Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

নারদ কোথায়, মমতা দেখাচ্ছেন ‘কুল-কুল’

দলের ভিতরে যতই উদ্বেগ থাক। প্রকাশ্যে অন্তত নারদ-কাণ্ডকে আমলই দিতে চাইছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! কলকাতায় তাঁর নিজের এলাকায় প্রচারে নেমেও ফের তা বুঝিয়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী। বালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে হাজরা মোড় পর্যন্ত সোমবার তাঁর নেতৃত্বে মিছিলে যে তিন জন ওজনদার নেতা ছিলেন, তাঁদের তিন জনেরই নাম জড়িয়েছে নারদের ঘুষ-কাণ্ডে!

পুরোভাগে মমতা। বালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে হাজরা পর্যন্ত তৃণমূলের এই মিছিলে পা মেলালেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। এঁদের অনেককে স্টিং ভিডিও-য় দেখা গেলেও তার কোনও ছাপ পড়েনি মিছিলে। — নিজস্ব চিত্র

পুরোভাগে মমতা। বালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে হাজরা পর্যন্ত তৃণমূলের এই মিছিলে পা মেলালেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। এঁদের অনেককে স্টিং ভিডিও-য় দেখা গেলেও তার কোনও ছাপ পড়েনি মিছিলে। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৬ ০৪:০৩
Share: Save:

দলের ভিতরে যতই উদ্বেগ থাক। প্রকাশ্যে অন্তত নারদ-কাণ্ডকে আমলই দিতে চাইছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! কলকাতায় তাঁর নিজের এলাকায় প্রচারে নেমেও ফের তা বুঝিয়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী। বালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে হাজরা মোড় পর্যন্ত সোমবার তাঁর নেতৃত্বে মিছিলে যে তিন জন ওজনদার নেতা ছিলেন, তাঁদের তিন জনেরই নাম জড়িয়েছে নারদের ঘুষ-কাণ্ডে! তবে এ দিনের মিছিলেই শুধু নয়, মমতার কয়েক দিনের জেলা সফরেও নারদ-কাণ্ডে জড়িয়ে পড়া শাসক দলের সাংসদদের উজ্জ্বল উপস্থিতি দেখা গিয়েছিল।

বালিগঞ্জ ফাঁড়ির সামনে এ দিন বিকাল পৌনে চারটের সময়ে থিক থিক করছিল ভিড়। সেই ভিড়ের মাঝে দেখা গেল বালিগঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে। পরনে উজ্জ্বল নীল পাঞ্জাবি। সাদা ধুতি। চৈত্রের বিকেলের পড়ন্ত রোদে সেই পাঞ্জাবির জৌলুস যেন ঠিকরে বেরোচ্ছে! নারদ-কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে বর্ষীয়ান এই নেতারও। কিন্তু সুব্রতবাবুর মুখে অমলিন হাসি। ঘুরে ঘুরে মিছিলের তদারকি করছেন। পুরোটা পথ হাঁটবেন কি না, জানতে চাইলে হেসেই জবাব দিচ্ছেন, ‘‘নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রের এলাকায় তো হাঁটবই!’’

বিকেল চারটে বাজতে না বাজতেই এসে গেলেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর সঙ্গে একই গাড়িতে এলেন মেয়র তথা বেহালা-পূর্ব কেন্দ্রের প্রার্থী শোভন চট্টোপাধ্যায়। যাঁকে তাঁর দলনেত্রী ডাকেন ‘কানন’ নামেই। পরনে শ্বেত শুভ্র পাজামা। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এসে মিছিলে যোগ দিলেন বন্দর এলাকার প্রার্থী ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম। তাঁরও ধবধবে সাদা হাফ হাতা পাঞ্জাবি, পাজামা। পোশাকের মধ্যে দিয়ে তাঁরা যেন জানান দিচ্ছেন, তাঁদের গায়ে কোনও কালির ছিটে লাগেনি!

বস্তুত, মমতা নিজেই শুধু নন, দলের মধ্যে অন্য কোনও শীর্ষ নেতাও যাতে নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্তদের কাউকে আলাদা করে না ফেলেন, সে দিকে নজর রাখছেন তৃণমূল নেত্রী। যেমন, জামবনিতে ২৪ ঘণ্টা আগেই নির্বাচনী প্রচারে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়ের সঙ্গে ছিলেন দলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের একটি সূত্রের খবর, নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্ত মুকুলের সঙ্গে সভা করতে রাজি ছিলেন না অভিষেক। কিন্তু নারদ-কাণ্ডের ছায়া এড়াতে মুকুলকে সঙ্গে নিয়ে সভা করার পরামর্শ ভাইপোকে দিয়েছিলেন মমতাই।

বালিগঞ্জ থেকে এ দিন ঠিক চারটেয় মিছিল শুরু করে দিয়েছেন মমতা। তার ঠিক পিছনেই ববি-কানন। দৃপ্ত ভঙ্গিতে হাঁটছিলেন ববি। দলনেত্রীর সঙ্গে তাঁর দূরত্ব ২০-২৫ পায়ের মতো হবে। তাঁদের সামনে একটি হাতে ঠেলা ভ্যানে দলনেত্রী ও ববির ছবি দিয়ে ট্যাবলো! ভ্যানের তিন দিক তৃণমূলের দলীয় মুখপত্রের নানা লেখায় সাজানো। বিরোধী জোটকে কটাক্ষ থেকে শুরু করে ববির দফতরের প্রশংসা, সবই রয়েছে সেখানে। লাউড স্পিকারে গান বাজছে, ‘মমতা আমাদের এগিয়ে চলার মন্ত্র দাও’।

উপচে-পড়া ভিড়ে মিছিলে হাঁটার ফাঁকে নারদ-কাণ্ডের কথা তুলতেই প্রায় মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে ববি বলেছেন, ‘‘আরে ছাড়ুন তো যত্ত নারদা-সারদা! বাংলার মানুষ মমতাদি’কে আবার মুখ্যমন্ত্রী করার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। আগে আপনাদের সারদা ছিল। এখন এসেছে নারদা! এ সব মানুষ বিশ্বাস করে না। মানুষ বিশ্বাস করে উন্নয়নে। উন্নয়নের প্রতিবাদ কুৎসা দিয়ে হয় না!’’ দলনেত্রীর মতো ববি পুরোটা পথই হেঁটেছেন। তবে সুব্রতবাবুকে ল্যান্সডাউন মোড়ের পরে আর দেখা যায়নি। ভিড়ের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কাননেরও আর দেখা মেলেনি। নারদায় তাঁর নাম জড়িয়ে পড়া নিয়ে এ দিনও কোনও মন্তব্য করেননি সুব্রতবাবু। তাঁর সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘মমতা বলে দিয়েছে, এ ব্যাপারে যা বলার, দলই বলবে।’’

তৃণমূল বিষয়টিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়েছে। স্বয়ং মমতা আগেই বলেছেন, ‘‘রাজনীতিতে আমাদের সঙ্গে পেরে উঠছে না। তাই অপপ্রচার করছে। কিছু লোক আছে হিংসুটে। বসে বসে শুধু কুটুস, কুটুস করছে!’’ কৌশলের অঙ্গ হিসাবেই সরাসরি নারদ-কাণ্ড নিয়ে এ দিনের মিছিলে অবশ্য কোনও উচ্চবাচ্য ছিল না। না কোনও স্লোগান, না কোনও প্ল্যাকার্ড। বরং মিছিলে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশের মুখে স্লোগান ছিল— ‘ঠান্ডা ঠান্ডা, কুল কুল, এ বারও আসবে তৃণমূল’!

অন্য বিষয়গুলি:

narada Election assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE