বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেছিলেন, এগিয়ে দিলে পুরস্কার, না হলে বহিষ্কার। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে কোচবিহারে তৃণমূলের দিনহাটা ২ ব্লক সভাপতি মীর হুমায়ন কবীর জানিয়ে দিলেন, যে অঞ্চল কমিটি সব থেকে বেশি ‘লিড’ দিতে পারবে, সেই কমিটিকে দেওয়া হবে একটি ঝাঁ চকচকে ছোট গাড়ি।
দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রে এ বার তৃণমূলের প্রার্থী উদয়ন গুহ। ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে তিনি শাসক দলে যোগ দিলে তৃণমূলের দিনহাটা ব্লক সভাপতি মীর হুমায়ুন কবীরই তার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। উদয়নবাবুর প্রচারে তাঁকে নিয়মিতই দেখা যাচ্ছে। তৃণমূলের অন্দরের খবর, উদয়ন-বিরোধী বলে পরিচিত মীর হুমায়ুন এখন ব্যস্ত নিজের ভাবমূর্তি পরিবর্তন করতে। দল বিরোধী কাজের তকমা যাতে তাঁর উপরে না পড়ে, সে জন্যই
তিনি আগ বাড়িয়ে সব থেকে বেশি ‘লিড’ দিতে পারলে পুরস্কার দেওয়ার কথাও ঘোষণা করে দিলেন। তাতে বোঝা যাবে, তিনি উদয়নবাবুকে জেতাতে কতটা মরিয়া। তিনি মনে করছেন, এর ফলে উদয়নবাবু হারলে তার দায় আর তাঁর উপরে এসে পড়বে না। এই বিধানসভা কেন্দ্রে রয়েছে ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত। তার মধ্যে দিনহাটা ২ ব্লকের অন্তর্গত ১২টি অঞ্চল সমিতির মধ্যেই ছোট গাড়ি জেতার ‘প্রতিযোগিতা’ হবে বলে মীর হুমায়ুন জানিয়েছেন।
বিরোধীদের অভিযোগ, ওই পরিকল্পনা আখেরে নির্বাচনের বিধি ভঙ্গেরই সামিল। প্রতিযোগিতায় জিততে এলাকায় শাসক দলের কর্মীদের চাপা সন্ত্রাস বাড়বার
আশঙ্কাও রয়েছে। ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী অক্ষয় ঠাকুর বলেন, “এমন টোপ দেওয়া হলে শাসক দলের কর্মীরা এলাকার মানুষকে ভয় দেখিয়ে ভোট দেওয়ানোর চেষ্টা করবেন।’’ সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য তারাপদ বর্মনও বলেন, “ভোট বিধি অনুযায়ী পুরস্কারের টোপ দেওয়া যায় না।” বিজেপি’র রাজ্য কমিটির সদস্য হেমচন্দ্র বর্মনের দাবি, পুরস্কারের ঘোষণা আখেরে প্রলোভন দেখানোর নামান্তর। নির্বাচন কমিশনের কাছে তাঁরা অভিযোগ জানাবেন।
তৃণমূল নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, কোনও ভোটার বা সাধারণ বাসিন্দাকে একক ভাবে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে না। মীর হুমায়ুন বলেন, ‘‘পুরোটাই দলের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। দলের
অঞ্চল কর্মীদের উৎসাহিত করতে পুরস্কারের পরিকল্পনা হয়েছে।’’ কিন্তু তাতে তৃণমূল নেতাদের অস্বস্তি কাটছে না বলে শাসক দলের
অন্দরেই খবর। কিন্তু কেউ এই প্রতিযোগিতার বিরোধিতাও করছেন না। তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘এটি একেবারেই সাংগঠনিক একটি বিষয়। কোনও ভোটারকে তো পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে না। তাই ভোটের বিধি ভাঙছে না।’’ উদয়নবাবুর বক্তব্য, ‘‘ব্লক সভাপতি কর্মীদের উৎসাহ দিতেই পারেন।’’ মীর হুমায়ুন জানিয়েছেন, যে অঞ্চল সমিতির এলাকা থেকে উদয়নবাবু বেশি লিড পাবেন, দলে চাঁদা তুলে সেই সমিতিকে গাড়ি কিনে দেওয়া হবে।
দিনহাটা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে দিনহাটা ১ ব্লকের চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও দিনহাটা পুরসভা। তবে মোট আড়াই লক্ষাধিক ভোটারের মধ্যে দু’লাখ ভোটারই দিনহাটা ১ ব্লকের বাসিন্দা। তাই সেখানেই দলের তরফে গোড়া থেকেই বেশি জোর দেওয়া হচ্ছিল। এ বার তার সঙ্গে যোগ হল গাড়ি পুরস্কারের কথাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy