পক্ষপাতে অভিযুক্ত অফিসারদের বদলি, আধা-সেনার পাহারা তো ছিলই। এর পরেও চতুর্থ দফার ভোট অবাধ করতে পুরনো অস্ত্রে নতুন করে শান দিল নির্বাচন কমিশন। ১৪৪ ধারা।
সোমবার উত্তর ২৪ পরগনা এবং হাওড়ার ৪৯টি কেন্দ্রের ভোটাররা যাতে অবাধে ভোট দিয়ে নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরতে পারেন সে জন্য শনিবার সন্ধ্যা থেকেই ওই দুই জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। গাড়ি করে ঘুরে ঘুরে মাইক বাজিয়ে সে কথা প্রচারও করেছে রাজ্য প্রশাসন। সোমবার সন্ধ্যা ৬টায়, ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
প্রশাসনের এক কর্তা জানান, এমনিতেই ভোটের সময় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। তবে তা খাতায়-কলমে। কিন্তু এ বার কমিশনের গুঁতোয় এই ধারা কঠোর ভাবে প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের আসা-যাওয়ার পথে বা বুথের আশেপাশে জমায়েত করে কেউ যাতে ভোটারদের ভয় দেখাতে না-পারে, তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর কমিশন। শাসক দলের মদতে পুষ্ট দুষ্কৃতীবাহিনী এই চেষ্টা করতে পারে বলে ইতিমধ্যেই বিরোধী দলগুলির পক্ষ থেকে কমিশনের কাছে নালিশ জানানো হয়েছে। সেই আশঙ্কা দূর করতে হাওড়ায় ২ জন এবং উত্তর ২৪ পরগনায় ৩ জন পুলিশ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে কমিশন। কমিশন জানিয়েছে, ভোটের দিন হাওড়ার শহর এলাকায় ৭৫ ও গ্রামীণ এলাকায় ১৫২ কোম্পানি, উত্তর ২৪ পরগনার গ্রামীণ এলাকায় ২৫৭ কোম্পানি, ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকায় ১৩৭ এবং বিধাননগর কমিশনারেট এলাকায় ৫১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে। তা ছাড়া, শনিবার থেকে রাতেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলদারি চলবে।
কেন এই কঠোর পদক্ষেপ?
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুনীল গুপ্তর কথায়, ‘‘এটা আগেও ছিল। কিন্তু হাওড়া ও উত্তর ২৪ পরগনা খুবই ‘স্পর্শকাতর’। তাই ১৪৪ ধারা যথাযথ ভাবে কার্যকর করতে বলা হয়েছে।’’ দিল্লিতে নির্বাচন সদন সূত্রের খবর, ১৪৪ ধারা সম্পর্কে রাজনৈতিক দল ও মানুষকে অবহিত ও সতর্ক করার জন্য জেলাশাসক তথা রিটার্নিং অফিসারদের মাইক-প্রচার করতে বলা হয়েছে। হাওড়ার জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাশ ও উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক মনমীত নন্দা এ দিনই ১৪৪ ধারা জারির লিখিত নির্দেশ দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, কোনও জায়গায় পাঁচ বা তার বেশি মানুষ গণ্ডগোল বা দুষ্কর্মের জন্য জড়ো হলে সেই জমায়েতকে বেআইনি বলে চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনেকের ধারণা, বুথের ১০০ মিটারের বাইরে জমায়েত করা যেতে পারে। কিন্তু ঘটনা হল, সেই জমায়েত থেকে সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে মনে করলেও পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে। এখন প্রশ্ন হল, দল বেঁধে বাজারে গেলে বা একই পরিবারের পাঁচ জনের বেশি লোক এক সঙ্গে ভোট দিতে গেলেও কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে? ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার নীরজ সিংহের জবাব, ‘‘পুলিশই দেখবে, কে কোন উদ্দেশ্যে জড়ো হয়েছে। সেই মতো ব্যবস্থা নেবে।’’ আর বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রের খবর, চায়ের দোকানে, ক্লাবে অযথা জমায়েত করতে দেওয়া হবে না। নজর রাখা হবে নির্মীয়মাণ বহুতলগুলোতেও।
প্রত্যাশিত ভাবেই ১৪৪ ধারা কঠোর ভাবে প্রয়োগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিরোধীরা। বিধাননগরের কংগ্রেস প্রার্থী অরুণাভ ঘোষ বলেন, ‘‘কমিশনের এই সিদ্ধান্ত মানুষের সাহস বাড়িয়ে দিল।’’ সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক গৌতম দেবের কথায়, ‘‘কমিশনের নজিরবিহীন সিদ্ধান্তে আমরা খুশি।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের অবশ্য দাবি, ‘‘১৪৪ হোক কিংবা ২৮৮, ভোট ভাল হবে এবং জিতব আমরাই।’’
রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা জানান, এ বার ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারির পর থেকেই কমিশন কড়া মনোভাব নিয়েছে। ভোট ঘোষণার পরেই রাজ্যে ঢুকে পড়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এবং অন্যান্য বারের তুলনায় অনেক বেশি। কমিশনের ফুল বেঞ্চ ইতিমধ্যে তিন বার ঘুরে গিয়েছে কলকাতায়। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সামান্য বেচাল কিংবা বিধিভঙ্গের ঘটনা দেখলেও কাউকে রেয়াত করছে না কমিশন। শুক্রবার পর্যন্ত বিভিন্ন জেলার ডিএম, এসপি মিলিয়ে প্রায় ৬০ জন অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবু হিংসা ও ভূতের ভোট পুরোপুরি আটকানো যায়নি। প্রশাসনের একাধিক অফিসারের কথায়, ‘‘গত লোকসভা ভোটের তুলনায় এ বার কমিশনের ব্যবস্থাপনা অনেক ভাল। তবে ভোটের দিন এবং ভোট-পরবর্তী হিংসা কম হলেও আটকানো যায়নি। গত ভোটের দিনই ডোমকলে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। ভোট পরবর্তী হিংসায় মারা গিয়েছেন আরও অন্তত চার জন। তা ছাড়া, শাসক দলের বিরুদ্ধে বহিরাগতদের জমায়েত করে ভোটারদের ভয় দেখানো ও ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ করেছে সব বিরোধী দলই।’’
এই পটভূমিতে ১৪৪-কে দাওয়াই বলে মনে করছেন নবান্নের কর্তারা। ভরসা পাচ্ছেন, গত কয়েকটি নির্বাচনে বুখমুখো হতে না-পারা ভোটাররাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy