Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Nandigram

Bengal Polls: নন্দীগ্রামে কে জিতবে? দুই শিবিরের অঙ্ক থেকে দূরে ভোটের ভবিষ্যৎ বন্দি হলদিয়ায়

রাজ্যে পালাবদলের পরিচায়ক নন্দীগ্রামের রাজনৈতিক অভিমুখ কোন দিকে? তা কি রাজ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে তৃণমূলের ‘স্ট্রংরুম’ হিসাবেই পরিচিত থাকবে?

হলদিয়ার এই স্কুলেই রয়েছে নন্দীগ্রামের ইভিএম।

হলদিয়ার এই স্কুলেই রয়েছে নন্দীগ্রামের ইভিএম। নিজস্ব চিত্র

সুমন মণ্ডল 
হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২১ ২২:২৫
Share: Save:

আপাতত স্ট্রংরুমে নন্দীগ্রামের রায়। কিন্তু তা নিয়ে উৎকণ্ঠার পারদ চড়ছে তৃণমূল এবং বিজেপি দুই শিবিরেই। নন্দীগ্রামে যেমন, তেমনই গোটা রাজ্যে।

রাজ্যে পালাবদলের পরিচায়ক নন্দীগ্রামের রাজনৈতিক অভিমুখ এ বার কোন দিকে? তা কি রাজ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে তৃণমূলের ‘স্ট্রংরুম’ হিসাবেই পরিচিত থাকবে? না কি জোড়াফুলের সেই দুর্গে প্রবেশের রাস্তা খুঁজে পাবে বিজেপি? ভোট মিটলেও রাজ্যের সবচেয়ে বেশি আলোচিত এই কেন্দ্রের ভবিষ্যৎ ঘিরে দু’পক্ষই এখন মাথা ঘামাচ্ছে চুলচেরা বিশ্লেষণে।

কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ার গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল। ওখানেই আপাতত ‘বিশ্রাম’ নিচ্ছে নন্দীগ্রামের ইভিএম। প্রায় এক পক্ষ কাল কাটিয়ে আগামী ২ মে রাজ্যের ফল ঘোষণা। কিন্তু নন্দীগ্রামের তারকা-যুদ্ধে শেষ হাসি কে হাসবেন, কোন নক্ষত্রেরই বা পতন হবে, তলে তলে তার আভাস পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে দুই শিবিরই। দুই তাঁবুতেই কষা হচ্ছে নানা সমীকরণ এবং অজস্র অঙ্ক। তৃণমূল এবং বিজেপি, দু’তরফেরই দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ভোট ম্যানেজাররা জড়ো হয়েছেন। তাঁদেরই আভাস, নন্দীগ্রামে মমতা এবং শুভেন্দুর মধ্যে যিনিই জিতুন না কেন, তাঁদের জয়ের ব্যবধান হতে চলেছে টেনেটুনে হাজার দশেক ভোট।

হিসাবনিকাশ কষে নন্দীগ্রামে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি স্বদেশ দাস সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘দিদির জয় নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। এই বিষয়ে আমরা প্রাথমিক রিপোর্ট সংগ্রহ করেছি।’’ নন্দীগ্রামে দুটো ব্লক মিলিয়ে মোট ১৭টা গ্রাম পঞ্চায়েত। তৃণমূল নেতাদের দাবি, তার মধ্যে ৮টি পঞ্চায়েতে— মহম্মদপুরে ৩ হাজার, কেন্দেমারি-জালপাইতে ৭ হাজার, নন্দীগ্রামে ১ হাজার, গোকুলনগরে ১ হাজার, সামসাবাদে ৫ হাজার, দাউদপুরে ৬ হাজার, কালীচরণপুরে ৫ হাজার এবং সোনাচূড়ায় ১ হাজার ভোটে দলনেত্রী এগিয়ে থাকবেন। কিন্তু ওই নেতাদের আশঙ্কা, নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের ভেকুটিয়া পঞ্চায়েতে ৩ হাজার ভোটে পিছিয়ে যেতে পারে তৃণমূল। তবে ভোটের দিনের উষ্ণতা মেপে শাসকদলের নেতারা আন্দাজ করছেন, সমানে সমানে টক্কর হয়েছে হরিপুর পঞ্চায়েতে। বুথমুখী জনতার ভাষা বুঝে তাঁদের ধারণা, নন্দীগ্রাম ২ ব্লকের বয়াল ২ নম্বর পঞ্চায়েতে দেড় হাজার, খোদামবাড়ি ১ নম্বর পঞ্চায়েতে ৩ হাজার এবং বিরুলিয়ায় ৩ হাজার ভোটে বিজেপি-কে টেক্কা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তৃণমূলের। আবার আমদাবাদ ১ নম্বর পঞ্চায়েতে সমানে সমানে লড়াই হয়েছে বলেই মনে করছে জোড়াফুল শিবির। তবে নন্দীগ্রাম ২ নম্বর ব্লকেরই বয়াল ১ নম্বর পঞ্চায়েতে ৪ হাজার, খোদামবাড়ি ২ নম্বর পঞ্চায়েতে ৩ হাজার এবং আমদাবাদ ২ নম্বর পঞ্চায়েতে ২ হাজার ভোটে বিজেপি-র থেকে তারা পিছিয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা তৃণমূলের।

নন্দীগ্রামের ফলাফল নিয়ে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্রের দাবি, ‘‘দলনেত্রী এখানে ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটে জিতবেন।’’ তাঁর অভিযোগ, “ভোট চলাকালীন বিজেপি প্রচার করেছিল তৃণমূল নাকি ১০০ বুথে এজেন্ট দিতে পারেনি। এ সব ভুয়ো প্রচার করে রাজ্যের মানুষকে বোকা বানাতে চেষ্টা করেছিল। তবে দলনেত্রী ময়দানে নেমে বিরোধীদের এই প্রচারের যোগ্য জবাব দিয়েছেন।’’

অন্য দিকে, বিজেপি-র দাবি, নন্দীগ্রামের দু’টি ব্লক মিলিয়ে ৫০ হাজার ভোটে জয় পাবেন শুভেন্দু। যদিও বিজেপি-র একটি সূত্র জানাচ্ছে, নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকে ৬ থেকে ৭ হাজার লিড পেতে পারেন শুভেন্দু। পাশাপাশি, নন্দীগ্রাম ২ নম্বর ব্লকে তাঁর সম্ভাবনা রয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকার। বিজেপি-র তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নবারুণ নায়েকের দাবি, ‘‘সাংগঠনিক রিপোর্ট অনুযায়ী নন্দীগ্রামে আমরা ১৫ থেকে ২০ হাজার ভোটে এগিয়ে।’’

নন্দীগ্রাম ছাড়াও পূর্ব মেদিনীপুরের ১৬টি বিধানসভাতেই জয়ের আশা দেখছে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের দাবি, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ১৬টি আসনই তাদের দখলে আসবে। এর মধ্যে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অনুপ কুমার চক্রবর্তীর দায়িত্বে রয়েছে ৭টি বিধানসভা (কাঁথি উত্তর, কাঁথি দক্ষিণ, খেজুরি, ভগবানপুর, রামনগর, এগরা এবং পটাশপুর)। অনুপের কথায়, ‘‘তৃণমূলের অস্তিত্ব এ বার মুছে যাবে।’’ বাকি ৯টি আসন— নন্দীগ্রাম, চণ্ডীপুর, নন্দকুমার, হলদিয়া, মহিষাদল, তমলুক, ময়না, পূর্ব পাঁশকুড়া এবং পশ্চিম পাঁশকুড়া রয়েছে নবারুণের এক্তিয়ারে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের সংগঠন গত দেড় বছরে জেলা জুড়ে ব্যাপক কাজ করেছে। এই পরিস্থিতিতে ভোট পরবর্তী রিপোর্ট যা এসেছে তাতে এই সমস্ত বিধানসভা কেন্দ্রেই বিজেপি একচেটিয়া ভাবে জয় ছিনিয়ে নিতে পারবে।’’

জেলার ১৬টি বিধানসভা কেন্দ্রেই জয় ছিনিয়ে নেওয়ার দাবি করেছেন তৃণমূলের সৌমেনও। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘তৃণমূলের উন্নয়ন দেখেই মানুষ দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করেছেন।’’

নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে নন্দীগ্রামে মমতা এবং শুভেন্দু, এই ব্যূহের বাইরে রয়েছেন আর এক যোদ্ধা, বাম শিবিরের মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। কিন্তু তৃণমূল এবং বিজেপি দুই শিবিরই নন্দীগ্রামের লড়াই দ্বিমুখী বলেই মনে করছে। তবে নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের একাংশ মীনাক্ষীকে একেবারে উড়িয়েও দিচ্ছেন না। অনেকের মতে, বামপ্রার্থী লড়াইয়ের মূল বৃত্তের বাইরে অবস্থান করলেও তাঁর ঝুলিতে ভোট যাবে পাঁচ অঙ্কের। আরও এক ধাপ এগিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপি-র কেউ কেউ বলছেন, খুব কম হলেও, ১০ থেকে ১৫ হাজার ভোট পেতে পারেন মীনাক্ষী। যা প্রকারান্তরে যে কোনও দিকেই ‘খেলা’ ঘুরিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট বলে অনেকের ধারণা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy