সত্যনারায়ণের সিন্নি মানত আছে। পিরের মাজারে নতুন চাদর চড়ানোও বাদ যায়নি।
তবু সেই ‘হিটলিস্ট’-এ নাম!
ফের সেই বাক্স গুছিয়ে বুথমুখো হাঁটা, মেঝেয় চাদর বিছিয়ে রাতভর মশার কেত্তন আর সকাল হতেই চোখ বুজে আঙুলে কালি লাগিয়ে চলা।
এ একটা জীবন হল কালীদা!
কেষ্টনগরের কালীপদ দফাদার তাই কপাল ঠুকে অ্যাপ্লিকেশনটা করেই ফেলেছেন— ‘বউ আমার আট মাসের পোয়াতি স্যার! ডেট দিয়েছে এক্কেবারে ওই দিন, ২১ এপ্রিল। কী করে ভোটের ডিউটিতে যাই?’
ওই এক শিশুই মাহেন্দ্রক্ষণে জগৎ আলো করতে আসছে, এমনটা অবশ্য নয়। শুধু বহরমপুরেই এক ডজন স্কুলশিক্ষক থেকে সরকারি কর্মীর ওই একই ডেট! সে-ও নয় মানা গেল। কিন্তু কারও হঠাৎ এই বসন্তে পিতৃশোক উথলে উঠছে, তো কারও ‘ছ’বছরের বাচ্চা’ মায়ের দুধ ছাড়া কিচ্ছু খাচ্ছে না। ভোটের চিঠি হাতে পেয়েই ভেল্লোরে ব্লাড প্রেশার মাপাতে যাবেন বলে তড়িঘড়ি চেন্নাই মেলে টিকিটও কেটে ফেলেছেন এক জন।
দোলের পরে সবে অফিস খুলেছে, নিজের ঘরে বসে এক মনে ভোটের কাজ করছিলেন নদিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য। ডাঁই করা ফাইল দু’পাশে। হঠাৎই বছর পঞ্চাশের একটি লোক হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে ঢুকলেন।
দীপাঞ্জনবাবু থতমত— ব্যাপার কী ? কাঁদছেন কেন?
‘‘স্যার, ভোটে ডিউটি করার মতো মনের অবস্থা আমার নেই।’’
— কেন? কি হয়েছে?
‘‘আমার বাবা মারা গিয়েছেন, স্যার। একেবারে অনাথ। মনের যা অবস্থা...’’ বলেই ফোঁস করে রুমালে নাক ঝেড়ে আবেদনপত্র এগিয়ে দেন ভদ্রলোক।
একবুক সহানুভূতি নিয়ে কাগজটা পড়তে গিয়ে দীপাঞ্জনবাবু আবিষ্কার করেন, প্রৌঢ়ের বাবা মারা গিয়েছেন ঠিকই, তবে বছরখানেক আগে।
সকলেই যে এমন কেঁদে ভাসাচ্ছেন তা অবশ্য নয়। কিন্তু তাঁদের অন্য নানা রকম ঝক্কি।
এক মহিলা আবেদনে লিখেছেন, তাঁর শিশুপুত্রকে বাড়িতে রেখে গিয়ে ভোটের ডিউটি করা সম্ভব নয়। মাকে ছাড়া সে কিছুতেই ঘুমোতে পারে না। কত বয়স তাঁর ছেলের? মহিলা জানিয়েছেন, দশ বছর।
এক বাবার প্রার্থনা— ‘‘আমার ‘ফ্যাটি বেবি’। বাচ্চার ওজন বেশি হওয়ার কারণে আমার বৌ তাকে স্নান করাতে পারে না। আমি না থাকলে স্নান করাতে অসুবিধে হবে। আমাকে রেহাই দেওয়া হোক।’’
নিজের অসুস্থতার ফিরিস্তি তো আছেই। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলছেন, ‘‘বিশ্বাস করুন, ক্যানসার আর এড্স ছাড়া এমন কোনও রোগ নেই, যার জন্য ছুটি চাওয়া হয়নি।’’
আমাশা (বারবার বাথরুম যেতে হয়, ভোট করাব কী করে?) থেকে হাইড্রোসিল (চেয়ারে বসেই থাকতে পারি না বেশিক্ষণ)— কিছুই বাদ নেই। নিজেকে ‘মনোরোগী’ ঘোষণা করে ডিউটি থেকে রেহাই চেয়েছেন, এমন লোকও আছেন।
বেশ কিছু শিক্ষক ও ব্যাঙ্ককর্মীর কাতর আর্জি— ‘‘আমি জানেন তো, ভীষণ নার্ভাস! একটু উত্তেজনায় হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। বুথে গিয়ে ভালমন্দ যদি কিছু হয়ে যায়?’’
অতিরিক্ত জেলাশাসককে বুঝিয়ে উঠতে না পেরে সোজা জেলাশাসকের চেম্বারে হানা দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। যার গুঁতোয় নিজের ঘরের সামনে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রেহাই-প্রার্থীদের থেকে রেহাই চেয়েছেন নদিয়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী।
এ বসন্তে পোঁ ধরেছে সানাইও।
ইতিমধ্যে কয়েকটি বিয়ের কার্ড জমা পড়েছে। তারিখটা ভোটের দিন বা আগে-পরে দু’এক দিনের মধ্যে।
কর্তাদেরও নেমন্তন্ন এল বলে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy