Advertisement
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কেষ্ট নামেই চক্ষু মুদেছেন খাদেম

তৃণমূল দৌড়েই নেই (বলছেন দুই দলের নেতাই)। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডল আছেন। ১৯৬২ সাল থেকে (মধ্যে ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৭— এই দশ বছর বাদে) ৫৪ বছর ধরে ভরতপুর আরএসপি-র মৌরসি পাট্টা।

অনল আবেদিন
শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৬ ০২:০৭
Share: Save:

তৃণমূল দৌড়েই নেই (বলছেন দুই দলের নেতাই)।

কিন্তু অনুব্রত মণ্ডল আছেন।

১৯৬২ সাল থেকে (মধ্যে ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৭— এই দশ বছর বাদে) ৫৪ বছর ধরে ভরতপুর আরএসপি-র মৌরসি পাট্টা।

আরএসপি বিধায়ক সত্যপদ ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পর, ১৯৯১ সাল থেকে ঈদ মহম্মদই জিতে আসছেন। কংগ্রেস-বাম জোটের শর্ত মানলে এই আসন আরএসপি-রই প্রাপ্য।

কিন্তু শর্তভঙ্গ হয়েছে।

শর্ত উপেক্ষা করে যিনি এখানে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন, ভরতপুর সেই অধীর চৌধুরীর লোকসভা কেন্দ্র বহরমপুরের মধ্যে পড়ে। ১৯৯৮ থেকে (তার আগে লোকসভা কেন্দ্রও আরএসপি-র হাতে ছিল) ভরতপুর তাঁকে ‘লিড’ দিয়ে আসছে। গত ভোটেও ৫০ হাজারের বেশি দিয়েছে।

বীরভূমের সীমানা পেরিয়ে সেই কেন্দ্রেই হানা দিতে চাইছেন অনুব্রত, ওরফে ‘দিদি’র আদরের কেষ্ট।

লোকসভায় অধীরকে জেতালেও প্রতি বিধানসভা ভোটে কিন্তু কংগ্রেস প্রার্থী দু’চার হাজার ভোটে হেরে যান। তার মানে ‘অধীর-ম্যাজিক’ সরিয়ে নিলে আরএসপি-র সাংগঠনিক শক্তি মাঠ দখল করে। সেই সঙ্গে প্রার্থীর প্রতি ভরসা তো আছেই।

টানা পাঁচ বারের বিধায়ক ঈদ মহম্মদই এ বারের বামপ্রার্থী। ভোটের আগের দিন দুপুরেও যাঁকে বলতে হচ্ছে, ‘‘তৃণমূল কোনও ফ্যাক্টর নয়। কংগ্রেসের বিরুদ্ধেই লড়তে হচ্ছে।’’ কংগ্রেস প্রার্থী কমলেশ চট্টোপাধ্যায়ও বলছেন, ‘‘তৃণমূল কোথায়? লড়াইটা আরএসপির সঙ্গেই।’’

অথচ এ বার রাজ্য জোড়া জোটের আবহে এই দু’জনের কুস্তি করার কথা ছিল না, বরং কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে প্রচারে যাওয়ার কথা ছিল। সত্যি বলতে, দু’জনের কথাতেই আক্রমণের নিশানা মূলত তৃণমূল। ষাট পেরোনো ঈদ বলছেন, ‘‘বাবলা নদীর উপরে লোহাদহ ব্রিজ তৈরির জন্য ২০১১-য় তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন। তৃণমূল সরকার পাঁচ বছরে সেই কাজ শুরু না করায় প্রকল্প ব্যয় বে়ড়ে হয়েছে ১৬ কোটি টাকা।’’

জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ, চল্লিশ না ছোঁয়া কমলেশও বলছেন, ‘‘এই বিধানসভা এলাকায় প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার ৮টি সড়ক বেহাল। সেগুলি সংস্কার করার জন্য দেড় বছর আগে টেন্ডার হলেও তৃণমূল সরকার কাজ শুরু করতে দেয়নি। মানুষকে বিপাকে ফেলেছে।’’

তা হলে যুদ্ধটা বেধে গেল কেন?

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, তাঁরা জোটের সূত্র অনুযায়ী ভরতপুর আরএসপিকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান শর্তভঙ্গ করেন, কংগ্রেসের বিধায়ক থাকা সত্ত্বেও সুতি, নওদা, রঘুনাথগঞ্জ ও বড়ঞায় প্রার্থী দিয়ে দেন। বাধ্য হয়ে তাঁদেরও ভরতপুরে প্রার্থী দিতে হয়েছে।

দৌড়ে কারা এগিয়ে?

দলবদলের ফলে এলাকার ১২টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ২টি তৃণমূলের। বাকি ১০টি কংগ্রেসের। দুই পঞ্চায়েত সমিতিও তাদেরই। ঈদ মহম্মদ অবশ্য বলছেন, ‘‘ওই সব পরিসংখ্যান দিয়ে কিছু হয় না। বরাবর বিধানসভা ভোটে আমরা কংগ্রেসকে হারিয়ে এসেছি। এ বারও তাই হবে।’’

তৃণমূলের প্রৌঢ় প্রার্থী খাদেম-এ দস্তগির অবশ্য তাল ঠুকতে ছাড়ছেন না। বিগত ১৩ বছর তিনি ভরতপুর ২ ব্লক কংগ্রেসে সভাপতি ছিলেন। কংগ্রেসের টিকিটে জিতে এখনও জেলা পরিষদের সদস্য। মাত্র মাস ছয়েক আগে তৃণমূলে ভিড়ে টিকিট হাতিয়েছেন। আর, তাতে মনখারাপ করে কার্যত বসে গিয়েছেন তৃণমূলের পুরনো কাণ্ডারী তথা ভরতপুর ২ ব্লক সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান সুমন। ভরতপুর ১ ব্লক কংগ্রস সভাপতি আব্দুল বারির দাবি, ‘‘খাদেমের ভোট প্রচারে সুমন যাননি। জেলা পরিষদের সদস্যপদ না ছেড়ে দলত্যাগ করায় লোকেও তাঁকে বেইমান বলছেন।’’

খাদেম অবশ্য হাসিমুখেই ঘুরছেন।

কে না জানে, ভরতপুর থেকে এক দৌড়ে পৌঁছে যাওয়া যায় বীরভূমে অনুব্রত মণ্ডলের উঠোনে। মঙ্গলবার, প্রচারের শেষ দিনে সালারের পূর্বগ্রাম ও চৌরঙ্গি মোড়ে দু’টি পথসভা থেকে অধীরকে চ্যালেঞ্জ করে গিয়েছেন কেষ্ট। বলেছেন, ‘‘বহরমপুরের দাদা বেশি চমকাতে এলে, মনে রাখবেন, আমরাও পাল্টা চমকাতে পারি। প্রয়োজনে আমি নিজেই আসব।’’

খাদেম একমনে কেষ্টনাম জপছেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anubrata mondal TMC assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE