মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
তাঁরা সকলেই ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে জিতেছিলেন। তাঁরা সকলেই রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে তাঁদের বিধানসভায় পিছিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। উত্তর দিনাজপুর থেকে কলকাতা— রাজ্যের আট জন মন্ত্রীর বিধানসভায় হার হয়েছে জোড়াফুল শিবিরের।
এই মন্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলেন শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজা এবং দমকলের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী সুজিত বসু। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী শশীর বিধানসভা কেন্দ্র শ্যামপুকুরে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। শ্যামপুকুর পড়ে উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে। যে কেন্দ্রটি নিয়ে এ বার বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। উত্তর কলকাতা লোকসভায় তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জিতলেও শশীর শ্যামপুকুরে এগিয়ে রয়েছেন বিজেপির তাপস রায়। পাশাপাশিই, কলকাতা লাগোয়া বিধাননগর বিধানসভাতেও পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। যেখানকার বিধায়ক রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত। বিধাননগর বারাসত লোকসভার মধ্যে অন্তর্গত। বারাসত লোকসভা থেকে নির্বাচিত হয়েছেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তিনি ওই কেন্দ্রে এই নিয়ে টানা চার বার জিতলেন। কিন্তু কাকলি লোকসভায় জিতলেও অগ্নিনির্বাপণ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী সুজিতের বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল ১১ হাজার ভোটে পিছিয়ে! শশী এবং সুজিত— দু’জনের সঙ্গেই যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। শশীর ফোন কোনও এক জন ধরে বলেছেন, তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন। সুজিত ফোন তোলেননি।
কলকাতা এবং বিধাননগরে যখন এই ছবি, তখন উত্তরবঙ্গে নজর রাখলে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সত্যজিৎ বর্মনের বিধানসভা কেন্দ্র হেমতাবাদে ৮ হাজার ভোটে পিছিয়ে রয়েছে শাসক তৃণমূল। হেমতাবাদ পড়ে রায়গঞ্জ লোকসভার মধ্যে। রায়গঞ্জ লোকসভা এ বারও জিতেছে বিজেপি। উত্তরবঙ্গের মালদহে দুই মন্ত্রী তাজমুল হোসেন এবং সাবিনা ইয়াসমিনের বিধানসভা কেন্দ্রেও পিছিয়ে তৃণমূল। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনার কেন্দ্র মোথাবাড়িতে ব্যবধান বিরাট। তাঁর কেন্দ্রটি পড়ে দক্ষিণ মালদহ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে। অন্য দিকে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের প্রতিমন্ত্রী তাজমুলের হরিশচন্দ্রপুর বিধানসভা পড়ে মালদহ উত্তর লোকসভার মধ্যে। ওই লোকসভায় এ বারও জিতেছেন বিজেপির খগেন মুর্মু। মন্ত্রী তাজমুলের কেন্দ্র হরিশচন্দ্রপুরে তৃণমূল পিছিয়ে ৫ হাজার ভোটে। সাবিনার মোথাবাড়িতে কংগ্রেসের চেয়ে তৃণমূল পিছিয়ে ৩৪ হাজার ভোটে। প্রসঙ্গত, সাবিনার মোথাবাড়ি যে মালদহ দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে, সারা রাজ্যের মধ্যে একমাত্র সেই লোকসভাতেই এ বার জিতেছে কংগ্রেস।
কৃষ্ণনগর লোকসভায় এ বারও জিতেছেন তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কৃষ্ণনগর দক্ষিণ বিধানসভায় তৃণমূল তথা মহুয়া পিছিয়ে রয়েছেন ৯ হাজার ভোটে। কৃষ্ণনগর দক্ষিণের বিধায়ক উজ্জ্বল বিশ্বাস রাজ্যের বিজ্ঞান-প্রযুক্তিমন্ত্রী। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দুই মন্ত্রী অখিল গিরি এবং বিপ্লব রায়চৌধুরির বিধানসভাতেও পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। কারা প্রতিমন্ত্রী অখিলের রামনগরে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ৯ হাজার ভোটে। আর মৎস্য প্রতিমন্ত্রী বিপ্লবের পাঁশকুড়া পূর্বে তৃণমূল ৩ হাজার ভোটে পিছিয়ে। রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রটি পড়ে কাঁথি লোকসভার মধ্যে আর পাঁশকুড়া পূর্ব তমলুকের অধীন। দু’টি কেন্দ্রেই জিতেছে বিজেপি।
কেন ধরে রাখতে পারলেন না নিজেদের বিধানসভা, সেই প্রশ্নে একেক জন মন্ত্রী একেক রকম যুক্তি দিয়েছেন। হেমতাবাদের সত্যজিৎ সরাসরিই বলেছেন, ‘‘আমাদের জেলা পরিষদের সভাধিপতিকে নিয়ে বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে। এসসি সংরক্ষিত পদে এসটি-কে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই ক্ষোভের কারণে রাজবংশী ভোট আমরা পাইনি।’’ আবার মোথাবাড়ির সাবিনার বক্তব্য, ‘‘লোকসভায় যা ফল হয়েছে, বিধানসভায় তা হবে না।’’ কিন্তু লোকসভায় এমন ফল হল কেন? সাবিনা বলেন, ‘‘ভোটের দু’দিন আগে সংখ্যালঘু ভোটের মন বদল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কোথাও দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) বা তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ নেই। মালদহ দক্ষিণে কংগ্রেসের পক্ষে কোতোয়ালি বাড়ির আবেগ কাজ করেছে।’’ উল্লেখ্য, মালদহ দক্ষিণে জয়ী কংগ্রেসের প্রার্থী ইশা খান চৌধুরী প্রয়াত গনি খান চৌধুরীর ভাইপো। গনির পরিবারকে ঘিরে মালদহে আবেগ রয়েছে। সাবিনা সেই যুক্তিই দিয়েছেন। আর কৃষ্ণনগর দক্ষিণের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী উজ্জ্বলের বক্তব্য, ‘‘আগের লোকসভাতেও কৃষ্ণনগর দক্ষিণে আমরা পিছিয়ে ছিলাম। সে সব মেরামত করেই আমাকে বিধানসভায় জিততে হয়েছিল।’’ মন্ত্রী তথা রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি স্পষ্টই জানিয়েছেন, এই হারের ‘কারণ’ খুঁজতে রবিবার তিনি পর্যালোচনা বৈঠক করবেন। সেই বৈঠকে ডাকা হয়েছে বুথ স্তরের নেতাদেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy