গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বাংলার ৪২টি আসনের মধ্যে ২৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল সিপিএম। বামফ্রন্টের শরিক দলগুলি প্রার্থী দিয়েছিল সাতটি আসনে। ফলপ্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে, রাজ্যে সিপিএমের ২৩ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র দু’জন জামানত রক্ষা করতে পেরেছেন। বাকি ২১ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে গিয়েছে।
ঘটনাচক্রে, যাঁরা দলের তথা নিজের জামানত রাখতে পেরেছেন, তাঁরা দু’জনেই প্রবীণ— মুর্শিদাবাদে মহম্মদ সেলিম এবং দমদমে সুজন চক্রবর্তী। এ বার রাজ্যে একঝাঁক তরুণ মুখকে প্রার্থী করেছিল সিপিএম। তাঁদের সকলেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। খুব অল্প ভোটে জামানত খুইয়েছেন যাদবপুরে সৃজন ভট্টাচার্য এবং শ্রীরামপুরে দীপ্সিতা ধর। তমলুকে লড়েছিলেন তরুণ প্রার্থী তথা পেশায় আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এক লক্ষ ভোটও পাননি। পেয়েছেন ৫.৪১ শতাংশ ভোট। এবং জামানত খুইয়েছেন। ডায়মন্ড হারবারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সিপিএম তরুণ নেতা প্রতীক-উর রহমানকে প্রার্থী করেছিল। তিনিও জামানত রক্ষা করতে পারেননি। পেয়েছেন ৫.৬৮ শতাংশ ভোট। তাঁর প্রাপ্ত ভোট এক লক্ষেরও কম।
জামানত রক্ষা করার নিয়ম কী?
নির্বাচন কমিশনের নিয়মানুযায়ী, মোট যত ভোট পড়েছে, তার এক-ষষ্ঠাংশ অর্থাৎ ছ’ভাগের এক ভাগ ভোট পেলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর জামানত থাকবে। একটি ভোট কম পেলেও জামানত রক্ষা হবে না। প্রার্থী হতে গেলে নির্বাচন কমিশনে টাকা গচ্ছিত (ডিপোজ়িট মানি) রাখতে হয়। লোকসভা ভোটে সেই অঙ্ক এককালীন ২৫ হাজার টাকা। জামানত গেলে সেই টাকা নির্বাচন কমিশনে জমা থাকে। তা আর প্রার্থী বা সংশ্লিষ্ট দল ফেরত পায় না। সেই হিসেব কষলে দেখা যাচ্ছে, ২১ জন প্রার্থীর জন্য আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের জামানত বাবদে ৫ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা জলে গেল। বামেদের আবার বিপর্যয় প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা শমীক লাহিড়ী বলেন, ‘‘পর্যালোচনা করে দেখতে হবে কেন বার বার এ রকম হচ্ছে। এটা ফলঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বলে দেওয়া সম্ভব নয়।’’
উল্লেখ্য, বামফ্রন্টের বাকি দলগুলির সাত প্রার্থীর কারও জামানত রক্ষা হয়নি। তাঁদের মধ্যে তিন জন আরএসপির, দু’জন করে সিপিআই এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের। ফ্রন্টের বাইরে গিয়ে পুরুলিয়ায় প্রার্থী দিয়েছিল ফরওয়ার্ড ব্লক। ওই কেন্দ্রেও জামানত খুইয়েছেন তিনি।
বাম প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিম। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৫ লক্ষ ১৮ হাজার। শতাংশের হিসাবে সেলিম পেয়েছেন ৩৩.৬২ শতাংশ ভোট। সুজন পেয়েছেন ১৯.১১ শতাংশ ভোট। রাজ্যের মধ্যে একমাত্র মুর্শিদাবাদ আসনেই সেলিম দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। আর কোনও আসনে কোনও বাম প্রার্থী দ্বিতীয়ও হতে পারেননি। বেশির ভাগই রয়েছেন তৃতীয় স্থানে। কেউ কেউ আবার চারেও চলে গিয়েছেন।
সিপিআইয়ের থেকে নিয়ে বসিরহাট আসনটিতে এ বার লড়েছিল সিপিএম। সেই আসন ভাগাভাগি নিয়ে বামফ্রন্টের মধ্যে কম আলোচনা হয়নি। সেখানে সিপিএম প্রার্থী করেছিল সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে। যাঁকে সন্দেশখালি পর্বে গ্রেফতার হয়ে বেশ কয়েক সপ্তাহ জেলেও থাকতে হয়েছিল। কিন্তু সেই নিরাপদও জামানত খুইয়েছেন। শুধু তা-ই নয়। তিনি বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে চার নম্বরে রয়েছেন। তৃতীয় স্থানে রয়েছেন আইএসএফ প্রার্থী। নিরাপদের প্রাপ্ত ভোট ৭৮ হাজারের মতো। সেই জায়গায় বসিরহাটের আইএসএফ প্রার্থী পেয়েছেন ১ লক্ষ ২৩ হাজার ভোট। একই রকম ভাবে মথুরাপুরেও সিপিএমের চিকিৎসক প্রার্থী শরৎচন্দ্র হালদার জামানত খোয়ানোর পাশাপাশি চার নম্বরে চলে গিয়েছেন। সেখানেও আইএসএফ তিন নম্বরে রয়েছে।
অল্পের জন্য জামানত খুইয়েছেন সৃজন এবং দীপ্সিতা। যাদবপুরে যা ভোট পড়েছিল তার এক-ষষ্ঠাংশ পেতে গেলে সৃজনকে পেতে হত ২ লক্ষ ৬১ হাজার ৮৫টি ভোট। সৃজন পেয়েছেন দু’লক্ষ ৫৮ হাজার ৭১২টি ভোট। অর্থাৎ, তিন হাজারেরও কম ভোটের জন্য জামানত খুইয়েছেন এই তরুণ তুর্কি। আর দীপ্সিতা সাত হাজার ভোটের জন্য জামানত খুইয়েছেন শ্রীরামপুরে। তিনি পেয়েছেন ২ লক্ষ ৩৯ হাজার ১৪৬টি ভোট। পেতে হত ২ লক্ষ ৪৬ হাজার ভোট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy