(বাঁ দিকে) অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘প্রকৃত রাজনীতিক’ মনে করেন। আবার তিনিই মনে করেন, মমতার হাতে তৈরি দল তৃণমূল ‘যাত্রাপার্টি’। তিনি সদ্য বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে রাজনীতির ময়দানে আসা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। যিনি আগামী বৃহস্পতিবার ‘আপাতত’ বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন।
পূর্বঘোষণা মতো মঙ্গলবার হাই কোর্টে গিয়ে দেশের রাষ্ট্রপতিকে জিপিও মারফত ইস্তফার চিঠি পাঠিয়ে দেন অভিজিৎ। তার পর সল্টলেকের বাড়িতে পৌঁছে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানেই বিবিধ প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। তৃণমূল নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে অভিজিৎ বলেন, ‘‘তৃণমূল একটি দুষ্কৃতীদের দল বলে মনে করি। তৃণমূলকে আমি রাজনৈতিক দল বলেই মনে করি না! তৃণমূল হল একটি আদ্যোপান্ত যাত্রাদল। ওদের যাত্রাপালার নাম হল মা-মাটি-মানুষ।’’ আবার পাশাপাশিই তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি মমতাকে প্রকৃত রাজনীতিক হিসাবে মনে করি।’’ প্রসঙ্গত, বিচারপতি থাকাকালীন বিভিন্ন মামলার পর্যবেক্ষণেও মমতা সম্পর্কে ‘মানবিক মুখ্যমন্ত্রী’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার অভিজিৎ যখন তাঁর সাংবাদিক সম্মেলন শুরু করেন, প্রায় সেই একই সময়ে মেদিনীপুর থেকে হেলিকপ্টারে ডুমুরজলায় নামেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে অভিজিতের রাজনীতিতে আসা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি শুধু বলেন, ‘‘আগে যোগ দিন। তার পরে যা বলার বলব। এখন এ নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না প্লিজ়।’’ মমতা কিছু না বললেও তৃণমূল অবশ্য প্রতিক্রিয়া দিতে দেরি করেনি। রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিচারপতি হিসাবে তিনি যা রায় দিয়েছেন, সব ছিল পক্ষপাতদুষ্ট। আর রাজনীতির ময়দানে আসতে না আসতেই স্ববিরোধিতা বেআব্রু হয়ে গেল।’’
প্রয়াত পালাকার ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়ের বিখ্যাত যাত্রাপালা ছিল ‘মা-মাটি-মানুষ’। ঘটনাচক্রে, তৃণমূলকে তার সঙ্গে তুলনা করলেন আর এক গঙ্গোপাধ্যায়। ভবিষ্যদ্বাণী করার মতো করে অভিজিৎ আরও বলেছেন, ‘‘২০২৪ সালে লোকসভা ভোটে তৃণমূলের সেই অবস্থা হবে, যা ২০০৯ সালে সিপিএমের হয়েছিল। আর ২০২৬ সাল পর্যন্ত দলটাই থাকবে না! শুধু কয়েকটা গ্রেফতারির প্রয়োজন।’’ পাল্টা তৃণমূলের তরফে চন্দ্রিমা বলেন, ‘‘উনি ২০২৬ সাল পর্যন্ত রাজনীতিতে থাকবেন কি না তারই ঠিক নেই!’’
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বাংলায় ১৮টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। সেই সময়েও অনেকে তখনকার পরিস্থিতিকে ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটের পরে সিপিএমের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করেছিল। যে ভোটে তৃণমূল ১ থেকে বেড়ে ১৯টি সাংসদ জিতেছিল। তার ঠিক দু’বছরের মাথায় ২০১১ সালে বাংলার বাম সরকারের পতন ঘটে। কিন্তু ২০১৯ সালের ধাক্কা সামলে নিয়েছিল তৃণমূল। ২০২১ সালের ভোটে বিজেপিকে আটকে দিয়েছিল ৭৭টি আসনে। যে ভোটে গোটা দেশের বিজেপি কার্যত সমস্ত শক্তি ঢেলে দিয়েছিল বাংলা দখলের জন্য। তবে অভিজিৎ বরাবরই তৃণমূল সম্পর্কে সমালোচনার মনোভাব পোষণ করেছেন। সে তিনি বিচারপতির আসনে থাকুন বা সাধারণ নাগরিকের। তাঁর বিভিন্ন মামলার পর্যবেক্ষণে অভিজিৎ তৃণমূলের সমালোচনাই করেছেন। তবে মমতা সম্পর্কে তিনি বরাবরই শ্রদ্ধার মনোভাব দেখিয়েছেন। নিজের বিজেপিতে যোগদানের কথা ঘোষণার দিনেও দেখা গেল, তিনি মমতা সম্পর্কে সেই মনোভাবই পোষণ করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy