বরানগরের তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়। —ফাইল চিত্র।
বরানগরের তৃণমূল বিধায়কের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন তাপস রায়। সোমবার বিধানসভায় গিয়ে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তিনি ইস্তফাপত্র জমা দেন।
সোমবার বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন দলের বিরুদ্ধে। বিধানসভায় যাওয়ার সময় তিনি উপমুখ্যসচেতকের গাড়ি ব্যবহার করেননি। নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে বিধানসভায় পৌঁছেছেন।
সকালেই তাপসের বৌবাজারের বাড়িতে গিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁরা বেরিয়ে যাওয়ার পরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তাপস। জানান, তিনি দলে অবহেলিত, উপেক্ষিত এবং অসম্মানিত। অর্থাৎ, ব্রাত্য, কুণালের ‘দৌত্য’ যে কাজে লাগেনি, তাঁরা যে তাপস-বরফ গলাতে পারেননি, তা স্পষ্ট।
সোমবার সকালেই আনন্দবাজার অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, তাপস ইস্তফা দিতে পারেন। তাঁর বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছে। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি রবিবারেই জানিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূল আর করবেন না! তৃণমূল আর করা যাচ্ছে না!
সোমবার বাড়ি থেকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সন্দেশখালি থেকে শুরু করে তাঁর বাড়িতে ইডির অভিযান— একাধিক বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাপস। বলেন, ‘‘দলে এত দুর্নীতি, সন্দেশখালিকাণ্ড, আমাকে এত অপমান, অসম্মান, অবহেলা— আমাকে কষ্ট দিয়েছে। বেশ কিছু দিন ধরে আমি দলের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলছি।’’
দলের প্রতি অভিমানের কথা বলতে গিয়ে তাপস বলেন, ‘‘এত বছরে এই প্রথম বার আমি বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে সে ভাবে থাকতে পারিনি। আমি মনে করি, যে কোনও কাজে স্বতঃস্ফূর্ত থাকা উচিত। এত বছর ধরে আমি তৃণমূল করছি। দলের সঙ্গে আমার দীর্ঘ ২৩-২৪ বছরের সম্পর্ক। আমার বাড়িতে গত ১২ জানুয়ারি ইডি এসেছিল। দল আমার পাশে দাঁড়ায়নি। কেউ একটা ফোনও করেনি। আমার পরিবারকে কেউ সান্ত্বনা দেয়নি।’’
আরও এক ধাপ এগিয়ে তাপস এ-ও বলেন, ‘‘আমি বিভিন্ন জায়গা থেকে শুনেছি, আমার বাড়িতে ইডির অভিযানের নেপথ্যে দলেরই কেউ কেউ রয়েছে। এটা দুঃখের বিষয়, বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ভাষণ দিলেন, তিনি সন্দেশখালির শাহজাহানের কথা বললেন। কিন্তু আমার কথা উল্লেখ করলেন না। আমি আশা করেছিলাম উনি আমার বাড়িতে ইডি অভিযানের কথা এক বার হলেও বলবেন। যেমন বাকিদের ক্ষেত্রে বলে থাকেন। এতে আমি আঘাত পেয়েছি।’’
তাপস যোগ করেন, ‘‘রাজনীতিতে আমার সততা কারও অজানা নয়। নিজের দলের লোকই যদি আমার বিরুদ্ধে চলে যায়, সেটা দুর্ভাগ্যের। আমার বাড়িতে একটা সাজানো ইডি অভিযান হল, ৫২ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। আমি এখনও মমতার ডাক পাইনি। আমার হৃদয়কে এটা ভারাক্রান্ত করেছে।’’
উল্লেখ্য, তাপস যে ‘বিদ্রোহী’ হয়ে উঠেছেন, তার আঁচ পেয়েছিল তৃণমূল। রবিবার থেকে দলের ‘দূত’ দফায় দফায় তাপসের বাড়িতে গিয়েছেন। মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক রবিবার তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন। ‘অনুরোধ’-এর ঢেউয়ের মুখেও তাপস অনড় থেকেছেন।
তাপসের ঘনিষ্ঠ সূত্রদের বিশ্বাস করলে বলতে হবে প্রবীণ এই রাজনীতিক বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। অনেকে একাধিক ধাপ এগিয়ে এমন বলছেন যে, তাপস উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থীও হয়ে যেতে পারেন। যদিও উত্তর কলকাতার জন্য সজল ঘোষের নাম প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। তাপস নিজে কোনও বিষয়েই কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
কলকাতা উত্তরের তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তাপসের ক্ষোভ দীর্ঘ দিনের এবং তা কারও অজানা নয়। সম্প্রতি সুদীপের বিরুদ্ধে কুণালও নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বার বার। সেই আবহে চুপ থাকেননি তাপস। তাঁর অভিযোগ, গত ১২ জানুয়ারি তাঁর বাড়িতে পুর নিয়োগ ‘দুর্নীতি’র তদন্ত করতে যে ইডি অভিযান হয়েছিল, তারও নেপথ্যে রয়েছেন সুদীপ। অনেকে বলছিলেন, সে সব কারণেই তৃণমূলে তাপসের ‘মোহভঙ্গ’ হয়েছে। সোমবার তাপস নিজেও সে কথা জানিয়ে দিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy