Advertisement
E-Paper

শ্যামাপ্রসাদ থেকে মমতার জয়ের কলকাতা দক্ষিণে পদ্ম দূরের গ্রহ, মালা-বদল করার লড়াই কঠিন দেবশ্রীর

কলকাতা দক্ষিণের লড়াইয়ে বিজেপির পাশে অঙ্ক নেই। পক্ষান্তরে, তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর জয়ের পরম্পরা। ফলে দেবশ্রী চৌধুরি এবং মালা রায়ের লড়াইয়ের ভূমিটাই আলাদা।

What is the political situation of Kolkata Dakshin constituency before Lok Sabha Election 2024

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

পিনাকপাণি ঘোষ

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৪ ২১:২৩
Share
Save

কলকাতা দক্ষিণ মানে ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসন’। টানা সাত বার কেউ কোনও কেন্দ্রে জিতলে সেই আসনের গায়ে তাঁর নামফলক লেগেই যায়। অতীতে বার চারেক সিপিএম জিতেছে। কংগ্রেস বা জনতা পার্টিও জিতেছে। মমতা ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে এই আসনে জিতেছিলেন কংগ্রেসের প্রতীকে। কিন্তু ১৯৯৮ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত মমতা তাঁর জোড়া ফুলের প্রতীকে জেতার সুবাদে দক্ষিণ কলকাতা মমতার হয়ে গিয়েছে। হয়ে গিয়েছে তৃণমূলের ‘দুর্ভ্যেদ্য দুর্গ’। প্রথমে কংগ্রেসের টিকিটে এবং পরে নিজের দলের টিকিটে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া পর্যন্ত এই আসন থেকেই সাংসদ হয়েছেন মমতা। একাধিক বার হয়েছেন কেন্দ্রের মন্ত্রীও। বিজেপি অনেক পিছন থেকে শেষ দুই লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে এলেও কলকাতা দক্ষিণে পদ্ম দূরেরই গ্রহ। কারণ, কোনও বিধানসভা নির্বাচন বা পুরসভা ভোটে বিজেপি এখানে সাফল্য পায়নি। তবে তাদের গর্ব একটাই হতে পারে— দলের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ১৯৫২ সালে এই আসন থেকেই সাংসদ হয়েছিলেন।

শ্যামাপ্রসাদ যখন জিতেছিলেন, তখন এই আসনের নাম ছিল ‘ক্যালকাটা সাউথ ইস্ট’। এর পরে ১৯৫৭ সালে নাম হয় ‘ক্যালকাটা ইস্ট’। আবার ১৯৬৭ সাল থেকে ‘ক্যালকাটা সাউথ’। সব শেষে ২০০৯ সালে এসে কলকাতা দক্ষিণ। সে বারই মমতার শেষ লড়াই এই আসনে। সে বারেই সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়। সিপিএমের রবীন দেবকে মমতা হারিয়েছিলেন ২ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি ভোটে। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ২০১১ সালের মে মাসে এই আসন ছেড়ে দেন মমতা। তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী জেতেন উপনির্বাচনে। ২০১৪ সালে সুব্রত ফের জেতেন। কিন্তু ব্যবধান কমে হয় ১ লাখ ৩৬ হাজার। তৃণমূলের ভোট কমেছিল ২০ শতাংশের মতো। ২১ শতাংশ ভোট বাড়িয়ে দ্বিতীয় স্থানে চলে এসেছিল বিজেপি। প্রার্থী ছিলেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি ও পরবর্তী কালে তিন রাজ্যের রাজ্যপাল তথাগত রায়। সে বার মুখ্যমন্ত্রীর নিজের বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরে ১৭৬ ভোটে এগিয়ে গিয়ে বিজেপি চমকে দিয়েছিল শাসকদলের নেতা-কর্মীদের।

What is the political situation of Kolkata Dakshin constituency before Lok Sabha Election 2024

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

২০১৯ সালে তথাগত মেঘালয়ের রাজ্যপাল হয়ে গিয়েছেন। বিজেপি প্রার্থী করেছিল সুভাষচন্দ্র বসুর পরিবারের সদস্য চন্দ্রকুমার বসুকে। সিপিএম অবশ্য তার আগের বারের মতো নন্দিনী মুখোপাধ্যায়কেই রেখেছিল। বক্সী সে বার ভোটে দাঁড়াতে না চাওয়ায় তৃণমূল প্রার্থী করেছিল মালা রায়কে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মালা এই কেন্দ্রেই কংগ্রেসের প্রার্থী হিসাবে লড়াই করে জামানত খুইয়েছিলেন। এখন তিনি সাংসদ তো বটেই, পাশাপাশি কলকাতার ৮৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হয়ে পুরসভার চেয়ারপার্সনও।

২০১৯ সালের নির্বাচন ফলাফলে অনেকটা বদল নিয়ে এসেছিল। সিপিএমের নন্দিনীর ভোট আরও ১০ শতাংশ কমে হয়ে গিয়েছিল ১১.৬৩ শতাংশ। বিজেপির ভোট আরও ৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছিল ৩৪.৬৪ শতাংশ। তবুও বিজেপি বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি। কারণ, সে বারে তৃণমূলের ভোটও ১০ শতাংশের কিছু বেশি বেড়ে যায়। ‘নিশ্চিত’ আসনে সহজ জয় পান মালা। ব্যবধান ১ লাখ ২০ হাজার।

চন্দ্রকুমার এখন বিজেপি তো বটেই, রাজনীতি থেকেও দূরে। এ বার দক্ষিণ কলকাতায় পদ্মের প্রার্থী প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। আর সিপিএম প্রার্থী করেছে সায়রা শাহ হালিমকে। যিনি ২০২২ সালে বালিগঞ্জ উপনির্বাচনে হেরেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী তথা বর্তমানে রাজ্যের মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের কাছে। তবে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে করুণ দশায় পর্যবসিত সিপিএমের মুখে হাসি ফুটিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন সায়রা। অন্য দিকে, বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী একাধিক ভোটে পর্যুদস্ত হলেও প্রথম জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন ২০১৯ সালের ভোটে রায়গঞ্জ আসন থেকে। সে বার সঙ্ঘ পরিবার ঘনিষ্ঠ দেবশ্রীর জয়ের পথ মসৃণ করে দিয়েছিল সিপিএম এবং কংগ্রেস। স্বামী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির কেন্দ্র রায়গঞ্জে কংগ্রেস প্রার্থী হয়েছিলেন দীপা দাশমুন্সি। সিপিএম প্রার্থী হয়েছিলেন বর্তমানে রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। বিজেপি-বিরোধী ভোট দীপা এবং সেলিমে ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ায় জিতে যান দেবশ্রী।

সেই জয়ের পরে কেন্দ্রে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রী ছিলেন দেবশ্রী। কিন্তু এ বার দল তাঁকে পাঠিয়েছে ‘কঠিন’ আসনে। যেখানে তাঁকে সাহায্য করার মতো কোনও অঙ্ক নেই। তবে এই আসনের অন্তর্গত বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি। এই কারণটি দেবশ্রীকে বাড়তি ভোটের আশা খানিকটা হলেও দেখাতে পারে। আরও একটি হিসাব রয়েছে। কলকাতা পুরসভার ৫৯টি ওয়ার্ড আছে দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে। গত লোকসভা ভোটে ৫৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৩টিতে এগিয়ে ছিল তৃণমূল, ২৬টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল বিজেপি। দুর্বল সংগঠন এবং ভোট-অঙ্কের সাহায্য না পেলেও বিদ্যার্থী পরিষদ থেকে বিজেপিতে আসা দীর্ঘদিনের পদ্মনেত্রী দেবশ্রী অবশ্য লড়াই ছাড়তে রাজি নন।

তবে তৃণমূলও দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা নিয়ে নিশ্চিন্তে বসে নেই। গত বার বিজেপির এগিয়ে থাকা ২৬টি ওয়ার্ড ‘পুনরুদ্ধার’ করার পাশাপাশি নিজেদের এগিয়ে থাকা ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টি ওয়ার্ডকে ‘ব্যবধান’ বাড়ানোর এলাকা হিসাবে বেছে নিয়েছেন তৃণমূলের দক্ষিণ কলকাতা নেতৃত্ব। যার মধ্যে কসবা, বালিগঞ্জ, দুই বেহালা, কলকাতা বন্দর যেমন রয়েছে, তেমনই হিন্দিভাষী ভোটার অধ্যুষিত রাসবিহারী, ভবানীপুর আসনও রয়েছে। এই ভবানীপুর থেকেই বিধায়ক হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই দক্ষিণ কলকাতার লড়াই তৃণমূলের কাছে ‘প্রেস্টিজ ফাইট’। দেবশ্রীর কাছে আরও একটা বিষয় ‘অস্বস্তির’ যে, তাঁর নিজের দলও এই আসন নিয়ে তেমন ‘আশাবাদী’ নয়। বিজেপি আগে থেকেই ধরে নিয়েছে, কলকাতা দক্ষিণে মালা-বদল করার স্বপ্ন বাস্তব নয়। যদিও শেষবেলায় একটি বাড়তি অস্ত্র পেয়েছেন দেবশ্রী। এই আসনের মধ্যেই বালিগঞ্জে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রধান কার্যালয়। যে প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ‘সন্ন্যাসী’ মন্তব্যের পরে এই আসনে বিজেপির প্রচার বদলে গিয়েছে। তবে তাতে কি ভোটের ভবি ভুলবে?

Lok Sabha Election 2024 Kolkata Dakshin Constituency Dillibari Mala Roy Deboshree Chowdhury

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।