শেষ দফাতেও মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ভোট হল। বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া বিরোধীরাও তেমন একটা অভিযোগ করল না। তবে, শেষবেলায় উত্তরবঙ্গে শাসক দলের দুই প্রার্থী তাঁদের কীর্তিকলাপের জেরেই নির্বাচন কমিশনের কোপে পড়লেন।
ভোটের দিন সকাল থেকেই খেল দেখিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। দু’একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা বাদ দিলে, রাজ্য পুলিশের ভূমিকাও ছিল ইতিবাচক। বুথে বুথে মানুষের লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে সকাল থেকে। যা দেখে দিনের শেষে বিরোধীরা বলেছেন, মানুষ নিজের ভোট নিজে দিয়েছেন। বর্তমান সরকারের আর ফিরে আসার কোনও সম্ভাবনা নেই। মানুষের উপর তারা ভরসা রেখেছে। সিপিএম-এর দাবি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ‘দফারফা’ হয়ে গিয়েছে। ভোট মিটতেই সাংবাদিক বৈঠক করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জানিয়ে দেন, সরকার গঠনের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে বাম-কংগ্রেস জোট। সন্ধ্যা পর্যন্ত শাসক দলের তরফে যদিও কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
সূর্যকান্ত মিশ্র ওই সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, ‘‘আগেই বলেছিলাম এই সরকারের দফারফা হবে। সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে।’’ আত্মবিশ্বাসী সূর্যকান্ত অবশ্য ভোট পরবর্তী হিংসার সম্ভাবনা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আজ নির্বাচনের পরে কী হবে জানি না। কিন্তু রাজ্যে যে ভাবে নির্বাচনোত্তর হিংসা হচ্ছে, তা মোটেই কাম্য নয়।’’ সূর্যবাবু বলেন, ‘‘সবচেয়ে নারকীয় ঘটনা হল নির্বাচন পরবর্তী হিংসায় পাঁচটি শিশুর আক্রান্ত হওয়া।’’ মুখ্যমন্ত্রী একজন শিশুরও খোঁজখবর না নেওয়ায়, তাঁর তীব্র সমালোচনা করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। ভোট পরবর্তী হিংসা থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘কোনও প্ররোচনা সৃষ্টি করবেন না। প্ররোচনার ফাঁদে পা দেবেন না। ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ সব রুখুন। তা সত্ত্বেও যদি হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে থাকে, প্রতিবাদ করুন, প্রতিরোধ করুন।’’
রাজ্যে ষষ্ঠ তথা শেষ দফার নির্বাচনে বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুরের ১৬টি এবং কোচবিহারের ৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ ছিল। বুথে বুথে তো বটেই, বুথের বাইরেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া নজরদারি ছিল। মানুষের জটলা দেখলেই তা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে চালানো হয়েছে তল্লাশিও। লাইন ভেঙে ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে গেলেও বাধা দিয়েছে তারা।
পাশাপাশি, এ দিন রাজ্য পুলিশকেও মেরুদণ্ড সোজা রেখেই কাজ করতে দেখা গিয়েছে। যেমন, পূর্ব মেদিনীপুরে ময়না কেন্দ্রের বাগচায় ভোট প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয় তৃণমূলের তিন কর্মীকে। একই অভিযোগে দক্ষিণ হরবুলি থেকে দুই তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। পাঁশকুড়াতেও বুথে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় বাম এজেন্টদের। অভিযোগ উঠতেই পুলিশ হস্তক্ষেপ করে তাঁদের বুথে বসানোর ব্যবস্থা করে। এমন তড়িঘড়ি পদক্ষেপ করে বেশ জায়গাতেই বাহবা কুড়িয়েছে রাজ্য পুলিশ।
তবে ব্যতিক্রম যে একেবারেই নেই, তা নয়। যেমন, পটাশপুরের বেশ কিছু বুথে মহিলাদের ভোট পুরুষরা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠলেও তাতে খুব একটা আমল দেয়নি তারা। কোচবিহারেও বেশ কয়েকটি বুথ থেকে বিরোধী এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অন্য দিকে, নন্দীগ্রামের বেশির ভাগ বুথেই এজেন্ট দিতে পারেনি বিরোধীরা। ২৭১টি বুথের মধ্যে ২০১টিতেই কোনও এজেন্ট বসাতে পারেনি তারা।
কোচবিহারে তৃণমূলের দুই প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং উদয়ন গুহের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন এফআইআর-এর নির্দেশ দেয়। রবীন্দ্রনাথবাবুর বিরুদ্ধে ভোটকর্মীকে হুমকি, ছাপ্পা ভোট এবং গাড়িতে তৃণমূলের লোগো লাগানোর অভিযোগ ওঠে। অন্য দিকে উদয়নবাবুর বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy