অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কপ্টারেই চলেছে তল্লাশি। — নিজস্ব চিত্র।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হেলিকপ্টারে আয়কর তল্লাশি নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ তৈরি হল। তৃণমূলের যুক্তি, লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপি হারতে চলেছে সেটা বুঝেই মরিয়া হয়ে আয়কর দফতরকে ব্যবহার করছে কেন্দ্রের শাসকদল। যদিও বিজেপি এই দাবি মানতে চায়নি। তাদের দাবি, কোনও খবর পেয়েই অভিষেকের কপ্টারে তল্লাশি চালিয়েছে আয়কর দফতর।
রবিবার, পয়লা বৈশাখের দিন অভিষেক এক্স হ্যান্ডল (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন, তাঁর কপ্টারে তল্লাশি চালিয়েছে আয়কর দফতর। তার পরেই সরব তৃণমূল। রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা স্পষ্টই জানিয়ে দেন যে, বিজেপি আসলে ভয় পেয়েছে। সে কারণেই এ সব করছে। তাঁর কথায়, ‘‘আজকের তল্লাশি এটাই প্রমাণ করে যে, বিজেপি ভয় পেয়েছে। আজ দেখলাম বাংলায় অভিষেকের চপারে তল্লাশি করতে আয়কর দফতরের আধিকারিকেরা এসেছেন। বিজেপির নির্দেশেই তৃণমূলকে বিরত করা হচ্ছে।’’ সম্প্রতি ইডি, সিবিআই-সহ কেন্দ্রীয় সংস্থার প্রধানদের ভোটের আগে অপসারণের দাবিতে দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দফতরে যায় তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। তারা ধর্নাতেও বসে। সেই প্রসঙ্গ তুলেই শশী বলেন, ‘‘এ রাজ্যের ডিএম, এসপিকে হটানো যায়। এনআইএ-র ডিরেক্টরকে কেন সরানো যায় না? এ জন্য কমিশনে গিয়েছিলাম আমরা। এ ভাবে নির্বাচন হয় না। আমরা লড়ব, জিতব। বিজেপি হারবে।’’
তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘অভিষেকের চপারের ট্রায়াল রানের সময় আয়কর দফতরের আধিকারিকেরা হাল্লার রাজার মতো তল্লাশি চালিয়েছেন। কেন তল্লাশি, বলতে পারেননি। নিরাপত্তারক্ষীরা ছবি তুলতে যাচ্ছিলেন, তাঁরা দেননি। ঝগড়া করেছেন। কিছু খুঁজে পাননি আধিকারিকেরা। সব ব্যাগ খুলে তছনছ করেছেন। কী হচ্ছে? বাধা দিতে গেলে বলছেন, দেরি করাব। আটকে রাখব।’’ কুণাল এই ঘটনার নিন্দা করেছেন। তাঁর দাবি, বিজেপি হারছে। কেন্দ্রীয় সরকার তাই সব এজেন্সিকে ‘পৈশাচিক ভাবে’ হামলা করতে পাঠাচ্ছে। তাণ্ডব করতে পাঠাচ্ছে।
তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখলে এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘নির্বাচন শুরু হওয়ার পাঁচ দিন আগে প্রার্থীদের স্বাধীন ভাবে প্রচার করতে দেবে না বলে মোদী এবং শাহ আয়কর দফতরকে ব্যবহার করছেন মরিয়া ভাবে। নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের যারা বাছাই করে নিয়োগ করেছে, স্বাভাবিক ভাবেই তাদেরই পরিষেবা দিচ্ছেন আধিকারিকেরা। তাদের দিকেই চোখ বন্ধ করে রেখেছেন।’’ রাজ্যসভার আর এক সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন লেখেন, ‘‘বেপরোয়া লোকজন কি কপ্টারে কিছু ফল এবং মাছের স্যান্ডউইচ পেয়েছে?’’ নবরাত্রির সময় বা শ্রাবণ মাসে মাছ-মাংস খাওয়া বা তার ভিডিয়ো নেটদুনিয়ায় দেওয়াকে ‘মোগলদের মানসিকতা’ বলে বিরোধীদের আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। নাম না করে রাহুল গান্ধী, লালুপ্রসাদ, তেজস্বী যাদবদের নিশানা করেন। কারণ, গত বছর রাহুল গান্ধী লালুপ্রসাদের সঙ্গে পাঁঠার মাংস রান্না করার ভিডিয়ো শেয়ার করেছিলেন। কিছু দিন আগে তেজস্বী ভোটের প্রচারে গিয়ে মাছ খাওয়ার ভিডিয়ো শেয়ার করেছেন। মনে করা হচ্ছে, ডেরেক সেই প্রসঙ্গ তুলেই রবিবার পাল্টা কটাক্ষ করলেন বিজেপিকে। বিজেপিকে ‘বাংলা-বিরোধী’ বলে এক্স হ্যান্ডলে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ। জানিয়েছেন, কোনও কৌশলই তৃণমূলকে থামাতে পারবে না।
বিজেপি যদিও তৃণমূলের দাবি মানেনি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই কোনও খবর ছিল আয়কর দফতরের কাছে। আমি তো তাদের মুখপাত্র নই। তারাই বলতে পারবে কেন এই তল্লাশি।’’ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আইন নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে। জলপাইগুড়িতে বিজেপি নেতার বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের প্রসঙ্গও তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘উনি কি আইনের বাইরে? কালও এক বিজেপি নেত্রীর থেকে তল্লাশি চালিয়ে এক লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে। সেই টাকা তো থাকতেই পারে।’’
সোমবার কপ্টারে চেপে হলদিয়া যাওয়ার কথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের। তার আগের দিনই বেহালা ফ্লাইংক্লাবে ওই কপ্টারে আচমকাই তল্লাশি চালান আয়কর দফতরের আধিকারিকেরা। তৃণমূল সূত্রে খবর, আয়কর দফতরের আধিকারিকেরা ওই কপ্টারে তল্লাশি অভিযান চালানোর সময়ে অভিষেকের নিরাপত্তারক্ষীদের ভিতরে ঢুকতে বাধা দেন এবং তার পরে কপ্টারের ভিতরে রাখা প্রতিটি ব্যাগ খুলে দেখে। কিন্তু হেলিকপ্টারের ভিতরে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও শেষ পর্যন্ত কিছু পাওয়া যায়নি। তৃণমূল সূত্রে দাবি, কিছু না পেয়ে ‘হতাশ এবং বিরক্ত’ আয়কর আধিকারিকেরা শেষে হেলিকপ্টারটিকে আটকে রেখে দেন। ওড়ার অনুমতি চাওয়া হলেও দেওয়া হয়নি। পরে এ নিয়ে অভিষেকের নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে বচসাও হয় আয়কর আধিকারিকদের। এই বিষয়েই সরব তৃণমূল নেতৃত্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy