প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি শুভেন্দু অধিকারীর। — নিজস্ব চিত্র।
আধার ‘বাতিল নিয়ে ভুয়ো’ খবর তৈরি করে মানুষকে ‘আতঙ্কিত’ করছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি পাঠালেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। চিঠিতে তিনি জানালেন, আধার বাতিল নিয়ে ‘রাজনৈতিক’ উদ্দেশ্যে ‘ভুয়ো’ খবর ছড়াচ্ছেন মমতা, যাতে লোকসভা ভোটের আগে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন সাধারণ মানুষ। তাঁর আশঙ্কা, বিষয়টি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যেতে পারে। এ বিষয়ে তাই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের আর্জিও জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবারই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন শুভেন্দু। তাতে তিনি লিখেছেন, ইউনিক আইডেন্টিটিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (ইউআইডিএআই)-র রাঁচীর আঞ্চলিক দফতর থেকে আধার কার্ড বাতিল নিয়ে চিঠি পান পশ্চিমবঙ্গের কয়েক জন। সেই সংখ্যাটা প্রায় ২৫০। শুভেন্দু জানিয়েছেন, বিষয়টি জানতে পেরে তিনি কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, কোনও ‘প্রযুক্তিগত ত্রুটি’-এর কারণে এ রকম হয়েছে। যাঁদের আধার কার্ড বাতিল হয়েছে, তাঁদের কার্ড চালু করারও আশ্বাস দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সোমবার ইউআইডিএআইয়ের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, আধার ডেটাবেস আপডেট রাখার জন্য সময়ে সময়ে গ্রাহকদের অবগতির জন্য মেসেজ পাঠানো হয়। তবে কোনও কার্ড বাতিল করা হয়নি। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরও এই নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে ‘প্রযুক্তিগত ত্রুটি’র বিষয়টি স্বীকার করেন। বিষয়টি মেটানোর বিষয়েও আশ্বাস দেন।
শুভেন্দুর অভিযোগ, এত কিছুর পরেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি খুঁচিয়ে তুলছেন। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি লিখেছেন, ‘‘এত কিছুর পরেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অকারণে খুঁচিয়ে চলেছেন। কেন্দ্রীয় সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত করার জন্য না জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার আধার কার্ড বাতিল করছে বলে ভুয়ো গল্প বলছেন। তিনি এ-ও দাবি করেছেন, জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) চালু করার জন্যই আধার কার্ড বাতিল করা হচ্ছে। বঙ্গের মানুষদের মনে ভয় ঢোকানোই তাঁর উদ্দেশ্য। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি, ডিটেনশন শিবির চালু করতে দেবেন না।’’
শুভেন্দু চিঠিতে আরও জানিয়েছেন, এই প্রথম নয়, এর আগেও আধার কার্ড নিয়ে ‘আতঙ্ক’ ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। গত বছর এপ্রিলে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, সিএএ, এনআরসি চালু করার জন্যই আধার যাচাই করা হচ্ছে। তিনি এও অভিযোগ করেছেন, লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করতেই এ সব করা হচ্ছে। তার পরেই তিনি চিঠিতে জানিয়েছেন, জাতীয় পরিপত্র রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয় নয়। এখনই ‘ভুয়ো খবর’ নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করা না হলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। তিনি লিখেছেন, ‘‘কেন্দ্রের দায়রায় হস্তক্ষেপের জন্য মমতাকে তীব্র তিরস্কার করা উচিত।’’ সাধারণ মানুষ যাতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে চলে না যায়, সে জন্য প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করারও অনুরোধ জানিয়েছেন শুভেন্দু।
গত বৃহস্পতিবার প্রথম আধার নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া নিয়ে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় হওয়ার অভিযোগ মেলার পরে রবিবার সিউড়ির জনসভায় উপস্থিত মুখ্যসচিব বিপি গোপালিককে এই সংক্রান্ত বিষয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগ জানানোর মঞ্চ হিসেবে একটি পোর্টাল তৈরির নির্দেশ দেন তিনি। সেই পোর্টাল মঙ্গলবার থেকে চালু হবে বলে জানান মমতা।
আধার সমস্যা নিয়ে প্রথম থেকেই অস্বস্তিতে ছিল বিজেপি। সোমবার সকালে দিল্লিতে এ নিয়ে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেখানে ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী। বাংলার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ছাড়াও ছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সেই বৈঠকের পরেই সাংবাদিক বৈঠক করে শান্তনু এই সমস্যার জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন। তবে মমতা বলেন, ‘‘বিজেপি পরিকল্পনা করেই আধার নিষ্ক্রিয় করেছে। গরিব মতুয়াদের ক্ষেত্রে বেশি হয়েছে। আসলে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকরের লক্ষ্যেই এ সব করা হয়েছে। কিন্তু রাজ্যে কোনও ভাবেই তা হতে দেব না।’’
একই সঙ্গে মমতা অভিযোগ করেন, রাজ্য বা জেলা প্রশাসনকে অন্ধকারে রেখেই গোটাটা করা হয়েছে। এ নিয়ে তৃণমূল নির্বাচন কমিশনের কাছে যাবে বলেও জানান মমতা। তার পরেই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন শুভেন্দু। দ্রুত পদক্ষেপেরও আর্জি জানালেন। তাঁর আশঙ্কা, মুখ্যমন্ত্রী ‘ভুয়ো’ প্রচারের কারণে বাংলার মানুষ বিরুদ্ধে যেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy