ফাইল চিত্র।
ভোট চলাকালীন আচরণবিধি ভেঙেই প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের অফিসারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন বলে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, রাজ্য প্রশাসনকে এ ভাবে নির্দেশ দেওয়ার অধিকার প্রধানমন্ত্রীর নেই।
রাজ্যে প্রচারে এসে শনিবার হরিপালের সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, বিজেপির সরকার এলে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই পিএম কিসান প্রকল্প কার্যকর হবে। তার পরেই সরকারি অফিসারদের উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য ছিল, যেখানে ভোট হয়ে গিয়েছে, সেখানে এখন থেকেই যেন কৃষকদের তথ্য জোগাড় শুরু করে দেওয়া হয়। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও আধার কার্ডের তথ্য সংগ্রহ করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছিলেন, পুজোর আগেই বাংলার কৃষকদের অ্যাকাউন্টে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা পৌঁছে দেবে বিজেপির সরকার এবং তার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। রাজ্যে তৃতীয় দফার ভোটের প্রচারের শেষ দিনে, রবিবার হুগলির খানাকুল ও পুরশুড়ায় এবং হাওড়া জেলার বাগনানের বাকসিতে তৃণমূলের তিনটি সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যেরই জবাব দিয়েছেন।
খানাকুল ও পুরশুড়ার সভায় মোদীকে বিঁধে মমতা বলেন, ‘‘তুমি করো না কিছু। মিথ্যা কথা বলো! একটা প্রধানমন্ত্রীর এ সব শোভা পায়! ভোটের আচরণবিধি কার্যকর থাকা অবস্থায় এক জন প্রধানমন্ত্রী হয়ে কী করে বলতে পারেন, রাজ্য সরকারের আফিসারেরা রেডি থাকুন! ডেটা তৈরি করে রাখুন, আমি শপথে আসব!’’ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তাঁর তোপ, “আমার রাজ্য সরকারকে কোনও নির্দেশ দেবার অধিকার আপনার নেই!’’
নির্বাচন কমিশন যে ভাবে দফায় দফায় রাজ্যের বিভিন্ন আধিকারিককে বদলি করছে, তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিকল্পিত ভাবে ভোট-মেশিন খারাপ করে দেওয়ার অভিযোগও করেন। মোদী-অমিত শাহেরা বাংলায় ২০০ আসনে জিতে সরকার গড়ার যে দাবি করছেন, তাকে ‘মিথ্যা গল্প’ আখ্যা দিয়ে মমতার মন্তব্য, ‘‘আগে ৫০টা আসন উতরোও! কোথা থেকে জিতবে, বুথে বসার এজেন্ট পায়নি!’’
বস্তুত, শুধু মুখ্যমন্ত্রীই নন, বিরোধী বাম ও কংগ্রেসের নেতারাও মনে করছেন, ভোট চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে ভাবে নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন জয়ের দাবি করছেন, তা অনৈতিক এবং বিধিভঙ্গেরও শামিল। পরবর্তী পর্বের ভোটের আগে মানুষকে ‘প্রভাবিত’ করার চেষ্টা মোদী-শাহেরা চালাচ্ছেন বলে তাঁদের অভিযোগ। একই ভাবে রাজ্য সরকারের অফিসারদের ‘চাপে’ রেখে তাঁদেরও প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছে, যা কখনওই প্রধানমন্ত্রীর করা উচিত নয়।
হুগলির পাশাপাশি হাওড়ার বাকসির সভাতেও মোদী-শাহকে এ দিন তীব্র আক্রমণ করেছেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ মোদী মিথ্যা কথা বলেন আর অমিত শাহ কুৎসা রটান। ইডি, সিবিআইকে নিয়ে দু’জনে সিন্ডিকেট চালাচ্ছেন। সিন্ডিকেট নম্বর ওয়ান আর সিন্ডিকেট নম্বর টু! অভিষেকের বাড়িতে পুলিশ পাঠাও, অরূপ বিশ্বাসের বাড়িতে পুলিশ পাঠাও, পুলকের (রায়) বাড়িতে পুলিশ পাঠাও— এই সব করছেন দু’জনে মিলে!’’ প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘কীসের এত ভয়, তুমি যদি জিতবেই? তা হলে পুলিশ নিয়ে এত লুকোচুরি খেলছো কেন? রোজ পুলিশ বদলি হচ্ছে।’’
প্রধানমন্ত্রীকে পাল্টা আক্রমণ করে মমতা এ দিন মোদীর সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের প্রসঙ্গও এনেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দিল্লিটাকে সর্বনাশ করে দিয়েছে। তিন দিনের জন্য বাংলাদেশ গিয়েছিলেন, ওখানে গিয়ে দাঙ্গা লাগিয়ে দিয়ে এসেছেন। আবার নাটক করে খুব ভাল। দাঙ্গা করিয়ে আবার চোখ দিয়ে জল পড়ে!’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে যুব তৃণমূল সভাপতি ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ দিন মোদী সরকারকে তুলোধনা করেছেন। অভিষেকের দাবি, ‘‘মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে প্রতি বছর ৭৫ হাজার কোটি টাকা রাজ্য থেকে কেটে নেয়। এত দিনে পাঁচ লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকা কেটে নিয়ে গিয়েছে। এই টাকা থাকলে আরও উন্নয়ন হতো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১০ হাজার কোটি খরচ করেছেন আমপানে। আর ওরা হাজার কোটি টাকা পাঠিয়ে বলছে, মোদীজি সব টাকা পাঠিয়েছে!’’ মোদীর ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের চেয়ে মমতার ‘স্বাস্থ্যসাথী’ অনেক ভাল বলেও ফের দাবি করেছেন অভিষেক। তাঁর দাবি, ‘‘স্বাস্থ্যসাথীর বদলে আয়ুষ্মান ভারত দেবে বলছে। কিন্তু ১০% মানুষ সেই কার্ড পাবে। বাড়িতে ছাদ থাকলে, রেডিও, ফ্রিজ, টিভি থাকলে আয়ুষ্মান ভারত পাবেন না। কিন্তু স্বাস্থ্যসাথী সকলের জন্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy