Advertisement
E-Paper

বিদ্যাধরীর পারে ঘাসফুল না পদ্ম? বারাসতে পতিতপাবনী দেগঙ্গে! এ আসনে মেরুকরণ গ্রাম-শহর এবং ভাষা নিয়েও

বারাসতে পর পর তিন বার জিতেছেন তৃণমূলের কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তবে চতুর্থ বারের জয় অত সহজে আসবে কি? হলফ করে বলা যাচ্ছে না। কারণ, বারাসত আসনে অনেক মেরুকরণ।

What is the political situation of Barasat constituency before Lok Sabha Election 2024

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

পিনাকপাণি ঘোষ

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২৪ ২১:০২
Share
Save

বিদ্যাধরী নদী। গঙ্গা থেকেই জন্ম। হরিণঘাটা থেকে এসে বারাসত, দেগঙ্গা, হাবড়া হয়ে সোজা গিয়েছে সুন্দরবনে। রায়মঙ্গলের সঙ্গে মিলে মিশে গিয়েছে সাগরে। তার আগে রেখে গিয়েছে বিশাল জনপদ। মূলত সেই জনপদ ঘিরেই আজকের বারাসত লোকসভা আসন। যে আসনে প্রত্যন্ত গ্রামও রয়েছে। আবার রয়েছে নিউ টাউনের মতো ঝাঁ-চকচকে অথবা সল্টলেকের মতো অভিজাত এলাকা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচারে ধর্মীয় মেরুকরণের কথা বেশি থাকলেও এখানে ‘বিভাজন’ আসলে অনেক। গ্রাম-শহরের মেরুকরণ যেমন রয়েছে, তেমনই হিসাব কষতে হচ্ছে বাঙাল ও বাংলা ভাষার বিভেদ নিয়েও। ওই ভাষাতেই লুকিয়ে রয়েছে উদ্বাস্তু কিংবা নাগরিকত্বের প্রসঙ্গ। আবার হিন্দিভাষী ভোটারও প্রচুর। তাই বাঙালি-অবাঙালি মেরুকরণও রয়েছে বারাসতে।

২০১৯ সালে তৃণমূলের কাকলি ঘোষ দস্তিদার বারাসতে জিতেছিলেন ১ লক্ষ ১০ হাজার ভোটে। তবে অতীতের থেকে সে ব্যবধান ছিল কম। ২০১৪ সালে কাকলির জয়ের ব্যবধান ছিল পৌনে দু’লাখ। সে বার লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা থেকেই এগিয়ে ছিল তৃণমূল। দ্বিতীয় হয়েছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের মোর্তাজা হোসেন। কিন্তু ২০১৯ সালে অঙ্ক বদলে যায়। দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা বিজেপি ৩৮.৫৭ শতাংশ ভোট পাওয়ার পাশাপাশি দু’টি বিধানসভায় এগিয়ে যায়। সেগুলি হল হাবড়া ও বিধাননগর। গত বিধানসভা নির্বাচনে অবশ্য সাতটি আসনেই জিতেছিল তৃণমূল।

What is the political situation of Barasat constituency before Lok Sabha Election 2024

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

২০১৯ সালে তৃণমূলকে ‘রক্ষা’ করেছিল দেগঙ্গা। সেখানে কাকলি প্রায় ৭৪ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট মুসলিম সম্প্রদায়ের হওয়ার সুবিধা পেয়েছিলেন কাকলি। অতীতে সেই ভোটের কিছুটা বামেদের দখলে যেত। কিন্তু ২০১৯ সালে বামের মোট ভোটই ৯ শতাংশে নেমে আসে। ২০১৯ সালে সল্টলেক ও হাবড়া বিধানসভা এলাকায় বিজেপি এগিয়ে থাকলেও সব ‘ক্ষতি’ পুষিয়ে দিয়েছিল দেগঙ্গা। এ বার দেগঙ্গা কী করবে? তাতেই ঠিক হবে বিদ্যাধরীর জনপদ বারাসতের ভাগ্য। যদি বামেদের ভোট বামে ফিরে যায় তবে বারাসতে তৃণমূলের লড়াই কঠিন হতে পারে। কিন্তু কাকলিকে মনে রাখতে হচ্ছে যে, নীলবাড়ির লড়াইতেই দেগঙ্গার ব্যবধান কমে ৩২ হাজারের মতো হয়ে গিয়েছিল। সেখানে বিজেপি বা ফব নয়, দ্বিতীয় হয়েছিল আইএসএফ। দিল্লিবাড়ির লড়াইয়েও প্রার্থী দিয়েছে আইএসএফ। প্রার্থী গত বিধানসভা নির্বাচনে অশোকনগরে তৃতীয় হওয়া তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোট পেয়েছিলেন ২১ শতাংশের বেশি। আর বিধানসভা ভোটে দেগঙ্গায় আইএসএফ প্রার্থী করিম আলি পেয়েছিলেন ৩১.৫২ শতাংশ ভোট। ফলে এই দুই কেন্দ্রে আইএসএফের প্রতীক ‘খাম’ বেগ দিতে পারে ঘাসফুলকে।

এ তো গেল সংখ্যালঘু ভোটের হিসাব। সিএএ কার্যকর হওয়ার পরে মতুয়ামন কোন দিকে, তারও পরীক্ষা হবে এই দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে। বনগাঁর মতো না হলেও বারাসতও মতুয়া ভোটের ‘পরীক্ষাকেন্দ্র’। সেই অঙ্ক কষেই বিজেপি প্রার্থী করেছে মতুয়া সম্প্রদায়ের স্বপন মজুমদারকে। যিনি বনগাঁ দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক। তাঁকে নিয়ে বিজেপি প্রথম দিকে অবশ্য একটু চাপে পড়েছিল। স্বপনের বিরুদ্ধে অতীতে মাদক মামলা রয়েছে। দলের মধ্যেও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। তবে বিজেপির ভাবনায় স্বপন নন, বারাসতে আসলে প্রার্থী দল আর অঙ্ক। সে অঙ্কে রয়েছে দেগঙ্গা এবং আইএসএফ। আছেন বাঙাল ভাষায় কথা বলা উদ্বাস্তুরা। রয়েছেন বাংলায় কথা না বলা সল্টলেক, নিউ টাউনের অভিজাত ভোটারেরাও। মনে করা হচ্ছে হিন্দু-মুসলিম, বাঙালি-অবাঙালি, গ্রাম্য-শহুরে মেরুকরণও প্রভাব ফেলবে বারাসতের ভোটে। আবার কলকাতা সংলগ্ন দমদম পার্ক, বাঙুর, লেক টাউন, দত্তাবাদ, সুকান্তনগরের এলাকার ভোট নিয়েও রয়েছে ভাগাভাগির অঙ্ক।

একটা সময় পর্যন্ত বারাসত ছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের নিশ্চিত আসন। কংগ্রেস দু’বার জিতলেও ফব-ই শাসন করেছে বারাসত। দলের নেতা চিত্ত বসুর বাঁধা আসন ছিল এটি। কিন্তু ২০০৯ সালে ফব প্রার্থী সুধীন চট্টোপাধ্যায়, ২০১৪ সালে মোর্তাজা হোসেন এবং ২০১৯ সালে বিজেপির মৃণালকান্ত দেবনাথকে দ্বিতীয় করে জিতেছেন তৃণমূলের চিকিৎসক প্রার্থী কাকলি। তবে তার আগেও এই আসনে জিতেছে তৃণমূল। ১৯৯৮ এবং ১৯৯৯ সালে জিতেছিলেন আর এক প্রথিতযশা চিকিৎসক রঞ্জিত পাঁজা। যদিও ২০০৪ সালে রঞ্জিত হেরে যান ফব-র সুব্রত বসুর কাছে। ২০০৬ সালে মৃত্যু হয় রঞ্জিতের। ২০০৯ সালে কাকলি পুনরুদ্ধার করেন বারাসত।

এ বার কাকলির জন্য বড় ‘ব্যথা’ তাঁর দলেরই বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় (বালু) মল্লিকের গ্রেফতারি। বালুর অভাবে সাংগঠনিক দুর্বলতা যেমন রয়েছে, তেমনই বালুর কারাবাসের ফলে দলের ভাবমূর্তির প্রশ্নও রয়েছে। রেশন-দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে হাবড়ার বিধায়ক বালুকে নিয়ে ‘চাপ’ ছাড়াও রয়েছে ‘অস্বস্তি’। পুর নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত সন্দেহে বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী তথা মধ্যমগ্রামের বিধায়ক রথীন ঘোষ এবং দমকলমন্ত্রী তথা বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসুর বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি।

এ সব নিয়েই বারাসতের ভোট। গত বার বারাসতে বিজেপির ভোট বেড়েছিল ১৫ শতাংশের মতো। ফব-র ভোট কমেছিল ১৮ শতাংশ। কিন্তু সেই অঙ্ক থাকবে কি? রামে যাওয়া বামের ভোট ফিরে এলে বদলে যাবে সব হিসাব। ফব প্রার্থী করেছে দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়কে। প্রথমে দলের নেতা প্রবীর ঘোষের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে অভিযোগ ওঠে, বিজেপির শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। এর পরেই ২০০৫, ২০১০ এবং ২০১৫ সালে বারাসত পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী সঞ্জীবকে বাছা হয়। প্রসঙ্গত, তিনি বারাসত পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানও ছিলেন। প্রবীর এই নির্বাচনে ‘বীর’ হবেন কি? জানে আইএসএফ। জানে দেগঙ্গা।

Lok Sabha Election 2024 Barasat Constituency Kakoli Ghosh Dastidar Swapan Majumder Dillibari

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।