তারক সিংহ। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
যাবতীয় বিতর্ক ঢাকতে দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূলের নির্বাচন কমিটিতে নেওয়া হল বর্ষীয়ান নেতা তারক সিংহকে। বুধবার রাতে দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূলের নির্বাচন কমিটির ১৩ নম্বর সদস্য হিসাবে তাঁর নাম সংযোজন করেছেন জেলা সভাপতি দেবাশিস কুমার। মঙ্গলবার নির্বাচনী কমিটি গড়েছে দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূল কমিটি। সেই কমিটি থেকে বাদ পড়েছিলেন বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা তারক। মঙ্গলবার রাতে এই কমিটি ঘোষণা করা হলে দেখা যায়, তাতে জায়গা পেয়েছেন মোট ১২ জন তৃণমূল নেতা। যাঁদের মধ্যে অনেকেই তারকের তুলনায় রাজনীতিতে নবীন। তাই তালিকায় নিজের নাম দেখতে না পেয়ে খানিকটা অভিমানী হয়ে পড়েন তারক। বুধবার সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে নিজের অভিমানের কথা প্রকাশ করে দেন তিনি। তারক বলেন, “দল হয়তো মনে করেছে, এখন আর আমার মতো মানুষের প্রয়োজন নেই। তাই নির্বাচন কমিটিতে রাখেনি। এ বিষয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই, তবে দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী মালাকে জেতাতে দল যে দায়িত্ব দেবে তা পালন করব।’’
দক্ষিণ কলকাতা জেলা কমিটি এই বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতার অভিমানের কথা জানতে পারে এবং কমিটিতে তাঁর নাম সংযোজন করেন জেলা সভাপতি দেবাশিস। ১৩তম সদস্য হিসাবে তারককে ওই কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও অভিমান কমেনি তারকের। বৃহস্পতিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। এত দিন রাজনীতি করে আসার পর কোন কমিটিতে আমাকে রাখা হচ্ছে বা হচ্ছে না, তা নিয়ে মন্তব্য করা আমার মতো মানুষের পক্ষে অবমাননাকর। তাই এই বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ইচ্ছাকৃত ভাবে তারকের নাম ওই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নজরে আসার পরেই তাঁর মতো প্রবীণ নেতার নাম কমিটিতে সংযোজন করা হয়েছে। এ বিষয়ে দলের সঙ্গে তারকের কোনও মতবিরোধ তৈরি হোক, এমনটা চান না জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবাশিস। তাই মূলত তাঁর উদ্যোগেই কমিটিতে তারকের নাম সংযোজন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালে তৃণমূল গঠনের সময় যাঁরা মমতার সঙ্গে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেছিলেন, তাঁদেরই এক জন তারক। বর্তমানে তিনি বেহালা পশ্চিম বিধানসভা এলাকার অন্তগর্ত ১১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, পাশাপাশি কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদের (নিকাশি) দায়িত্বও তাঁর কাঁধে। এ ছাড়াও বেহালা পূর্ব বিধানসভার অন্তর্গত ১১৬ এবং ১১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তাঁর কন্যা কৃষ্ণা ও পুত্র অমিত। এমন এক জন প্রভাবশালী নেতার নির্বাচনী কমিটি থেকে বাদ পড়া নিয়ে গুঞ্জন তৈরি হয়েছিল দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূলের অন্দরে। কারণ ১২ জনের এই কমিটিতে এমন অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার নিরিখে তারকের চেয়ে অনভিজ্ঞ। বাম জমানাতে দক্ষিণ কলকাতার বড় অংশের রাজনীতিতে শোভন চট্টোপাধ্যায় ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাশাপাশি তারকের মতামতকেও গুরুত্ব দিতেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই এমন এক জন নেতার নির্বাচন কমিটিতে জায়গা না পাওয়ার বিষয়টি দলের নীচুতলার কর্মীদের বিশেষ ভাবে নজরে এসেছিল। কিন্তু আপাতত তারকের নাম যুক্ত করে বিতর্কের অবসান চাইছে বাংলার শাসকদল। তৃণমূলের দুর্গ বলে পরিচিত দক্ষিণ কলকাতায় তারকের মতো এক জন দাপুটে নেতার ‘ক্ষোভ’ প্রকাশ্যে আসায় খানিক বিড়ম্বনাও বেড়েছিল শাসকদলের। সেই বিতর্ক ধামাচাপা দিয়ে ভোট প্রস্তুতিতে মন দিতে চান তৃণমূল নেতৃত্ব।
দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবাশিস কুমার নির্বাচনী কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছেন। এ ছাড়াও, কমিটির সদস্য হয়েছেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, জাভেদ আহমেদ খান, বাবুল সুপ্রিয়, বেহালা পূর্বের বিধায়ক রত্না চট্টোপাধ্যায়, প্রাক্তন মন্ত্রী মণীশ গুপ্ত, মেয়র পারিষদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, সন্দীপরঞ্জন বক্সী এবং বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়, প্রাক্তন কাউন্সিলর অঞ্জন দাস, বোরো চেয়ারম্যান তথা দক্ষিণ কলকাতা জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী চৈতালী চট্টোপাধ্যায়, দক্ষিণ কলকাতা জেলা যুব সংগঠনের সভাপতি সার্থক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কমিটিতে নতুন সংযোজন তারক। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের কমিটিতেও জায়গা পেয়েছিলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy