Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

নির্দেশ ছিল মেরুদণ্ড সোজা রেখে চলার

২০১৫-য় বিধাননগর পুরভোটে প্রশাসনের ‘ইজ্জত হানি’ হয়েছিল। এ বার রুখতেই হবে— বিধাননগর বিধানভার কেন্দ্রের ২৭৩টি বুথের প্রিসাইডিং অফিসারদের তেমনই নির্দেশ দিয়েছিলেন রিটার্নিং অফিসার।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
সল্টলেক শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৩৭
Share: Save:

২০১৫-য় বিধাননগর পুরভোটে প্রশাসনের ‘ইজ্জত হানি’ হয়েছিল। এ বার রুখতেই হবে— বিধাননগর বিধানভার কেন্দ্রের ২৭৩টি বুথের প্রিসাইডিং অফিসারদের তেমনই নির্দেশ দিয়েছিলেন রিটার্নিং অফিসার। সোমবার ভোটের ফাঁকে এ কথা জানিয়ে ভারতীয় বিদ্যাভবন স্কুলের এক বুথের প্রিসাইডিং অফিসার বললেন, ‘‘শেষ ট্রেনিংয়ে রিটার্নিং অফিসার জানিয়ে দিয়েছেন, শিরদাঁড়া সোজা রেখে কাজ করতে। তা সে যে রাজনৈতিক দলই হোক না কেন!’’ তিনি জানান, রিটার্নিং অফিসার বলেছেন, ‘‘পুরভোটে প্রশাসনের মাথা হেঁট হয়েছে। তাই পিছনের দিকে তাকাবেন না। নিয়ম মেনে যা করতে হয় করবেন। কাউকেই ভয় করবেন না।’’

প্রশাসনের এই নির্দেশ এবং তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া নজরদারি। তাতেই পাল্টে গেল সল্টলেকে ঘটে যাওয়া ৭ মাসের আগের ভোট-চিত্র। খুশি এলাকার সব বয়সের ভোটারেরা। শুধু কেন্দ্রীয় বাহিনীই নয়, রাজ্য পুলিশের দাপাদাপিও চোখে পড়ার মতো। কোনও কোনও ক্ষেত্রে পুলিশের সেই ‘বাড়াবাড়ি’ ক্ষুব্ধ করেছে খোদ তৃণমূল প্রার্থী সুজিত বসুকেও। আর ওই ‘বাড়াবাড়ি’ই আখেরে ভোটারদের সুবিধা করেছে বলে মনে করছেন তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জোটপ্রার্থী অরুণাভ ঘোষ। দিনের শেষে তিনি বলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ ভোট করার জন্য বিধাননগর কমিশনারেটকে ধন্যবাদ।’’

ভোটে রিগিং করাটা সল্টলেকের দত্তাবাদে নাকি জলভাতের মতো। এ বারও তার আশঙ্কায় ছিল বিরোধীরা। আগে থেকেই তাই দত্তাবাদ নিয়ে নানা অভিযোগ জমা পড়েছিল প্রশাসনের কাছে। রবিবার রাত থেকে বিরোধী দলের সমর্থকদের ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠছিল। ভোট দিতে পারবেন কি না, আশঙ্কায় ছিলেন অনেকে। কিন্তু ভোট শুরুর পর থেকে দত্তাবাদের প্রায় হাজার ছয়েক ভোটারের বুকে ভরসা জুগিয়েছে কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী। শুধু বুথের মধ্যে নয়, অলিগলিতেও রুটমার্চ করেছে সিআরপি-র জওয়ানেরা। বুথের সামনে কেউ জড়ো হলেই হটিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাড়ে ৮টার মধ্যেই ভারতীয় বিদ্যাভবন স্কুলে প্রায় দেড় হাজার ভোটার ঢুকে পড়েন। তাতেও কোনও গণ্ডগোল হয়নি, সকলেই ভোট দিয়েছেন স্বস্তিতে।

বেলায় হঠাৎ খবর আসে, বেলেঘাটা থেকে ভোট দখলের অভিযানে একদল তৃণমূল সমর্থক দত্তাবাদে ঢুকছে। সেই খবরও পৌঁছে যায় বিধাননগর কমিশনারেটে। কমিশনারের নির্দেশে চলে নাকা-চেকিং। চারচাকা, মোটরবাইক আরোহীরদের আটকানো হয় সল্টলেকে ঢোকার মুখে। ফলে কার্যত এই প্রয়াসও ব্যর্থ হয় ওই সমর্থকদের।

বিডি স্কুলের সামনে যেখানে বোমা পড়েছিল গত বার, মার খেয়েছিলেন তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ প্রার্থী অনুপম দত্ত, সেই বুথের সামনেও চক্কর মেরেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। যা দেখে তৃণমূলের স্থানীয় এক নেতা (যাঁর দায়িত্বে ছিল ওই বুথ) বললেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ ভোটই চাই আমরা। একটা অ্যাসেসমেন্ট হবে। তাতে দল এক-দুটো আসন হারালেও ক্ষতি নেই।’’

দিনের শেষে মহিষবাথানের চকেরভেড়ি প্রাথমিক স্কুলের বুথে হাজির হন দুই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী অরুণাভ ঘোষ ও সুজিত বসু। তবে অরুণাভবাবুর লাল গাড়ি বেরিয়ে যেতেই ঢুকলেন সুজিতবাবু। বললেন, ‘‘লাল গাড়ির সওয়ারি ভাবছেন জিতে গিয়েছেন। ২৭৩টি বুথের মধ্যে বড়জোর ৭৩টি বুথে জিতবেন। বাকি ২০০ তৃণমূল দেখিয়ে দেবে।’’ অরুণাভবাবুর জবাব, ‘‘চেয়েছিলাম ভোটটা শান্তিতে হোক। তা হওয়ায় খুশি। হার-জিত তো গণনার পরের কথা।’’

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 spine election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE