(বাঁ দিক থেকে) কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, কুণাল ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
কংগ্রেসে থাকাকালীন সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে ‘তরমুজ’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ, যার উপরে সবুজ, ভিতরে লাল। সেই প্রথম রাজ্য রাজনীতি শুনেছিল ফলের সঙ্গে রাজনীতিকের সাযুজ্য। দীর্ঘদিন পরে তার পুনরাবৃত্তি ঘটল। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে ‘খরমুজ’ বললেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
সুব্রতকে মমতা তরমুজ বলেছিলেন কারণ, মমতা মনে করতেন, সুব্রত-সহ কংগ্রেসের কিছু নেতা সিপিএমের সঙ্গে আপস করে চলছেন। সেই কারণেই তাঁরা সিপিএমকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চান না। তাঁরা উপরে কংগ্রেস হলেও আসলে ভিতরে ভিতরে সিপিএম। সবুজ-লালের সেই সহাবস্থান বোঝাতেই ‘তরমুজ’ শব্দ ব্যবহার করেছিলেন মমতা। যদিও পরে সুব্রত তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। মৃত্যুর সময় তিনি ছিলেন তৃণমূলের অন্যতম নেতা এবং রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী।
মমতার বইয়ের পাতা নিয়েই অভিজিতের বিষয়ে মঙ্গলবার কল্যাণ বলেন, ‘‘ও একটা খরমুজ! যার ভিতরটা লাল, উপরটা গেরুয়া।’’ কল্যাণ আরও বলেন, ‘‘ও (অভিজিৎ) সবটা করেছে সিপিএমের দাক্ষিণ্যে! বিভিন্ন প্যানেলে ঢুকেছিল, এসএসসির আইনজীবী ছিল, তার পর এখন সিপিএমকে ল্যাং মেরে বিজেপিতে যাচ্ছে। ও আসলে শুভেন্দু অধিকারীর পায়ে ঝাঁপ দিয়ে পড়েছে।’’ কল্যাণের সঙ্গেই মঙ্গলবার তৃণমূল ভবনের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কুণাল ঘোষও। তিনি বলেন, ‘‘এটা প্রমাণিত যে, তৃণমূলের মুখপাত্রেরা সঠিক লোককেই আক্রমণ করে এসেছেন এত দিন। ওঁর ভিতরে যে এত বিষ রয়েছে, তা আজকে দেখা গেল। সেই বিষই ওঁর দেওয়া প্রতিটা রায়ে প্রতিফলিত হয়েছিল।’’
মঙ্গলবার বিচারপতি পদ থেকে ইস্তফা দেন অভিজিৎ। তার পর দুপুরে সল্টলেকের বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘোষণা করেন তিনি ‘আপাতত’ বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। সেই সাংবাদিক বৈঠকেই শাসকদল তৃণমূল সম্পর্কে চাঁচাছোলা আক্রমণ শানিয়েছিলেন অভিজিৎ। তার খানিক ক্ষণের মধ্যে সাংবাদিক বৈঠক করে পাল্টা জবাব দেয় তৃণমূলও।
সাংবাদিক বৈঠকে কল্যাণের বেড়ে ওঠা, পারিবারিক সংস্কৃতি ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অভিজিৎ। বিকালে পাল্টা আক্রমণের রাস্তায় হাঁটেন কল্যাণ। অভিজিতের বৈবাহিক জীবনের কথাও টানেন তিনি। কল্যাণ বলেন, ‘‘ও একটা অসভ্য লোক, অভদ্র লোক, কলকাতা হাই কোর্টের কলঙ্ক। একদম দু’নম্বরি! ফোর টোয়েন্টি।’’ কল্যাণ আরও বলেন, ‘‘এক বার কিছু চাকরিপ্রার্থী ওর (অভিজিতের) সম্পর্কে স্লোগান দিচ্ছিলেন, ছিলে তুমি ভগবান, হয়ে গেলে শয়তান। আমি তখন ওঁদের বারণ করেছিলাম। এখন দেখছি ঠিকই বলেছিলেন।’’
আইনজীবী এবং বিচারপতি হিসাবে অভিজিতের মান ও যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কল্যাণ। তিনি বলেন, ‘‘ও ৫৬ বছর বয়সে জজ হয়েছিল। যখন আইনজীবী ছিল, তখন হাই কোর্টের বারান্দায় অ্যালব্যাল করে করে ঘুরত। একটা থার্ড গ্রেডেড। কিচ্ছু জানে না। ওর ৮৫ শতাংশ রায় হয় ডিভিশন বেঞ্চ, নয় সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দিয়েছে।’’ পাশাপাশি নিজের কথা উল্লেখ করে কল্যাণ বলেন, ‘‘আমি ২০০৪ সালে কলকাতা হাই কোর্টে সিনিয়র অ্যাডভোকেট হয়েছিলাম। ও জীবনে সিনিয়র তকমাটাও পায়নি।’’
অভিজিৎ জানিয়েছেন, বিজেপি তাঁকে টিকিট দিলে তিনি ভোটে লড়বেন। এবং ডায়মন্ড হারবারে অভিষেক বন্দ্যপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তেও তাঁর কোনও ভয় নেই। যার পাল্টা কল্যাণ বলেন, ‘‘ও যেখানে দাঁড়াবে, সেখানে হারাব! ওকে হারাবই হারাব। ওকে না হারালে বিচারব্যবস্থা হেরে যাবে।’’
তবে মঙ্গলবার তৃণমূলের সাংবাদিক সম্মেলনে কুণালের উপস্থিতি ‘অর্থবহ’ বলেই শাসক শিবিরের অভিমত। সম্প্রতি উত্তর কলকাতার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে তাঁর কিছু মন্তব্য নিয়ে তৃণমূলে তোলপাড় হয়েছিল। তার পর তিনিই এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করে জানিয়েছিলেন, তিনি তৃণমূলের মুখপাত্র ও রাজ্য সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। দল ‘মুখপাত্র’ পদে ইস্তফা গ্রহণ করলেও সাধারণ সম্পাদক পদে ইস্তফা গ্রহণ করেনি। তার পর সোমবার কুণালকে শো-কজ় করেছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। মঙ্গলবার কুণালকে দলের তরফে আবার সাংবাদিক বৈঠক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কুণালকে দলের ‘মুখপাত্র’ পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে কিনা, তিনি শো-কজ়ের জবাব দিয়েছেন কি না বা দিলেও তাতে বক্সী সন্তুষ্ট কি না, তা শাসকদলের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy