Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
coronavirus

দেশে লক্ষাধিক সংক্রমণ, মহারাষ্ট্রেই ৫৭ হাজার, প্রথম তরঙ্গকেও ছাপিয়ে গেল দ্বিতীয় তরঙ্গ

দেশের এই দৈনিক সংক্রমণের সিংহভাগই ৯-১০টি রাজ্যে থেকে। আরও ৫-৬টি রাজ্যের পরিস্থিতি দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে।

দেশের দৈনিক সংক্রমণ এই প্রথম এক লক্ষ ছাড়াল।

দেশের দৈনিক সংক্রমণ এই প্রথম এক লক্ষ ছাড়াল। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২১ ১০:০৩
Share: Save:

অতিমারির প্রথম ঢেউয়ে যা হয়নি, তাই হল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে। দেশের দৈনিক সংক্রমণ ছাড়িয়ে গেল ১ লক্ষ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লক্ষ ৩ হাজার ৫৫৮ জন। এক দিনে এত লোক এর আগে আক্রান্ত হননি দেশে। গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর দেশের দৈনিক সংক্রমণ ছিল ৯৭ হাজার ৮৯৪। তার পর থেকে তা কমতে শুরু করে। ক্রম পর্যায়ে কমতে কমতে তা ১০ হাজারের নীচে নেমেছিল। এর কিছু দিনের মধ্যেই দেশে আছড়ে পড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। যার জেরে দৈনিক সংক্রমণ এই পর্যায়ে পৌঁছে গেল।

তবে দেশের এই দৈনিক সংক্রমণের সিংহভাগই ৯-১০টি রাজ্যে থেকে। আরও ৫-৬টি রাজ্যের পরিস্থিতি দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে। তবে মহারাষ্ট্রের মতো অবস্থায় এখনও অন্য রাজ্যেগুলিতে তৈরি হয়নি। গত ২৪ ঘণ্টায় মহারাষ্ট্রে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭ হাজার ৭৪ জন। গোটা করোনা পর্বে দেশের কোনও একটি রাজ্যে একদিনে সংক্রমণের নিরিখে যা সর্বোচ্চ। সে রাজ্যে বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি মুম্বইয়ের অবস্থাও খারাপ হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বাণিজ্যনগরীতে নতুন আক্রান্ত ১১ হাজার ১৬৩ জন। করোনা পর্বে দেশের কোনও একটি শহরে একদিনে সংক্রমণের নিরিখেও যা এখনও অবধি সর্বোচ্চ।

দেশের কোভিড পরিসংখ্যান।

দেশের কোভিড পরিসংখ্যান।

মহারাষ্ট্র ছাড়াও ছত্তীসগঢ়, কর্নাটক, তামিলনাড়ু, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ এবং গুজরাতেও কোভিড পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দিল্লিতে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৪ হাজার ৩৩ জন। এ বছরে এটাই রাজধানীতে হওয়া একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ। গত বছর ৪ ডিসেম্বর শেষবার দিল্লির দৈনিক সংক্রমণ ৪ হাজার ছাড়িয়েছিল। তার পর ছাড়াল সোমবার। একই অবস্থা ছত্তীসগঢ়ে। সেখানে আক্রান্ত ৫ হাজার ২৫০ জন। করোনার প্রথম দফাতেও এক দিনে এত লোক আক্রান্ত হননি ছত্তীসগঢ়ে। কর্নাটক এবং উত্তর প্রদেশেও গত ক’দিন ধরে দৈনিক সংক্রমণ ৪ হাজার ছাড়াচ্ছে। তামিলনাড়ুতে তা সাড়ে ৩ হাজার। পঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ এবং গুজরাতে দৈনিক আক্রান্ত ৩ হাজারের আশপাশে। দেশের দৈনিক আক্রান্তের সিংহভাগই এই ক’টি রাজ্যের।

এর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ, রাজস্থান, হরিয়ানা, তেলঙ্গানার অবস্থাও খারাপ হচ্ছে। ১ হাজারের নীচে থাকলেও বিহার, ঝাড়খণ্ড, জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, ওড়িশাতে দৈনিক সংক্রমণ গত ক’দিনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বেড়েছে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সংক্রমণেরর পাশাপাশি বাড়িয়ে দিয়েছে দেশের দৈনিক মৃত্যু। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মৃত্যু হয়েছে ৪৭৮ জনের। এর মধ্যে ২২২ জনই মহারাষ্ট্রের। দিল্লি এবং উত্তরপ্রদেশেও দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। দেশে সংক্রমণের হারও গত ক’দিনে বেড়েছে। সোমবার তা পৌঁছে গিয়েছে ১১.৫৯ শতাংশে। প্রায় ৫ মাস পর দেশের দৈনিক সংক্রমণ এই পর্যায়ে পৌঁছল। এই সংক্রমণ বৃদ্ধি বাড়িয়ে দিচ্ছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৫০ হাজার বৃদ্ধির জেরে দেশে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লক্ষ ৪১ হাজারে।

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন।)

হঠাৎ করে দেশের দৈনিক সংক্রমণ কেন এই পর্যায়ে গেল? এ নিয়ে নানা মত পোষণ করছেন বহু বিশেষজ্ঞরা। আরও বেশি সংক্রমক ক্ষমতাযুক্ত করোনাভাইরাসের নতুন প্রজাতিকে যেমন দায়ি করা হচ্ছে মাত্রাছাড়া সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কোভিডবিধি ঠিকমতো পালন না করাও কারণ হিসাবে উঠে আসছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এবং প্রশাসনের প্রচার সত্ত্বেও রাস্তাঘাটে, বাজারে দোকানে সাধারণ মানুষের গাদাগাদি করা ভিড় চোখে‌ পড়ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। পাশাপাশি মাস্ক পরাতেও অনীহা দেখা যাচ্ছে বড় অংশের মানুষের মধ্যে।

তাই এই সংক্রমণ রোধে লকডাউন ফিরিয়ে আনার কথা ভাবছে বেশ কয়েকটি রাজ্য। মহারাষ্ট্রে ইতিমধ্যেই জারি হয়েছে রাত্রিকালীন কার্ফু। এই কার্ফুর পাশাপাশি সপ্তাহান্তে সম্পূর্ণ লকডাউনের ঘোষণাও রবিবার করেছে উদ্ধবের নেতৃত্বাধীন সরকার। প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার সন্ধ্যা ৮টা থেকে শুরু হয়ে সেই লকডাউন চলবে সোমবার সকাল ৭টা পর্যন্ত। সে রাজ্যে সপ্তাহে বাকি ৫ দিন চলবে রাত্রিকালীন কার্ফু। পাশাপাশি রেস্তোরাঁ, পাব, শপিল মল, জিম, সিনেমা হল, সুইমিং পুলও সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ছত্তীসগঢ়ে যে সব জেলায় সংক্রমণ মাত্রাছাড়া, সেখানে সম্পূর্ণ লকডাউন জারি করেছে সে রাজ্যের সরকার। ১৯ এপ্রিল অবধি সে রাজ্যের প্রথম থেকে নবম শ্রেণির ক্লাস স্থগিত রাখা হয়েছে। অন্য রাজ্য থেকে কোনও ব্যক্তি রাজস্থানে ঢুকতে গেলে কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব, ছত্তীসগঢ়ের কোভিড পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার একটি দল পাঠাচ্ছে কেন্দ্র। গত কয়েক সপ্তাহে দেশের কোভিড সংক্রমণ যে পর্যায়ে পৌঁছে গেল, তা নিয়ে চিন্তিত কেন্দ্রের সরকারও। দেশের কোভিড পরিস্থিতি এবং টিকাকরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করতেই রবিবার উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই বৈঠকে ছিলেন পরিষদীয় সচিব, স্বাস্থ্যসচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সচিব।

অন্য বিষয়গুলি:

COVID-19 coronavirus Coronavirus in India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy