বইয়ে মন মেদিনীপুরের তৃণমূল প্রার্থী মৃগেন মাইতির। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
অনেক ঝক্কি পেরিয়ে মিটেছে ভোট। ফলাফলের ঢের দেরি, এখন একটু জিরিয়ে নেওয়ার সময়। কিন্তু ফুরসত নেই প্রার্থীদের।
কেউ ছুটছেন পূর্ব মেদিনীপুর, অন্য প্রার্থীর ভোট সামলাতে। কেউ ব্যস্ত দলের কাজকর্মে। তবে চাপটা অনেকটাই কম, মানছেন সকলেই। রোজ সকালে ঘর থেকে বেরনোর তাড়া নেই। পাড়ায় পাড়ায় ছোটার ব্যস্ততা নেই। ফাঁক পেলে দিব্যি নজর বুলিয়ে নেওয়া যাচ্ছে খবরের কাগজ আর টেলিভিশনে। চাপ না-থাকলেও আছে। এই নজর বোলানোর উদ্দেশ্যটাও যে রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা।
তবে অনেকেই বই পড়ছেন। দলের কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা-আড্ডা তো আছেই। ভোট শেষে ফের নিজেদের পুরনো রুটিনে ফেরার সুযোগ কিছুটা হলেও মিলেছে। ফলপ্রকাশের আগে কিছুটা হলেও টেনশনে থাকেন প্রার্থীরা। কিন্তু এ বার শাসক-বিরোধী কোনও দলের প্রার্থীই সেই টেনশনের কথা মানতে চাইছেন না। সকলেই বলছেন, ‘টেনশনের কী আছে! মানুষ যাঁকে সমর্থন করবেন, সেই জিতবে।’ আড়ালে কর্মীরা বলছেন, এটা নিজেকে চাপমুক্ত রাখারই কৌশল।
মেদিনীপুরের সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রাণা এখন দলের কাজকর্মে ব্যস্ত। তিনি দলের জেলা সম্পাদকও। তাই সাংগঠনিক দায়িত্ব বর্তায় বেশ খানিকটা। নিজের ভোট মিটে গিয়েছে ৪ এপ্রিল। এখন তাঁর দায়িত্ব বাকি ভোট সামলে দেওয়া। তাই বেশিরভাগ সময়টাই কেটে যাচ্ছে পাশের জেলায়। পটাশপুরে দলীয় প্রার্থীর হয়ে মিটিং-মিছিল করছেন। দিন কয়েক আগে ময়নায় জোট প্রার্থীর হয়ে প্রচার করেছেন।
দুপুরে সন্তোষবাবুকে পাওয়া গেল সিপিআইয়ের জেলা কার্যালয়ে। দলীয় কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। টেবিলে রাখা কিছু বই। নাড়াচাড়াও করছিলেন সেগুলি। সন্তোষবাবুর কথায়, “এখনও অনেকটা সময় প্রচারে কেটে যাচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুরে গিয়ে প্রচার করছি। মেদিনীপুরে থাকলে জেলা অফিসে আসি। খবরের কাগজ-বইপত্র পড়ি।” টেবিলের উপরে কয়েকটা কাগজ দেখে বোঝা গেল, সেখানে ভোটের সম্ভাব্য ফলাফল লেখা।কোন এলাকায় কত ভোটে এগিয়ে থাকতে পারেন প্রার্থী তারই হিসাব নিকাশ।
নিজের ভোটের ফল নিয়ে টেনশন নেই? প্রার্থী বলছেন, “দূর! টেনশন হবে কেন! মানুষের উপরে বিশ্বাস আছে।” কথার ফাঁকে দাবি করলেন, মেদিনীপুর থেকে এ বার তৃণমূল খুব সহজে জিতবে না। লড়াইটা ভালই হয়েছে। অন্তত, দলের বুথ-ফেরত কর্মীদের হিসেব তাই বলছে।
নিজের জয় নিয়ে অবশ্য আত্মবিশ্বাসী মেদিনীপুরের তৃণমূল প্রার্থী মৃগেন মাইতি। তাঁরও দিনের বেশির ভাগ সময় কেটে যাচ্ছে দলের কাজকর্মেই। মেদিনীপুরে থাকলে সন্ধ্যায় চলে আসেন ফেডারেশন অফিসে। দুপুরে এমকেডিএ ভবনে। দিন কয়েক আগে কলকাতায় গিয়েছিলেন। বুধবার রাতে সেখান থেকে ফিরেছেন। আবার আগামী সপ্তাহে কলকাতায় যাবেন। বিধানসভায় কাজ রয়েছে। মৃগেনবাবু বলছিলেন, “স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক থাকলে বিধানসভায় যেতে হয়। অন্য কিছু কাজও থাকে।” ফেডারেশন অফিসের তিনতলায় নতুন ঘর হচ্ছে। ইতিমধ্যে কাজ অনেকটা এগিয়েছে। তবে আরও কিছু কাজ বাকি। নিজের ভোটের সময় এ দিকে তেমন নজর দিতে পারেননি। তবে ভোট মিটতেই নতুন ঘরের কাজের খুঁটিনাটি তিনি দেখছেন। বলছেন, “নতুন ঘর হলে সংগঠনের কর্মীদেরই সুবিধে। তাঁরা মিটিং করতে পারবেন। থাকতেও পারবেন।” নতুন ঘরের জন্য বেশ কিছু চেয়ার কিনেছেন। লোডশেডিং হলে সমস্যা হয়। তাই একটা জেনারেটর কেনার ব্যবস্থাও করছেন। তবে সংগঠনের বেশি টাকা নেই। তাই মৃগেনবাবু যোগ করেন, ‘‘ছোটো একটা জেনারেটর কেনার কথা ভেবেছি।” শুক্রবার দুপুরে মৃগেনবাবুকে পাওয়া গেল এমকেডিএ ভবনে। একটি ঘরে বসে বইতে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলেন। জয়ের ব্যবধান কত হতে পারে? মৃগেনবাবুর জবাব, “মার্জিন নিয়ে ভাবছি না। জানি মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই আছেন।” তাও তাঁর আন্দাজ, গতবার ২৮ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। এ বার মার্জিনটা ৪০-৪৫ হাজার তো হবেই।
নিজের ভোট শেষে দলের অন্য প্রার্থীর ভোট সামলাতে ব্যস্ত মেদিনীপুরের বিজেপি প্রার্থী তুষার মুখোপাধ্যায়ও। ইতিমধ্যে দলের নির্দেশে বর্ধমান, বাঁকুড়া, কলকাতায় ভোট-প্রচারে গিয়েছেন। কলকাতার কসবায় প্রচার সেরে বৃহস্পতিবার রাতে খড়্গপুরের বাড়িতে ফিরেছেন। আজ, শনিবার ফের ভোট-প্রচারে পাশের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে যাওয়ার কথা তাঁর।
ভোটের ধকল তাহলে কাটছে না? হাসছেন তুষারবাবু। বলছেন, “ছুটি পাওয়ার সুযোগ নেই।” অন্য কোথাও না গেলে মাঝেমধ্যেই মেদিনীপুরে আসেন। দলের জেলা কার্যালয়ে কর্মীদের সঙ্গে সময় কাটান। সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখাশোনা করেন। সকাল কিংবা দুপুরের দিকে এসে সন্ধ্যায় খড়্গপুরে ফিরে যান। ভোটের ফল নিয়ে অবশ্য খুব একটা ভাবছেন না তুষারবাবু। বলছেন, “ভোট তো হয়ে গিয়েছে। দেখাই যাক না কি হয়! আশা করি, এ বার দলের ফল ভাল হবে!”
এখন দিনভর চায়ের দোকান থেকে পাড়ার আড্ডা-কান পাতলেই শহরে শোনা যাচ্ছে, কেউ না কেউ কাউকে প্রশ্ন করছেন, ‘তাহলে কে জিতবে বলে মনে হচ্ছে রে!’ কে জিতবে, কে হারবে, তা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরাধরিও চলছে! এই জল্পনা আর উৎকন্ঠার মধ্যে সব দলের নিচুতলার একাংশ কর্মীই মোটের উপর একমত, লড়াইয়ে জয়-পরাজয়ের মীমাংসা হবে হয়তো অল্প ব্যবধানেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy