কর্মীদের সঙ্গে সিপিএম প্রার্থী সামসুল মোল্লা। — নিজস্ব চিত্র
আশঙ্কাটা আগে থেকেই ছিল। বুধবার রাত থেকে তার আভাসও মিলছিল। আর ভোট শুরু হতেই তাদের সক্রিয় উপস্থিতি চোখে পড়ল। এ দিন চাপড়ার বিভিন্ন বুথে বুথে সেই ভূতুড়েদের দাপট দেখা গেল। চাপড়ার ১১টি বুথে এজেন্ট দিতে পারেনি সিপিএম।
বহুদিনের সন্ত্রাস-কবলিত বেতবেড়িয়ায় চারটি, হৃদয়পুরে দু’টি, ব্রক্ষ্মনগরে দু’টি ও বাদলাঙ্গির তিনটি বুথে বিরোধীরা এজেন্টই দিতে পারেনি। তাদের অভিযোগ, ওই সব বুথে ভোটকর্মীদের নিষ্ক্রিয় করে রেখে শাসকদল নিজেদের মতো করে ভোট করিয়েছে। যাকে বলে একেবারে ‘ভূতের কেত্তন’। সকাল থেকেই বুথের আশেপাশে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেল এলাকার তৃণমূল নেতাদের। মানুষ ভোট দিতে এলেন। লাইনে দাঁড়ালেন। কিন্তু ভোটটা দিয়ে দিলেন অন্য কেউ। অন্তত এমনটাই অভিযোগ তুলতেন সিপিএম নেতারা।
রুকবানুর রহমানের ডান হাত সুকদেব ব্রক্ষ্ম। এই হৃদয়পুর পঞ্চায়েত এলাকার ভোটের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। আবার একই ভাবে রুকবানুরের বাঁ হাত বলে পরিচিত জেবের শেখের বাড়ি বাদলাঙ্গি এলাকায়। দাপট তারও কম নয়। অনেকেই বলছেন, এই মুহুর্তে তার দাপট নাকি সুকদেবের থেকে বেশি।
বিরোধী এজেন্টহীন ওই বুথগুলি থেকে তৃণমূল যে ভাল পরিমান ‘লিড’ পাবে, তা বলাই বাহুল্য। হৃদয়পুরের ২২ নম্বর বুথ ও বেতবেড়িয়ার ২৮ নম্বর বুথে গিয়ে দেখা গেল, ইভিএম বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে। ২২ নম্বর বুথে তো আবার সকাল থেকে মাইক্রো আবজারভার ছিলেন। তারপরও ওই বুথে ইভিএম এমন ভাবে রাখা ছিল যে, ‘থার্ড পোলিং’ অফিসারের বসার জায়গা থেকে ইভিএম পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল। সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা প্রশ্ন করলে মাইক্রো অবজারভার শুভঙ্কর ঘোষ স্পষ্ট করে কোনও জবাব দেননি।
এই সব বুথগুলিতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটাররা যেন ভয়ে সিঁটিয়ে আছেন। তবে সর্বত্র কিন্তু এক অবস্থা নয়। মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভবে ভোট দিয়েছেন বেশিরভাগ জায়গাতেই। জোটকর্মীরা অনেক জায়গাতেই সক্রিয় থেকে ভোট করিয়েছেন।
পরিস্থিতি যে অনেকটাই তাঁর অনুকূলে সেটা সকালেই শুরুর দিকেই বুঝে গিয়েছিলেন শামসুল ইসলাম মোল্লা। সকল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন বুথ ঘুরে দেখলেন। এজেন্ট ও কর্মীদের উৎসাহ দিলেন।
দুপুরের দিকে তাঁকে প্রশ্ন করা হল, এতগুলো বুথে এজেন্ট দিতে পারলেন না কেন? ‘‘ওরা এই ১১টা বুথে ঢেলে ছাপ্পা দিয়ে যে লিড তুলবে, আমি তিনটে পঞ্চায়েতে সেই লিড সামান করে নেব। তারপরই তো খেলা। মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছে। দেখুন না কি হয়।’’ সারা দিন দেখা গেল না রুকবানুরকে। দুপুরে অল্পক্ষণের জন্য তিনি ফোনে কথা বললেন, ‘‘আপনারা তো উল্টো লিখবেন। ঠিক কথা লেখেন না।’’ তবে তিনি যে সকাল থেকে বুথে বুথে ঘুরছেন সেটাও জানিয়ে দেন। চাপড়ার এই সব এলাকায় নীবর সন্ত্রাসের মাঝখানেও কিন্তু আরও একটা খেলা কাজ করেছে। কোথাও কোথাও বুথের পাশে চায়ের দোকানে কিংবা রাস্তার ধারে গাছের তলায় এমন ভাবে কোনও কোনও তৃণমূল নেতাকে দেখা গিয়েছে, যাদের দেখে মনেই হয়নি যে তাঁরা লড়াইয়ে রয়েছেন।
গতবারের ভোটের রুকবানুরের এজেন্ট হরিদাস প্রামানিক যেমন সারাটা দিন কাটালেন নিজের বাড়িতে। ফোনে যোগাযোগ রাখলেন অনুগামীদের সঙ্গে। ভোট কেমন হল? ফোনের ও প্রান্ত থেকে হরিদাসবাবু উত্তর, ‘‘কোথাও কোথাও কিন্তু চাপা সন্ত্রাস হচ্ছে।’’ যা শুনে চাপড়া বাঙ্গালঝি এলাকার এক তৃণমূল কর্মী বলে ওঠেন, ‘‘আমরা সবাই তৃণমূল। ভোট দেব শামশুলকে।’’
তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনের কথা জানতে আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।
কালি বিতর্ক। বছর দুয়েকের শিশুকে কোলে নিয়ে এক ব্যক্তি ভোটকেন্দ্রে এসেছিলেন। প্রিসাইডিং অফিসার তাঁর শিশুপুত্রের হাতেও কালি লাগিয়ে দেন। তা নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে পলাশিপাড়ার হরিনারায়ণপুর বুথের ঘটনা। পলাশিপাড়ার রিটার্নিং অফিসার দিব্যোজিৎ দাসের কাছে এ খবর পৌঁছতেই অচিন্ত্য সিংহরায় নামে ওই প্রিসাইডিং অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তারপরই বিতর্ক থেমে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy