বহিরাগত’ তকমা নিয়েই দিনে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটছেন হুগলির রাস্তায় রাস্তায়।

জয় কালী: কালীঘাট এলাকায় তিন পুরুষের বাস। আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাড়ারই লোক। একটা সময়ে ‘সক্রিয়’ বাম সমর্থক বলেই পরিচিত ছিলেন। তার পরে দিদির দিকে ঝুঁকে পড়েন। তবে দলীয় রাজনীতিতে এর আগে পা বাড়াননি। আর পা রেখেই সটান একেবারে প্রার্থী!

সেবিছে ঈশ্বর: কাঞ্চন কি ঈশ্বরে বিশ্বাসী? স্পষ্ট তথ্য নেই। তবে অন্য অনেক প্রার্থীর মতো তিনিও উত্তরপাড়ার মুক্তকেশী কালীমন্দিরে পুজো দিয়ে প্রচার শুরু করেছেন।

ধরো হাল শক্ত হাতে: বাবা ছিলেন কারখানা কর্মী। তাঁর সামান্য রোজগারে সংসার চলত। বড় ছেলে হয়ে পরিবারের হাল ধরতে কী না করতে হয়েছে কাঞ্চনকে। নামে কাঞ্চন থাকলেও জীবনে কাঞ্চন ছিল না। কষ্টের সংসার। অহং ছেড়ে বেরিয়ে সেলসম্যানগিরি, পার্লারের ম্যানেজারি— কী না করেছেন একটা সময়ে! আবার অভিনয় জীবনেও একাদিক্রমে বহুদিন সংগ্রাম করতে হয়েছে। তার পর প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন।

প্রেম-টেম: ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯৮৭ সালে মাধ্যমিক পাশ। কলেজে কমার্স নিয়ে পড়াশোনা। কিন্তু প্রথম প্রেমে পড়া ক্লাস এইটে! সেটা অবশ্য সবে শুরু। তার পর প্রচুর প্রেমে পড়েছেন কাঞ্চন। তবে একতরফা। নিজেই বলেন, একতরফা প্রেমের সংখ্যা দু’অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছে।

রমণীর গুণে: প্রথম বিয়ে টেকেনি। দ্বিতীয় বিবাহ পর্দার স্ত্রী-কে। পিঙ্কি বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’ ধারাবাহিকে একসঙ্গে অভিনয় করতেন দু’জন। বিয়ের প্রস্তাবেও রোমাঞ্চের মশলা দিতে ভোলেননি, ‘‘পিঙ্কু, আমার সংসারও তো সুখের হতে পারে তোমার গুণে।’’ সেই বিয়েরও তিন বছর পেরিয়ে গেল। ছেলে ওসোকে নিয়ে জমজমাট সংসার। গান শোনেন। ছেলের উৎসাহে মাঝে মাঝে লকডাউনের সময়ে বাগানও করেছেন। হলফনামা বলছে, স্ত্রী ও তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটির বেশি।

পড়াতে হয়, নইলে পিছিয়ে পড়তে হয়: ছেলেকে পড়াশোনা করানোর ব্যাপারে তিনি ‘পিছিয়ে পড়া বাবা’। সে সব দায়িত্ব স্ত্রী-র উপর। বাবা-ছেলে এক সঙ্গে হলে বরং ভিডিয়ো গেমের আওয়াজ বেশি পাওয়া যায়। প্রচারে গিয়ে ছেলের কথা মনে পড়ছে। এক মাস হয়ে গেল। দেখা নেই। ওসোকে বুঝিয়েছেন, একটা নতুন যুদ্ধে নেমেছেন। ছেলেও প্রাণভরে বাবাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে।

প্রথম সবকিছু: পর্দা সামলে এখনও মঞ্চ দাপাচ্ছেন। প্রায় ৩১ বছরের সম্পর্ক নাটকের সঙ্গে। মাঝে বিচ্ছেদ তৈরি হয়েছিল বটে। প্রেমে ভাটা পড়েনি। সময় কিছু কম পড়ে গিয়েছিল। ধারাবাহিক, ছবি আর যাত্রা সামলাতে গিয়ে হিমশিম। কিন্তু স্বীকার করেন, নাটকের মঞ্চই প্রথম প্রেম। প্রথম মঞ্চাভিনয় নয়ের দশকে ‘অচলায়তন’ নাটকে। ‘চেতনা’, ‘স্বপ্নসন্ধানী’র মতো একাধিক দলে নাটক করেছেন। ২ মে-র পরে ফের মঞ্চে ফিরবেন বলে আশা।

পান্তাভাত: জুড়ি মেলা ভার। এই প্রচণ্ড গরমে প্রচার করতে করতে এটাই নবতম উপলব্ধি। তবে এমনিতে পাঁঠার মাংস আর ভাত পেলে জিভের জল আটকে রাখতে পারেন না।

অন্য ধাতুর মানুষ: অর্ধেকের বেশি ছবিতে দর্শককে হাসিয়েছেন। গত জুলাইয়ে মাতৃবিয়োগ হয়। ২৪ ঘণ্টা না কাটতেই শ্যুটে ফিরে দর্শককে হাসাতে হয়েছিল কাঞ্চনকে। বন্ধু রুদ্রনীল ঘোষ নেটমাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘হ্যাঁ, অভিনেতারা ঠিক সহজ মানুষ নয়। হয়ত অন্য কিছু’। মায়ের শেষযাত্রায় ছিলেন রুদ্রনীল। এখন অবশ্য তাঁর যাত্রাপথ আলাদা হয়ে গিয়েছে। রুদ্র পদ্মফুলে। কাঞ্চন জোড়াফুলে।

বই-টই: অভিনয় থেকে অবসর পেলে সেই সময়ে হাতে থাকে বই। কমিক্স থেকে শুরু করে ক্লাসিক। বাংলা সাহিত্যেও চলাচল রয়েছে।

কিতনে আদমি থে: ছবি দেখতেও বেজায় ভালবাসেন তিনি। প্রিয় ছবির নাম জিজ্ঞাসা করলে চোখের পলক না ফেলে বলেন— ‘শোলে’। এ-ও জানাতে ভোলেন না যে, নিজেই ৯ থেকে ১০ বার বিভিন্ন শোয়ে গব্বর সিং সেজেছেন। আজ্ঞে হ্যাঁ। ওই চেহারা নিয়েও। ভিতরে তো দারোগা!

জনতা জংশন: প্রায় ৫১ বছরে পা রাখতে চললেন ‘জনতা এক্সপ্রেস’-এর নায়ক। ওই রিয়্যালিটি শো তাঁকে বাঙালির ‘ঘরের ছেলে’ তৈরি করেছে। জীবনের ধন কিছুই যায় না ফেলা। সেই শিক্ষা যে এখন কাজে লাগছে, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন। আপাতত ভোট এক্সপ্রেস নিয়ে জনতার জংশনের দিকে রওনা দিয়েছেন। ২ মে বোঝা যাবে, শেষমেশ তাঁর ট্রেন জংশনে পৌঁছল কি না।

তথ্য: স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়, রেখাচিত্র: সুমন চৌধুরী

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy