গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
প্রথম দু’দফার নির্বাচনে তৃণমূলের ‘তারকা’ প্রার্থীর আধিক্য দেখা গিয়েছিল। জুন মালিয়া, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সোহম চক্রবর্তীর মতো তারকাদের কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে, বিজেপি শিবিরেরও অশোক ডিন্ডা, হিরণ চট্টোপাধ্যায়রা ছিলেন প্রার্থী। কিন্তু তৃতীয় দফায় ছবিটা খানিক আলাদা। বিজেপি-র হয়ে যেখানে পাপিয়া অধিকারী, তনুশ্রী চক্রবর্তীর মতো অভিনেত্রী এবং ভোটের আসরে ‘আনকোরা’রা রয়েছেন, সেখানে এই দফায় তৃণমূলের ভরসা পেশাদার রাজনীতিকদের উপরেই।
তৃতীয় দফায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১৬টি, হাওড়ার ৭টি ও হুগলির ৮টি আসনে নির্বাচন। এই দফায় রাজনীতিতে নবীন পাপিয়া, তনুশ্রীদের পাশাপাশি রয়েছেন অভিজ্ঞ কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়রাও।
পাশাপাশিই, এই দফায় বিশেষ নজর থাকবে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রের দিকে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর পশ্চিমে জয়ের হ্যাটট্রিক করার লক্ষ্যে নামছেন রাজ্য বিধানসভার বিদায়ী স্পিকার বিমান। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী করেছে দেবোপম চট্টোপাধ্যায়কে। জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী বিমান। দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘিতে ফের একবার সিপিএম প্রার্থী করেছে কান্তিকে। ২০১১ ও ২০১৬ সালে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী দেবশ্রী রায়ের কাছে হেরেছিলেন কান্তি। কিন্তু এ বার দেবশ্রীকে টিকিট দেয়নি তৃণমূল। তাঁর বদলে প্রার্থী করেছে অলোক জলদাতাকে। তৃতীয় বারের চেষ্টায় রায়দিঘি উদ্ধার করতে মরিয়া বর্ষীয়ান বামনেতা কান্তি।
হুগলির তারকেশ্বরে লড়াই জমজমাট। ২০১১ এবং ২০১৬ সালে ওই কেন্দ্রে জিতেছিলেন তৃণমূলের রচপাল সিং। যদিও এ বার প্রার্থী রমেন্দু সিংহরায়। অন্যদিকে, এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী করেছে রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তকে। ভোটে দাঁড়ানোর পরেই রাজ্যসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন তিনি। দু’দিন আগেই তারকেশ্বরে জনসভা করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই কেন্দ্রে পালাবদলের জন্য প্রাক্তন সাংবাদিক ‘পদ্মভূষণ’ স্বপনের উপরেই ভরসা রেখেছে পদ্মশিবির।
হাওড়ার উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী নির্মল মাজি রাজ্যের বিদায়ী মন্ত্রী। বারবার বিতর্কের জন্য শিরোনামে থাকলেও নিজের বিধানসভায় ফের জেতার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী নির্মল। একই রকমের আত্মবিশ্বাস রয়েছে হাওড়ার আমতার কংগ্রেস প্রার্থী অসিত মিত্রের গলাতেও। রাজ্যে কংগ্রেসের খারাপ অবস্থার মধ্যেও ২০১১ এবং ২০১৬ সালে আমতা থেকে জিতে বিধায়ক হয়েছেন অসিত। এ বার জয়ের হ্যাটট্রিকের লক্ষ্যে নামবেন তিনিও।
হাওড়ার শ্যামপুরে লড়াই ত্রিমুখী। তৃণমূলের প্রার্থী গত চার বারের বিধায়ক কালীপদ মণ্ডল। তাঁর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের অমিতাভ (কাল্টু) চক্রবর্তী। ২০১৬ বিধানসভায় বড় ব্যবধানে হেরেছিলেন অমিতাভ। কিন্তু এ বার সেখানে বিজেপি প্রার্থী করেছে টলিউডের অভিনেত্রী তনুশ্রী চক্রবর্তীকে। তাই কিছুটা হলেও কালীপদর লড়াই কঠিন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
টলিউডের আরেক অভিনেত্রী পাপিয়াকে বিজেপি প্রার্থী করেছে উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রার্থী পুলক রায়। ২০১৬ থেকেই এই কেন্দ্রে বিধায়ক পুলক। গত বিধানসভায় উলুবেড়িয়া দক্ষিণে বিজেপি খুবই কম ভোট পেয়েছিল। ২০১৯ লোকসভায় ভোট অনেকটাই বাড়িয়েছে তারা। সেই জন্যই খানিক আশাবাদী পাপিয়া।
তৃতীয় দফায় নজরে থাকবেন হুগলির আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল খাঁ। বিজেপি-র বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁর স্ত্রী তিনি। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নিজের কেন্দ্রে ঢুকতে পারেননি সৌমিত্র। তাঁর হয়ে প্রচার করেছিলেন সুজাতা। অনেকে মনে করেন, একা হাতে স্বামীকে জিতিয়েছিলেন। যদিও সে সব এখন অতীত। মাঝে গেরুয়া শিবির ছেড়ে শাসক দলে নাম লিখিয়েছেন সুজাতা। আরামবাগ তৃণমূলের জেতা আসন। গত বিধানসভায় কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা জিতেছিলেন। কিন্তু এ বার প্রার্থী বদল করেছে শাসকদল। অবশ্য ২০১৯ লোকসভায় আরামবাগ থেকে তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দার খুবই কম ব্যবধানে জিতেছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy