বাংলায় ২৯টি লোকসভা আসনে জয় পেয়েছে তৃণমূল। কিন্তু সবচেয়ে কম ব্যবধানে জিতেছেন আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী মিতালি বাগ। গত বারের থেকে ব্যবধান বাড়লেও, এ বারেও আরামবাগে আরামদায়ক জয় পেল না বাংলার শাসদকল। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে আরামবাগে অপরূপা পোদ্দার জিতেছিলেন ১,১৪২ ভোটে। এর থেকে বেশি ভোটে পুরসভায় কাউন্সিলরেরা জেতেন। কিন্তু অপরূপা ওই ব্যবধানে জিতেই সাংসদ হয়েছিলেন। এ বার আর বিদায়ী সাংসদকে টিকিট দেয়নি তৃণমূল। অখ্যাত মিতালিকে প্রার্থী করে চমকই দিয়েছিল শাসদকদল। তিনি জিতেছেন ৬,৩৯৯ ভোটে।
আরামবাগের লড়াই এ বার তৃণমূলের জন্য যে কঠিন, তা ভোটের আগে থেকেই ঘরোয়া আলোচনায় মানতেন অনেক নেতা। একে তো পাঁচ বছর আগে অপরূপা যৎসামান্য ভোটে জিতেছিলেন। দুই, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে আরামবাগ লোকসভার সাতটি বিধানসভার মধ্যে চারটিতে জিতেছিল বিজেপি। তিনটি ছিল তৃণমূলের দখলে। সেই অঙ্কেও তৃণমূল পিছিয়ে ছিল। রাজনৈতিক মহলের মতে, প্রার্থী বদল করে তৃণমূল আরামবাগের খেলা তাদের দিকে ঘুরিয়ে নিতে পেরেছে।
জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, মাত্র তিনটি বিধানসভায় লিড পেয়ে দিল্লি যাচ্ছেন মিতালি। চারটি বিধানসভায় জিতেছে বিজেপি। তৃণমূল যে তিনটি বিধানসভায় লিড পেয়েছে সেগুলি হল হরিপাল, তারকেশ্বর এবং আরামবাগ। এর মধ্যে ২০২১-এর ভোটে আরামবাগ বিধানসভায় জিতেছিল বিজেপি। আবার চন্দ্রকোনা বিধানসভা তৃণমূলের দখলে থাকলেও সেখানে লোকসভা ভোটে লিড পেয়েছে বিজেপি।
কম ব্যবধান হলেও জয়কে জয় হিসেবেই দেখতে চান মিতালি। তিনি বলেন, ‘‘আরামবাগে লড়াই কঠিন ছিল। কিন্তু মানুষ দু’হাত ভরে আশীর্বাদ করেছেন। এর চেয়ে বড় কথা আর কী আছে!’’ বেশ কয়েকটি আসনে গণনার জন্য বিশেষ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছিলেন তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আরামবাগ ছিল তার মধ্যে অন্যতম। সেখানে পর্যবেক্ষক হিসেবে গিয়েছিলেন রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ শান্তনু সেন। তিনি বলেন, ‘‘ভোটের দিন আরামবাগ, খানাকুল, গোঘাট, পুরশুড়ার মতো বিভিন্ন এলাকায় বিজেপি ব্যাপক সন্ত্রাস কায়েম করেছিল। অনেক মানুষকে ঘর থেকে বার হতে দেওয়া হয়নি। তবে মানুষ তার পরেও তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আশীর্বাদ করেছেন। আমরা আগের বারের থেকেও বেশি ভোটে জিতেছি।’’
আরও পড়ুন:
এই আরামবাগেই একটা সময়ে সিপিএমের অনিল বসু জিতেছিলেন প্রায় ছ’লক্ষ ভোটে। তার আগে-পরেও আরামবাগে যাঁরা জিততেন, ব্যবধান এক লক্ষের নীচে নামত না। ২০১৪ সালে প্রথমবার আরামবাগে জিতেছিলেন অপরূপা। সে বার তার ব্যবধান ছিল প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ। পাঁচ বছরের মধ্যে সেটাই নেমে হয়েছিল ১,১৪২। পর পর দু’বার কম ব্যবধানে জয়ের পরে কৌতূহল তৈরি হয়েছে, তা হলে কি আরামবাগ বিরোধী-শূন্য রাজনীতির রেওয়াজ বদলাচ্ছে?